শ্রীলঙ্কাকে বিদায় করে উড়ন্ত শুরু আফগানিস্তানের

এশিয়া কাপের ছয় দলের মধ্যে চারদলকেই বলা হচ্ছিল ফেভারিট। চার দল বলতে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। হংকংয়ের কোনো আশা না থাকলেও আফগানিস্তানকে নিয়ে অবশ্য ভয় সবারই। ক্রিকেটে রশিদ-নবীদের বীরত্বের গল্পগাঁথা তো আর কম নেই। নিজেদের প্রথম ম্যাচেই আসরে দারুণ কিছু করার বার্তাই দিল দলটি। শ্রীলঙ্কাকে ৯১ রানে হারিয়ে নিজেদের এশিয়া কাপ মিশন শুরু করল আফগানরা।

আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২৪৯ রান করে আফগানিস্তান। জবার দিতে নেমে আফগানদের সম্মিলিত বোলিং তোপে ১৫৪ রানেই গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। ৪১.২ ওভার খেলতে পেরেছে দলটি।

এই পরাজয়ে ‘এশিয়া কাপের বি’ গ্রুপ থেকে বিদায়ও নিশ্চিত হলো শ্রীলঙ্কার। আর আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ একম্যাচ হাতে রেখেই উঠে গেল সুপার ফোরে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান মুখোমুখি হবে। এক অর্থে ওই ম্যাচটি এখন শুধুই আনুষ্ঠানিকতার।

ঠিক আগের ম্যাচের মতোই বাজে ব্যাটিং প্রদর্শনী ছিল লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের। আফগানরা ব্যাটিংয়ে দারুণ শুরু করলেও শেষ ১০ ওভারে দারুণ বল করে শ্রীলঙ্কা। যার ফলে আফগানদের স্কোরটা আর আড়াইশ পেরোয়ানি। কিন্তু লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা তাদের কাজটা করতে পারলেন না ঠিকঠাক। অবশ্য কৃতিত্ব তো আফগান বোলারদেরই।

ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই মুজিব-উর-রহমানের উইকেট নেওয়া। ২০তম ওভারে প্রথম আক্রমণে এসেই রশিদ খানের উইকেট তুলে নেওয়া। পরে এই দুজনের আরো ১টি করে উইকেট। গুলবাদিন নাইব তো নিলেন সেট হয়ে যাওয়া উপুল থারাঙ্গার উইকেট। থিসারা পেরেরাকে আউট করে পরে লঙ্কান ইনিংস শেষ করেন তিনিই। সঙ্গে মোহাম্মদ নবীর ২ উইকেট। লঙ্কানরা তাই নিচুসারির দলের মতো আত্মসমর্পন করল আফগানদের কাছে।

মুজিবের প্রথম ওভারেই কুশল মেন্ডিসের বিদায়ের পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় উইকেটে জুটি গড়ে উঠেছিল শ্রীলঙ্কার। দ্বিতীয় উইকেটে থারাঙ্গা ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ৫৪ রান যোগ করেন। কিন্তু ২৩ রান করে ধনঞ্জয়াকে বিদায় নিতে হয় রান আউটের শিকার হয়ে। এরপর থারাঙ্গা ও কুশল পেরেরার ৩২ রানের জুটি। যেটি ভাঙেন রশিদ আক্রমণে এসেই। রশিদের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ১৭ রান করেন কুশল পেরেরা। এরপর থারাঙ্গাকেও ফিরিয়ে দেন গুলবাদিন নাইব। ৬৪ বলে ৩ চারে সর্বোচ্চ ৩৬ রান আগে তার ব্যাট থেকে।

শ্রীলঙ্কা ৮৮ রানে ৪ উইকেট হারানোর পরই মরুর বুকে আফগান উৎসবের বার্তা পাওয়া যায়। শ্রীলঙ্কা আর আফগান বোলারদের সামনে দুর্দান্ত কিছু করতে পারেনি। অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ লড়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ। তার আগে সিহান জয়সুরিয়াও ব্যর্থ। ১৪ রান করে রান আউটে কাটা পড়েন তিনি। পরে শানাকা, আকিলা, মালিঙ্গাদের আশা যাওয়ার মাঝে ঢাল হয়ে ছিলেন থিসারা পেরেরা। ২৮ রান করা এই ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে লঙ্কান ইনিংসের ইতি টানেন গুলবাদিন নাইব।

এরআগে টপ অর্ডারে দারুণ তিনটি জুটিতে আফগানিস্তান পায় ভালো পুঁজি। মোহাম্মদ শাহজাদ ও ইহসানউল্লাহ উদ্বোধনী জুটিতে ৫৭ রান যোগ করেন। দ্বিতীয় উইকেটে রহমত শাহ ও ইহসানউল্লাহ যোগ করেন ৫০ রান। চতুর্থ উইকেটে রহমত শাহ ও হাসমতউল্লাহ মিলে গড়েন ৮০ রানের জুটি।

আর এতেই শেষ ১০ ওভারে শ্রীলঙ্কা উইকেট উৎসব করলেও ২৪৯ রান করতে সমস্যা হয়নি আফগানদের। রহমত শাহ সর্বোচ্চ ৭২ রানের ইনিংস খেলেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৫ রান করেছেন ইহসানউল্লাহ। হাসমতউল্লাহ ৩৭ ও শাহজাদ করেন ৩৪ রান।

পরাজয়ে ম্লান হয়ে গেছে থিসারা পেরেরার দুর্দান্ত বোলিং। ৫ উইকেট নিয়েছেন এই অলরাউন্ডার। তবে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে ম্যাচের নায়ক আফগানিস্তানের রহমত শাহ।

মঙ্গলবার ‘এ’ গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হবে হংকং। নিজেদের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ৮ উইকেটে হেরেছে হংকং। ফলে এদিন তারা হারলেই পাকিস্তান ও ভারত উঠে যাবে সুপার ফোরে। সেক্ষেত্রে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচও হয়ে পড়বে আনুষ্ঠানিকতার।