শেষ মুহূর্তের দরকষাকষি : বিএনপি-জামায়াতে উত্তেজনা

চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার শেষ সময়ে এসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে জোটসঙ্গী বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে। শনিবার দিবাগত রাত সোয়া বারোটা পর্যন্ত শেষ খবর বলছে, আসন বণ্টনকে কেন্দ্র করে অনেকটাই আচমকা দুই বন্ধু শিবিরে ছড়িয়ে পড়ে শেষ মুহূর্তের দরকষাকষি। খবর বাংলা ট্রিবিউনের।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার রাতে জামায়াতকে ২২টি আসনে ধানের শীষ প্রতীকে চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি দেয় বিএনপি। এদিন রাতে দলটির নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা আবদুল হালিমের কাছে চিঠি তুলে দেওয়া হয়। এরপরই শুরু হয় উত্তেজনা। গত ২৭ নভেম্বর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জামায়াতের প্রদত্ত তালিকা থেকে বাছাই ও আলোচনাসাপেক্ষে ২৫ জন প্রার্থীকে ধানের শীষের মনোনয়নের চিঠি দেন। ওই ২৫টি আসনের মধ্যে রবিউল বাশার (সাতক্ষীরা-৩), ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী (সিলেট-৫), হাবিবুর রহমান (সিলেট-৬) বাদ দিয়ে শনিবার চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয় বিএনপি। এ বিষয়টি সহজে মানতে চাইছে না জামায়াত।

দলটির নায়েবে আমির অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার শনিবার দিনগত মধ্যরাতে বলেন, ‘আমরা ২২টি আসনে চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি পেয়েছি। শুরুতে ২৫টি আসনে দেওয়া হয়েছিল। এখন তিনটি কমে গেছে। সেক্ষেত্রে এই তিনটি আসন তো আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণে এখন ৩টি আসন নিয়ে আলোচনা চলছে। আমার জানা মতে, আরও কিছু আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থিতা করার বিষয়েও আলোচনা হচ্ছে।’

জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন নেতা জানান, বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দলের চেয়ারম্যান চাইছেন এই তিনটি আসনে ছাড় দিতে। ইতোমধ্যে শনিবার দিনেই সিলেট-৫ আসনে ২০ দলীয় জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুককে দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে এ আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী জামায়াতের ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, যাকে ইতোমধ্যে ধানের শীষে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। তিনি আগেও নির্বাচিত হয়েছেন। সেক্ষেত্রে এই আসনে ছাড় দিতে চাইছে না জামায়াত।

জামায়াতের যে ২৫ জনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল, তারা হলেন– আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদত হোসাইন (যশোর-২), আবদুল ওয়াদুদ (বাগেরহাট-৩), আবদুল আলীম (বাগেরহাট-৪), মিয়া গোলাম পরওয়ার (খুলনা-৫), আবুল কালাম আযাদ (খুলনা-৬), রবিউল বাশার (সাতক্ষীরা-৩), আবদুল খালেক (সাতক্ষীরা-২), গাজী নজরুল ইসলাম (সাতক্ষীরা-৪), শামীম সাঈদী (পিরোজপুর-১), ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী (সিলেট-৫), হাবিবুর রহমান (সিলেট-৬), শফিকুর রহমান (ঢাকা-১৫), আবদুল হাকিম (ঠাকুরগাঁও-২), মোহাম্মদ হানিফ (দিনাজপুর-১), আনোয়ারুল ইসলাম (দিনাজপুর-৬), মনিরুজ্জামান মন্টু (নীলফামারী-২), আজিজুল ইসলাম (নীলফামারী-৩), গোলাম রব্বানী (রংপুর-৫), মাজেদুর রহমান সরকার (গাইবান্ধা-১), রফিকুল ইসলাম খান (সিরাজগঞ্জ-৪), ইকবাল হুসেইন (পাবনা-৫), মতিউর রহমান (ঝিনাইদহ-৩), সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের (কুমিল্লা-১১), হামিদুর রহমান আজাদ (কক্সবাজার-২), শামসুল ইসলাম ( চট্টগ্রাম-১৫)।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের একজন সদস্যের বরাত দিয়ে বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, জামায়াতকে ২২টি আসনে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হলেও তারা ৩টি আসনসহ ২৫টিতে চান। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে পারে জামায়াত। এছাড়া অন্তত ৪টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রার্থিতা করতে চাইছে জামায়াত। এ বিষয়টিও আলোচনার টেবিলে আছে।

এ বিষয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কোনও কারণ নেই। আসন নিয়ে আলোচনা চলছে। দ্রুতই সমাধান হয়ে যাবে।’

এ রিপোর্ট লেখার সময় শনিবার দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে সর্বশেষ খবর, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের আলোচনা অব্যাহত আছে। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে বিএনপি-জোটের সমন্বয়ক ও বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নজরুল ইসলাম খান ফোন রিসিভ করেননি।

উল্লেখ্য, ১৭ নভেম্বর শনিবার জামায়াতের একটি প্রতিনিধি দল জোটগতভাবে মনোনয়নের প্রত্যাশায় ৫০ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা বিএনপির হাতে তুলে দেয় জামায়াত।