সরকারি নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি, কলারোয়ায় ভিন্ন কৌশলে কোচিং বাণিজ্য!!

মোস্তাক আহম্মেদ : সাতক্ষীরার কলারোয়ায় সরকারি নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভিন্ন কৌশলে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকরা কোচিং বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। সকালে ও বিকালে ব্যাচ ভিত্তিক আবার কিছু শিক্ষক বাসায় যেয়ে নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াচ্ছেন এমন অভিযোগ করেছেন উপজেলার একাধিক অবিভাবক। তাদের দাবি কোচিং বন্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে এসব শিক্ষকরাও কৌশল পরিবর্তন করে কোচিং বানিজ্য অব্যাহত রেখেছেন।

খোজ নিয়ে জানা গেছে- সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং পড়ানো বন্ধের কঠোর নির্দেশনা দেয়ার পর কোচিং বানিজ্যরত শিক্ষকরাও কৌশল পরিবর্তন করেছেন। আর নতুন কৌশল হিসেবে তারা উপজেলার বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে নিরাপদে কোচিং বানিজ্যে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এর আগে শিক্ষকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন বিভিন্ন ঘরে প্রকাশ্যে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে শিক্ষার্থীদের কোচিং বা প্রাইভেট পড়াতেন। বর্তমানে সরকারের কঠোরতার কারণে এসব শিক্ষকরা এখন কলারোয়া পৌর সদরসহ উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে এ কৌশল অবলম্বন করে কোচিং ও প্রাইভেট পড়ানোর কাজ চালাচ্ছেন। অপরদিকে সাইনবোর্ড লাগানো ঘরগুলি বন্ধ থাকায় কোচিং বা প্রাইভেট পড়ানো হচ্ছে না এমন দাবি করে সাধরণ মানুষসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের সহজে চোখ ফাঁকি দিতে পারছেন কোচিং বানিজ্যে লিপ্ত থাকা এসব শিক্ষকরা।

উপজেলার একাধিক অবিভাবক ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানান- বর্তমানে কলারোয়া পৌর সদরের ঝিকরা, সরকারি কলেজের পাশে পুরাতান গোডাউন এলাকা, গদখালী, কলারোয়া ভুমি অফিসের পিছনে, হাসপাতাল রোড এলাকা, পুরাতন খাদ্য গুদাম সংলগ্ন, তুলশীডাঙ্গা এলাকার কয়েকটি স্থানসহ আবাসিক ও ঘনবসতি এলাকার মধ্যে বাসা ভাড়া নিয়ে অবাধে নিজ ও অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরকেও ব্যাচ ভিত্তিক কোচিং এ পড়াচ্ছেন এসব শিক্ষকরা।

এছাড়া উপজেলার দেয়াড়া, খোর্দ, সোনাবাড়িয়া, বামনখালী, সরসকাটি, চন্দনপুর, হিজলদীসহ কয়েকটি স্থানে শিক্ষকরা নিয়মিত কোচিং বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।

তবে সোনাবাড়িয়া এলাকায় প্রকাশ্যে কোচিং বানিজ্য চলছে বলে জানান শিক্ষার্থীদের অবিভাবকরা। তারা আরো বলেন- নতুন কৌশলে এসব কোচিং এ প্রতি ব্যাচে ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থীকে পড়ানো হচ্ছে। আর শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে ৬’শ টাকা থেকে ৮’শ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন কোচিং এ পড়ানো শিক্ষকরা।

শিক্ষার্থীদের অবিভাবকরা আরো বলেন- সকাল ৬টা থেকে শুরু করে (স্কুল চলাকালীন সময় ব্যতিত) সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কোচিং কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ের শিক্ষকরা একই পদ্ধতি অবলম্বন করে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। এসব অবিভাবকদের দাবি শিক্ষকদের কোচিং পড়ানোর বিষয়ে সরকারের কঠোর নীতিমালা থাকলেও উপজেলা পর্যায় থেকে সঠিক মনিটরিং না থাকায় ভিন্ন কৌশল পরিবর্তন করে এসব শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়ানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অবিলম্বে আইন অমান্যকারি এসব শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও বিভাগীয় ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ঠ কতৃপক্ষের নিকট দাবি জানান তারা।

এ বিষয়ে উপজেলার দেয়াড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক (ইংরেজি) এমএ কাশেম বলেন- উপজেলায় গুটি কয়েক শিক্ষকের কোচিং বানিজ্যের কারনে সকল শিক্ষকদের সাথে অবিভাবকদের সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। এ কারণে তিনি কোচিংরত শিক্ষকদের সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী মনিটরিং এর আওতায় নিয়ে আসার জন্য সংশ্লিষ্ঠ কতৃপক্ষের নিকট অনুরোধ জানান।

কলারোয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল হামিদ সাংবাদিকদের জানান- শিক্ষকরা এ নতুন কৌশলে কোচিং বা প্রাইভেট পড়াচ্ছেন এটি আমার জানা নেই। তিনি জানান- কোন শিক্ষক সরকারের নীতিমালা লঙ্ঘন করে কোচিং বানিজ্য করলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

তবে এ বিষয়ে দেখার কোন মনিটরিং টিম আছে কিনা, এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন মন্তব্য না করে পরে কথা বলবেন বলে জানান।