সরকারের সমর্থনেই কোটা ফিরিয়ে আনার আন্দোলন?

বাংলাদেশে সরকারি চাকরীতে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরেই আন্দোলনে সরব হয়েছে একদল তরুণ।

তারা নিজেদের মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে দাবি করছে।

সরকারি চাকরীতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের সিদ্ধান্ত মন্ত্রীসভা অনুমোদন করেছে, সেদিন থেকেই এ আন্দোলনের সূচনা।

এরপর থেকে তারা ঢাকার শাহবাগ-সহ বিভিন্ন জায়গায় সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আন্দোলন করছে।

এ আন্দোলন শুরুর আরেকটি প্রেক্ষাপট রয়েছে। যেদিন কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে সেদিন বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “কেউ যদি কোটা চায়, তাহলে এখন কোটা চাই বলে আন্দোলন করতে হবে। সেই আন্দোলন যদি ভালোভাবে করতে পারে, তখন ভেবেচিন্তে দেখা হবে কী করা যায়?”

প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর কোটার পক্ষে কিছু আন্দোলনকারী সরব হয়ে উঠে।

যারা কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলন করেছেন তাদের অনেকেই মনে করেন সরকারের মনোভাব বুঝতে পেরে কোটার পক্ষে আন্দোলন শুরু হয়েছে।

এ আন্দোলনে সরকারের সমর্থন আছে?

অনেকে প্রশ্ন তুলছেন যে গত কয়েকদিন ধরে কোটার পক্ষে আন্দোলনকারীরা ঢাকা সহ বিভিন্ন জায়গায় সড়ক অবরোধ করলেও পুলিশ তাদের প্রতি নমনীয় ভাব দেখিয়েছে।

কিন্তু আন্দোলনকারীরা বলছেন সরকারের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই।

এ আন্দোলন পরিচালনা করা হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড নামের একটি সংগঠনের মাধ্যমে।

সংগঠনটির সভাপতি শেখ আতিকুর বাবু বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমরা এমন কী করেছি যে পুলিশ আমাদের প্রতি কঠোর হবে?”

সরকারের সাথে কোন সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে মি: বাবু বলেন, “আমরা চাচ্ছি সরকারকে চাপের মধ্যে রাখতে। কোটা বাতিলের মাধ্যমে আমাদের লজ্জাস্কর পরিস্থিতি ফেলে দেয়া হয়েছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী লুবনা জাহান কোটা ব্যবস্থা সংস্কার আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন। বর্তমান আন্দোলনকে তিনি ‘হাস্যকর’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

“যারা রাস্তা অবরোধ করছে তারা গুটি কয়েকজন এবং খুবই নগণ্য পরিমাণ। এখানে কোন স্টুডেন্ট নেই। কারা আন্দোলনে আসতেছে?”

লুবনা জাহান বলেন, কোটা সংস্কারের জন্য যখন আন্দোলন চলছিল তখন তাদের রাষ্ট্র বিরোধী এবং সরকার-বিরোধী হিসেবে তকমা দেয়া হয়েছিল।

তিনি অভিযোগ করেন, কোটা সংস্কার জন্য যারা আন্দোলন করেছে তাদের প্রতি পুলিশ কঠোর মনোভাব দেখালেও এখন আন্দোলনকারীদের পুলিশ নিরাপত্তা দিচ্ছে।

“কাদের ভয়ে পুলিশ তাদের প্রটেকশন দিচ্ছে?” প্রশ্ন তোলেন লুবনা জাহান।

তবে এ আন্দোলনে সরকারি মহলের কোন ইন্ধন আছে কিনা সেটি নিয়ে এখনই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না বলে মনে করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সায়মা আলম।

তিনি বলেন, “এটা এ মুহূর্তে বলা খুব কঠিন। আমি মনে করি যে সরকার সবদিক থেকে সমান বিবেচনাতে কাজ করবে। ভেতরে কোন ধরণের ইন্ধন আছে কিনা সেটা এ মুহূর্তে আমি বলতে চাচ্ছি না।”

এই আন্দোলন কতটা যুক্তিসংগত?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নাজনীন ইসলাম বলছেন, বাংলাদেশে সরকারী চাকরীতে কোটা ব্যবস্থা নিয়ে নিরপেক্ষে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ অবশ্যই একটি গৌরবের বিষয়। সেজন্য মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি অন্যভাবে দেয়া যেতে পারে।

অধ্যাপক নাজনীন বলেন, “কেউ-কেউ বলে যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা তুলে দেয়া মানে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী। বিষয়টাকে সেভাবে না দেখাই ভালো। মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা অন্যভাবে সাপোর্ট করতে পারি।”

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সায়মা আলমও একই মতামত দিয়েছেন। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের সূর্য সন্তান। তাদের কথা মাথায় রেখেও স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরে সরকারি চাকরিতে এতো বিশাল সংখ্যায় কোটার প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন তিনি।

“সাধারণ মানুষের বিবেচনায়, মানুষের চাহিদার বিবেচনায়, দেশের বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীর কথা মাথায় রেখে তাদের সমান সুযোগের নিশ্চয়তা আমাদের দেয়া উচিত,” বলেন সায়মা আলম।

তবে তিনি মনে করেন, একটি স্বাধীন দেশে আন্দোলন করা, নিজের মতামত প্রকাশ করা এবং দাবি জানানোর অধিকার সবার আছে, সেটা যত কম সংখ্যকই হোক না কেন।

-বিবিসি বাংলা