সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে দুদক : বিএনপি

খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলা নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানের নেতিবাচক বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি।

দলটির মনে করছে, দুদক চেয়ারম্যানের ওই বক্তব্যের পর বিএনপি নেত্রীর মামলা প্রভাবিত হবে এবং তিনি ন্যায়বিচার নাও পেতে পারেন। দুদক সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে নেমেছে বলেও দাবি বিএনপির।

শনিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় তার পাশে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরাও ছিলেন।

দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে বাধা পাওয়ার অভিযোগ তোলার দু’দিন পর দলটির পক্ষ থেকে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া এলো।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে দুর্নীতি দমন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা, তদন্ত করা এবং দোষী ব্যক্তিকে আইনের কাছে সোপর্দ করা।

‘কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে সম্প্রতি দুদকের চেয়ারম্যান গণমাধ্যমে একটি মন্তব্য করেছেন। যেটি আমাদের কাছে শুধু দুর্ভাগ্যজনক নয় আমরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়েছি। পুরো জাতি হতাশ হয়েছে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে তার এ বক্তব্য সরকারের রাজনৈতিক যে এজেন্ডাগুলো আছে সেগুলো বাস্তবায়ন করার চেষ্টা।’

বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে দুদকের করা জিয়া ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানির পর দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ মামলা পরিচালনায় বাধা পাওয়ার অভিযোগ তোলেন। তবে কোন মামলায়, কারা বাধা দিচ্ছে, তা সরাসরি বলেননি তিনি।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের আইনজীবী ও ডিজি আজকে বলছেন, আমাদের কোনো কোনো মামলায় দেখা যাচ্ছে যে অহেতুক সময় চাওয়া হচ্ছে। পরিবেশ অনেক সময় এমন হয় যে, মামলাটা পরিচালনাই করতে পারছেন না। শাস্তির প্রশ্ন তো পরে। আমরা মামলা শেষ করতে চাই, কিন্তু মামলা শেষ করতে পারছি না।’

দুদুক চেয়ারম্যানের ওই বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘ইতিপূর্বে কোনো দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানকে এ ধরনের কোনো বক্তব্য রাখতে শুনিনি। এমনকি এক-এগারোর সরকারের সময়েও দুদকের দায়িত্বে থাকা চেয়ারম্যান এ ধরনের কোনো মন্তব্য করেননি।’

‘দুদক চেয়ারম্যানের এই বক্তব্য খালেদা জিয়ার মামলার বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার শামিল বলে মনে আমরা করছি।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অতীতে যে দুর্নীতির মামলাগুলো করা হয়েছিল, দুদক সেগুলো সঠিকভাবে চলার জন্য কতটুকু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তা নিয়ে জনগণের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। এমনকি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে মামলা খারিজ হলো, তার বিরুদ্ধে আপিলও তারা করেনি।’

‘তিনি (শেখ হাসিনা) প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বিচারাধীন বিভিন্ন মামলায় তিনি হাজির হননি, সময় নিয়েছেন। আবার মামলা বাতিল হওয়ার পরও দুদক কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি’, দাবি করেন মির্জা ফখরুল।

দুদকের বেশিরভাগ আইনজীবী আওয়ামী লীগের সমর্থক দাবি করেন বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘তারা সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে নিয়োজিত রয়েছে। সে কারণেই দুর্নীতি দমন কমিশনের চাপে খালেদা জিয়ার মামলায় সময় দেওয়া হচ্ছে না।’

‘একই আদালতের দুদকের অন্যান্য চলমান মামলায় একমাস থেকে দেড় মাস সময় দেওয়া হয়, অথচ খালেদা জিয়ার মামলায় দুদকের আবেদনে চাপের কারণে তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে তারিখ দেওয়া হয়।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দুদক আর সরকার এক্ষেত্রে একাকার হয়ে গেছে। অবস্থা দেখে মনে হয়, দুদক ও সরকার খালেদা জিয়া ও বিএনপির নেতাকর্মীদের ভিত্তিহীন মামলার বিষয়ে একই ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এইপরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত দেশের জনগণ।’

এ সময় দুদককে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।

‘জাতির প্রত্যাশা, দুদক নিরপেক্ষ ও স্বাধীন ভূমিকা পালন করবে এবং সরকারের ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করবে না। অন্যথায় দুদকের পক্ষপাত নিয়ে জনগণের কাছে অবশ্যই প্রশ্ন দেখা দেবে। দুদক বিএনপিকে নির্মূল করতে আওয়ামী লীগের যে এজেন্ডা বাস্তাবয়নের লক্ষে এগিয়ে চলেছে, এটা বন্ধ করা উচিত।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার দাবি করেন, খালেদা জিয়া বিদেশ গেছেন, সেটি আদালতকে জানানোর পর শোকজের জবাব দেওয়ার যে সময় দিয়েছেন সেটি পর্যাপ্ত ছিল না।

তিনি বলেন, মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলা হলো। শোকজের জবাব দিয়ে জামিন চাওয়ার জন্য এ সময় খুবই অপ্রতুল বলে মনে করেন জমির উদ্দিন। দীর্ঘদিনের আইনজীবীর ক্যারিয়ারে তিনি এ ধরনের ঘটনা দেখনেনি বলে জানান।

খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন অভিযোগ করেন, বিএনপি নেত্রীর মামলা নিয়ে সরকার ও দুদক চাপ প্রয়োগ করছে। আদালতকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে দুদক তাড়াহুড়ো করছে বলেও এ সময় অভিযোগ করেন বিএনপির এই নেতা।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেত্রীর আইনজীবীদের মধ্যে নিতাই রায় চৌধুরী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট সানাউল্লিাহ মিয়া, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী উপস্থিত ছিলেন।