শ্রেণিকক্ষে হাসতে হাসতে অজ্ঞান ২৫ শিক্ষার্থী

চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় হাসি শরীরের জন্য উপকারী। প্রাণবন্ত হাসি ত্বক ও হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখে, মনকেও রাখে চাঙ্গা। যে কারণে লাফিং ক্লাবের সৃষ্টি হয়েছে। অথচ হাসতে হাসতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলার ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লার একটি বিদ্যালয়ে।

এক বা দুজন নয়, হাসতে হাসতে অজ্ঞান হয়ে পড়েছেন একে একে ২৫ জন শিক্ষার্থী। তাদের দ্রুত স্থানীয় কাবিলা ইস্টার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান শিক্ষকরা।

এমন অবাক করা কাণ্ডটি ঘটেছে গত সোমবার (২২ জুলাই) দুপুরে কুমিল্লা সদর উপজেলার সৈয়দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির মেয়েদের কক্ষে।

জানা গেছে, ওই দিন যথা নিয়মে পাঠদানে ব্যস্ত ছিলেন শিক্ষক। এরই মধ্যে হঠাৎ শিক্ষার্থীদের কেউ একজন অট্টহাসি দিয়ে ওঠেন। তার সঙ্গে হাসিতে যোগ দেয় আরও দু একজন। ক্লাস চলাকালে এমন আচরণে শিক্ষক প্রথমে অবাক ও রাগান্বিত হন। কিন্তু তিনি দেখতে পান, এরই মধ্যে মেয়েদের অনেকেই এই হাসাহাসিতে যোগ দিয়েছেন। এভাবে তাদের কেউ আর হাসি থামিয়ে রাখতে পারছেন না। এর পর হাসতে হাসতে একে একে ২৫ জন ছাত্রী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

অবিশ্বাস্য এ ঘটনা প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নারায়ণ চক্রবর্তী জানান, সোমবার টিফিন পিরিয়ড শেষে পাঠদান শুরু হয়। দুপুর আড়াইটায় অষ্টম শ্রেণির মেয়েদের ক্লাস নিচ্ছিলেন শিক্ষক সুধাংশু ভূষণ দাস। হঠাৎ শ্রেণিকক্ষে দুই-তিন জন শিক্ষার্থী হাসাহাসি শুরু করে। এসময় শিক্ষক সুধাংশু ভূষণ দাস তাদের হাসির কারণ জানতে চান। কিন্তু তারা এতোই হাসছিল যে, শিক্ষকের কথা তাদের কানেই যায়নি। ইতিমধ্যে অন্যরাও হাসি শুরু করে। হাসতে হাসতে একের পর এক অসুস্থ হয়ে পড়ে ২৫ শিক্ষার্থী। পুরো বিদ্যালয়ে এসময় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।

হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক কল্যাণময় দেব জিত জানান, অতিরিক্ত হাসির কারণে প্রচণ্ড মাথা ব্যথায় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল মেয়েরা। এই হাসির রোগ প্রথমে দুই-এক জনের মধ্যে প্রথমে দেখা দিলে বাকিরা আতঙ্কিত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

ঘটনাটি অবিশ্বাস্য বলে মনে হলেও হাসতে হাসতে মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে এমন ১০টি ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দামিওন নামে এক আইস বিক্রেতা স্ত্রীর সঙ্গে কথায় হাসছিলেন। প্রায় দু মিনিট হাসার পর হঠাৎ নিশ্চল হয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

এ ঘটনার ব্যাখ্যায় চিকিৎসকরা বলছেন, হুট করে অতিরিক্ত হাসির কারণে হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বন্ধ হতে পারে মস্তিষ্কের ক্রিয়া। চিকিৎসার পরিভাষায় ক্যাটাপ্ল্যাক্সি নামে একটি শব্দ আছে। যেখানে মানুষ পুরোপুরি সজ্ঞানে থাকেন। কিন্তু হাসতে হাসতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়ে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যায়। কখনও কখনও আর জ্ঞান ফেরে না।

সৈয়দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সোমবারের এ ঘটনায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে।