সরকারের শেষ সময়ে বেড়েছে কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ

অক্টোবরের মাঝামাঝি গঠিত হতে যাচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকার। প্রধানমন্ত্রীসহ সিনিয়র মন্ত্রী ও আওয়ামী লীলের শীর্ষ নেতারা এ বিষয়ে পরিষ্কার বক্তব্য দিয়েছেন। ইতোমধ্যে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়েও শুরু হয়েছে নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে কানাঘুষা।

শেষ সময়ে বেড়েছে মন্ত্রণালয়গুলোর অভ্যন্তরীণ নানা কার্যক্রম। এর মাঝেই বেড়েছে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা রয়েছেন বিদেশ সফরে ব্যস্ত।

বিদেশ সফর বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নেই কোনো কোটা পদ্ধতি। তবে সরকারি কাজের প্রয়োজনে তারা যেকোন সময় বিদেশ সফর করতে পারেন। বছরজুড়ে নিয়মিত এমন সফরে থাকতে দেখা যায় এসব কর্মকর্তাদের।

তবে হঠাৎ করে সরকারের শেষ সময়ে অধিকাংশ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা বিদেশ সফরে কেন? এটা নিয়ে তৈরি হয়েছে কৌতূহল। কাগজে-কলমে সরকারি এসব সফরের বিষয়ে বিভিন্ন কারণ উল্লেখ থাকলেও মন্ত্রণালয়গুলোতে খোঁজ নিয়ে একসঙ্গে কর্মকর্তাদের এমন বিদেশ সফরের বিষয়ে মেলেনি সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ।

এমন কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের অধস্তন কর্মকর্তাদের অভিযোগ, সরকারের শেষ সময়ে কর্মকর্তাদের এমন বিদেশ সফর নিয়মিত কাজে ব্যঘাত ঘটছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতিতে যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাদের উপর আগে থেকে থাকা দায়িত্বের পাশাপাশি নতুন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেকটা হিমশিম খেতে হচ্ছে।

সরেজমিনে তথ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে দেখা যায় মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মালেক আছেন বিদেশ সফরে। তার সঙ্গে আছেন মন্ত্রণালয়ের বেশকিছু কর্মকর্তাও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইন মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে বেশকিছু কর্মকর্তা বিদেশে আছেন। কাগজে-কলমে তাদের বিষয়ে আমরা জানি ওনারা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে বিদেশ সফরে আছেন।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই যুগ্ম-সচিব সাইমা ইউনুস ও মশিউল আলমসহ ঊর্ধ্বতন ছয় কর্মকর্তা স্বল্পকালীন প্রশিক্ষণ নিতে আছেন বিদেশ সফরে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব সোহরাব হোসাইনসহ মন্ত্রণালয়ের বেশকিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও বিদেশে আছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য বগুড়া-২ আসনের সংসদ সদস্য শরিফুল ইসলাম জিন্নাহর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্থায়ী কমিটির সদস্যরা আছেন বিদেশ সফরে।

সরকারের শেষ সময়ে এসে এমন সফর কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারের শেষ সময় নাগাদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত নানা কাজ থাকে। সেগুলো সম্পাদনে এমন সফর বলে জানান তিনি।

এদিকে চট্টগ্রাম থেকে আসা শফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি আসেন শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইনের সঙ্গে দেখা করতে। সচিবকে না পেয়ে তাকে ফেরত যেতে হয়। তিনি বলেন, আমরা দূর থেকে ঢাকায় আসার পর সংশ্লিষ্ট অফিসারকে না পেলে এমন বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। তাছাড়া সচিবের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা সব ধরনের কাজ করেন না। আজ আমাকে বলা হয়েছে- আমার কাজ করতে হলে সচিব দেশে ফেরার পর করতে হবে।

এদিকে সরকারের শেষ সময়ে চাকরির পদোন্নতি, ভালো জায়গায় বদলি ও বিভিন্ন ফাইলের সুপারিশে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের।

এছাড়াও আগামী নির্বাচনের এমপি টিকিট পাওয়ার আশায় বেশকিছু হেভিয়েট মন্ত্রীর দফতরে এসে ধরনা দিচ্ছে বিভিন্ন এলাকার লোকজন। এতে সচিবালয়ে লোকজনের চাপ বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, জনপ্রশাসন, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ বেশকিছু মন্ত্রণালয়ে সুপারিশের চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। বিশেষ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তদবির ও সুপারিশের চাপ কিছুটা বেশি হচ্ছে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা।

এভাবে কর্মকর্তারা দেশের বাইরে থাকায় নিয়মিত কাজের গতি কমেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব ড. মোহাম্মাদ হাবিব পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, সেটাতো কিছুটা হবেই।

তবে তিনি বলেন, আমাদের যেসব অফিসার বিভিন্ন ডিগ্রি নিতে বিদেশে পড়ালেখা করতে যান, তাদের বিপরীতে বিকল্প অফিসার দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে এতো বেশি সমস্যা হয় না। তবে সরকারি কাজে স্বল্পকালীন যেসব সফর করা হয় তাতে তো কিছুটা সমস্যা হয়ই।