সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশ যেসব বাধার মুখে পড়েন

বাংলাদেশে গত সাতদিন ধরে ট্রাফিক সপ্তাহ পালনের পর আজ থেকে আরও তিনদিনের জন্য সেটি বাড়ানো হয়েছে।

সম্প্রতি নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যেই ট্রাফিক সপ্তাহের ওই কর্মসূচীটি শুরু করেছিল পুলিশ।

লাইসেন্স না থাকা, রুট পারমিট, ফিটনেসের অভাব, ইত্যাদি অভিযোগে এর মধ্যেই কয়েক হাজার মামলাও করা হয়েছে।

সম্প্রতি সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর খসড়াও অনুমোদন করেছে বাংলাদেশের মন্ত্রীসভা।

কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশে নব্বই শতাংশ মানুষ ট্রাফিক আইন মানেন না। এ কারণে সড়কে আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে ট্রাফিক পুলিশদের কি ধরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়?

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মীর রেজাউল আলম জানান, বাংলাদেশের সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্রাফিক এনফোর্সমেন্টের দায়িত্ব মূলত ট্রাফিক বিভাগের হলেও ট্রাফিক সংক্রান্ত আরও অনেক কাজ যেমন, ট্রাফিক এরভায়রনমেন্ট, ট্রাফিক এডুকেশন এবং ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজ বেশ কয়েকটি সংস্থার অধীনে পরিচালিত হয়।

এ কারণে ট্রাফিক বিভাগ কতোটুকু সফল হবে সেটা অনেকাংশে নির্ভর করে সেই সংস্থাগুলোর সার্বিক কার্যক্রমের ওপর।

মিস্টার আলম বলেন, “ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দিকটা তদারকি করে সিটি কর্পোরেশন, রোডস এন্ড হাইওয়েজসহ আরও কয়েকটি সংস্থা। তাদের কাছে আমাদের কিছু দাবি থাকে। তারা যতো সুন্দরভাবে আমাদের দাবিগুলো মিটিয়ে দেবে আমাদের পক্ষেও ততো সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালন সম্ভব হবে।”

প্রধান চ্যালেঞ্জ:
ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মীর রেজাউল আলম বাংলাদেশের ট্রাফিকের অব্যবস্থাপনার পেছনে মূল কারণ হিসেবে দায়ী করেন এখানে ডিজিটালাইজড ট্রাফিক সিগনাল না থাকাকে।

এছাড়া শহরে ডাম্পিং গ্রাউন্ড না থাকাকেও বড় সমস্যা বলে চিহ্নিত করেছেন তিনি।

মিস্টার আলম বলেন, “আমাদের এখনও ম্যানুয়ালি হাত উঁচিয়ে যানবাহন দাঁড় করিয়ে কাজ করতে হয়। ফিটনেসবিহীন বা রুট পারমিটবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা বা জরিমানা করেও কোন লাভ হচ্ছেনা। কেননা আইনগতভাবে যদি বলা হয় এই বাসগুলোকে চালানো যাবে না। তাহলে সেই বাসগুলোকে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে রাখতে হবে। যেটা কিনা ঢাকার কোথাও নেই। এজন্য গাড়িগুলোকে আটকে রাখা যায়না। এক্ষেত্রে ডাম্পিং গ্রাউন্ড থাকা অনেক জরুরি। ”

তবে ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে বরাবর অভিযোগ ওঠে যে তারা বিভিন্ন গাড়ির ক্ষেত্রে কড়া আইন প্রয়োগ করেন আবার অনেককে ছাড় দিয়ে দেন।

এমন অভিযোগের জবাবে মীর রেজাউল আলম বলেন, ট্রাফিক আইন প্রয়োগ করতে পুলিশকে অনেক প্রতিকূলতার মুখে পড়তে হয়। এর প্রধান কারণ আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে আইন মান্য করার সংস্কৃতি নেই।”

তিনি বলেন, “আমাদের ট্রাফিক পুলিশরা এই রোদ বৃষ্টি ধুলোবালির মধ্যে অনেক কষ্ট করে কাজ করে। তাদের মানসিক অবস্থাটা অনেকেই বুঝতে চান না। তারা কারো গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র দেখতে চাইলে চালকরা তাদের সহযোগিতা না করে, বিভিন্ন ব্যক্তির পরিচয় দেন। ঝগড়াঝাঁটি শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত তারা পুলিশের বিরুদ্ধেই উল্টো অভিযোগ দেন যে তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে।”

ট্রাফিক সপ্তাহের মতো তৎপরতা সারা বছর দেখা যায় না কেন?
এ ব্যাপারে পুলিশ কমিশনার মীর রেজাউল আলম জানান, ঢাকা শহরের যানজটের বাস্তবতার দিকটা বিবেচনায় নিয়ে তারা সকাল ও বিকেলে পিক আওয়ারে এই ট্রাফিক এনফোর্সমেন্ট অভিযান সাময়িক বন্ধ রাখেন। যেন সাধারণ মানুষ সময়মত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে।

এ কারণে অভিযানগুলো মূলত অফ পিক আওয়ারে চালানো হয়। কারণ সে সময় রাস্তায় গাড়ির চাপ কম থাকে।

তবে এই ট্রাফিক ব্যবস্থা যদি উন্নত দেশগুলোর মতো ডিজিটালাইজড হতো তাহলে এতো কষ্ট করতে হতো না বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সমাধান কী?
মিস্টার আলম বলেন, “ট্রাফিক এরফোর্সমেন্টের পুরো কাজ জনে জনে হাত তুলে গাড়ি থামিয়ে করতে হয়। বিষয়টা যদি অটোমেশনে থাকতো, তাহলে এতো সময় দেয়া লাগতো না। কেউ যদি সিগনাল লাইট লঙ্ঘন করতো তাহলে অটোমেটিক গাড়ির নাম্বার প্লেট স্ক্যান করে সব তথ্য ওই ব্যক্তিকে এসএমএসে জানিয়ে দেয়া হতো। এতো মানুষের পেছনে দৌড়াতে হতো না।”

পুরোপুরি অটোমেশনে না যাওয়া পর্যন্ত ট্রাফিক পরিস্থিতির কোন স্থায়ী সমাধান টানা সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।

পুলিশ কমিশনার মীর রেজাউল আলম বলেন, “অন্যান্য দেশে একশ জনের মধ্যে হয়তো দুইজন আইন ভাঙ্গেন। তাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া এতো কঠিন কিছু নয়। কিন্তু বাংলাদেশে বিষয়টা উল্টো। এখানে ৯০ শতাংশ মানুষই আইন মানেনা। তাই হাতে গোনা কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশের পক্ষে এতোগুলো মানুষকে তদারকি করা এক কথায় অসম্ভব। তাই অটোমেশনের বিকল্প নেই। ”

বাংলাদেশ খুব শিগগিরই সেই প্রযুক্তির দিকে যাবে বলে তিনি বিবিসিকে জানান।

-বিবিসি বাংলা