‘সন্তানকে আগুনে ছুড়ে আমাকে ধর্ষণ করে সেনারা’

মিয়ানমারের রাখাইন রাখাইন রাজ্যে গত ২৫ আগস্ট শুরু হওয়া সেনা অভিযানে কেউ হারিয়েছেন বাবা-মা, কেউ ভাই-বোন, আবার কেউ-বা সন্তান-সন্ততি, আত্মীয়স্বজন বা প্রতিবেশী। অনেকে আবার পরিবারে সবাইকে হারিয়ে একেবারে সর্বশান্ত। অভিযান শুরুর পর হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় পাঁচ লাখ ৩৮ হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে একজন রাজুমা। কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরের এক ঝুপড়ি ঘরের ধুলা-মাখা মাটিতে বসে তিনি স্বজন হারানোর ভয়াবহ বর্ণনা দিয়েছেন আলজাজিরার প্রতিবেদকের কাছে।

‘যখন সেনারা আমাকে মারতে শরু করে তখন দেড় বছর বয়সী শিশু-সন্তান সাদিক আমার কোলে’, ভারাক্রান্ত মনে বলেন রাজুমা।

রোহিঙ্গা এই নারী বলেন, ‘সেনাদের মারের চোটে সাদিক আমার কোল থেকে পড়ে যায়। তারপর তারা আমাকে টেনেহিঁচড়ে দেয়ালের কাছে নিয়ে যায়। তখন আমি শুনতে পাই আমার সন্তান কাঁদছে। এর কয়েক মিনিট পর শুনতে পাই, তারা আমার সন্তানকে মারছেও। আমি সাদিককে আবারও জাপ্টে ধরলে, তারা কোল থেকে কেড়ে নিয়ে আমার সন্তানকে আগুনে ছুড়ে মারে। পরে আমাকে তারা সবাই মিলে ধর্ষণ করে।’

রাখাইন রাজ্যের তুলা তুলি গ্রামে সবসময় খেলে বেড়ানো আদরের সন্তান সাদিক আর নেই, এটা বিশ্বাসই করতে পারছেন না রাজুমা। সন্তানহারা এই মা বলেন, ‘তখন আমার মনে হচ্ছিল, আমিই ওই আগুনে পুড়ছিলাম।’

ওই দিন রাজুমার মা, দুই বোন ও একভাইকে হত্যা করে মিয়ানমারের সেনারা। এখন তাঁর পরিবারে শুধু স্বামী মোহাম্মদ রফিক ছাড়া আর কেউ বেঁচে নেই।

এরপর থেকেই রাজুমা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কিন্তু মানসিক চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা পর্যাপ্ত না থাকায় তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান স্বামী রফিক।

রফিক বলেন, ‘মাঝেমাঝে রাজুমা বলে, তার মাথা ঘুরছে। এটা সে সহ্য করতে পারে না, ওই সময় তার অনেক কষ্ট হয়। মাঝেমাঝে সে আমাদের সন্তানকেও দেখতে পায়। তখন রাজুমা চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। এখন সে প্রতিদিন কাঁদে।’

রোহিঙ্গা মা-মেয়ে ধর্ষণ হওয়ার এ রকম আরো অনেক গল্পই শুনেছেন আলজাজিরার এই প্রতিবেদক। অভিযান শুরুর পর থেকে খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থানসহ নানামুখী সংকটের মুখে মানবেতর জীবনযাপন করছে বাংলাদেশে আশ্রিত লাখো রোহিঙ্গা।