সাংবাদিকদের উপর নজরদারি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানতেন না, নেপথ্যে কে?

বিদেশ ভ্রমণকালে সাংবাদিকদের উপর নজরদারি সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের আদেশটি দেখেননি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। এ সংক্রান্ত কোনো নোটিশ মন্ত্রী দেখেননি তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রও নিশ্চিত করেছে। তবে কার নির্দেশে এমন বিতর্কিত একটি আদেশ জারি করা হলো? মাত্র তিনদিনের মাথায় আদেশটি প্রত্যাহার করে নেয়া হলেও এমন আজগুবি আদেশ জারি করার পেছনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রশাসনের পাশপাশি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির নামও উঠে এসেছে।খবর জাগো নিউজের।

গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফর সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এ সংক্রান্ত সার্কুলারটি আমি দেখিনি। আমি এটা দেখব।’ এ সময় পাশে বসে থাকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দিকে তাকিয়ে সার্কুলারটি দেখতেও চান তিনি।

সূত্রে জানা গেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্ট্যান্ডিং কমিটিতে আলোচনা হওয়া সাপেক্ষে বিষয়টি জানলেও এই আদেশটি লেখা কিংবা বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের বিভিন্ন মিশনে পাঠানোর আগে একবারের জন্যও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেখানো হয়নি। তবে বিষয়টি দেখার পর এবং গণমাধ্যকর্মীদের প্রতিক্রিয়ার পরপরই এ আদেশ প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন তিনি। তার এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সাংবাদিকরা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্তটি মন্ত্রীকে না জানিয়ে বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে না জানিয়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের ব্যবস্থা নেয়ায় বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন ওঠেছে। বিষয়টি সরকারের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা কিনা সেটিও খতিয়ে দেখার দাবি ওঠেছে।

বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা ও বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে বিব্রত। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাদের অনেকেই বলেন, আমরা এ ধরনের একটি নোটিশ পেয়ে অবাক হয়েছি। কারণ, এই আদেশ পালন করা খুবই কঠিন কাজ। কখন কোন সাংবাদিক কোন দেশে যাচ্ছেন, সেটা খোঁজ রাখাও সম্ভব না। তাছাড়া দূতাবাসগুলোতে পর্যাপ্ত লোকবলেরও অভাব রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কূটনীতিক বলেন, বিদেশে অবস্থান করা বাংলাদেশিদের সেবা দিতে জনবল চাইলেও বছর পেরিয়ে যায়। সেখানে সাংবাদিকের পিছনে জনবল দেয়া সত্যিই কষ্টকর। এ ছাড়া কোন কোন সাংবাদিক এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত সে বিষয়েও কোনো সঠিক তথ্য নেই।

তবে বিদেশে কর্মরত আরেকজন বাংলাদেশি কূটনীতিক বলেন, বিষয়টি স্ট্যান্ডিং কমিটিতে উঠে। পরে সেখানকার সিদ্ধান্তই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করেছে। তাই এ দায় কোনোভাবেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নয়।

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রশাসনের উচ্চ পর্যায় থেকে কাজটি করানো হলেও বহিঃপ্রচার ও অনুবিভাগের মহাপরিচালক মো. লুৎফর রহমানের স্বাক্ষর দিয়ে এটি বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া তার স্বাক্ষরকৃত নোটিশেই আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এদিকে সূত্র বলছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালে নানা সময় বিতর্কিত হয়েছেন সাবেক মন্ত্রী দীপু মনি। তার বিদেশ সফর নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় সাংবাদিকদের উপর আগে থেকেই ক্ষোভ ছিল। ফলে স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে সংসদ সদস্য মাহজাবিন খালেদের প্রস্তাবে তিনি সাড়া দিয়েছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির ওই দ্বাদশ সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, সংসদ সদস্য মাহজাবিন বলেন, ‘গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে অবস্থিত পাকিস্তান হাইকমিশন কিছুসংখ্যক বাংলাদেশি সাংবাদিককে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানায়। এসব সাংবাদিক বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। গণমাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী কথাবার্তাসহ গণহত্যা বিষয়ে ভুল তথ্য দিচ্ছেন।’

আলোচনা সভা শেষে কমিটির সভাপতি দীপু মনি বলেছেন, ‘সাংবাদিকদের বিদেশে যাওয়ায় কড়াকড়ি করা যায় না। তবে কোনো সাংবাদিক বিদেশে গিয়ে দেশবিরোধী কার্যক্রমে লিপ্ত হন কিনা, সে বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখা বা নজরদারি করা বাঞ্ছনীয়।’

উল্লেখ্য, বাংলাদেশি সাংবাদিকরা বিদেশ সফরে থাকাকালে কোথায় যাচ্ছেন, কী করছেন? তা নজরে রাখতে বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোকে আদেশ পাঠায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের আপত্তির মুখে তিনদিনের মাথায় আদেশটি প্রত্যাহার করা হয়।