সাংবাদিক সুর্বণার মোবাইলের কললিস্টে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

পাবনার নারী সাংবাদিক সুর্বণা আক্তার নদী হত্যা মামলায় তাঁর সাবেক শ্বশুর শিল্পপতি আবুল হোসেন বর্তমানে গোয়েন্দা পুলিশের রিমান্ডে রয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে পাবনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত-১ এর বিচারক মো. রাশেদ হোসাইন এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার আসামি পাবনার শিমলা হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ইড্রাল ফার্মাসিটিউক্যালসের মালিক আবুল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তেমন কোনো তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি গোয়েন্দা পুলিশ। তবে নিহত সাংবাদিক সুবর্ণা নদীর মোবাইল ফোনের কললিস্টে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। নদীর সঙ্গে বিভিন্ন ব্যক্তির আলাপের রেকর্ড পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে। এদের মধ্যে ‘গুরুত্বপুর্ণ’ দুই ব্যক্তির কথোপকথন হত্যা রহস্য উদঘাটনে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে বলে গোয়েন্দা পুলিশ আশা করছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পাবনা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক অরবিন্দ সরকার বলেন, আবুল হোসেন গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে চুপ থাকছেন। পুলিশকে কোনো সহায়তা করছেন না। বরং মাঝে মধ্যে শুধু কান্নাকাটি করছেন।

অরবিন্দ সরকার বলেন, তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় নিহত সাংবাদিক সুবর্ণা নদীর মোবাইল ফোনের কললিস্ট চেক করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। নদীর সঙ্গে গত সাত দিনে সহস্রাধিক ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়েছে। সেই আলাপের রেকর্ড পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এদের মধ্যে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ দুই ব্যক্তির কথোপকথন হত্যা রহস্য উদঘাটনে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে বলে তিনি জানান।

নিহত নদীর বোন চম্পা জানান, পরিচয় ও প্রেমের এক পর্যায়ে ২০১৬ সালের ৬ জুন ঈশ্বরদী পৌর এলাকায় নিকাহ রেজিস্ট্রার শিল্পপতি আবুল হোসেনের একমাত্র ছেলে রাজিবুল ইসলাম রাজিবের সঙ্গে সুবর্ণা আক্তার ওরফে নদীর তিন লাখ টাকা কাবিননামায় বিয়ে হয়। বছর খানেক বিয়ের কথা গোপন থাকার পর ২০১৭ সালের শেষের দিকে জানাজানি হলে পারিবারের চাপে বিশেষ করে শ্বশুর আবুল হোসেনের চাপে রাজিব নদীকে ডিভোর্স দেন। এরপর থেকে নদী বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংস্থায় গিয়ে স্বামীকে ফিরে পেতে নানা চেষ্টা চালান। কিন্তু কোথাও কোনো সাড়া পাননি।

চম্পা জানান, কিছুদিন আগে নদীকে মারার জন্য রাজিবের ভাড়া করা অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা নদীর গলায় চাকু ধরেছিল। পরে দৌড়ে পালিয়ে রেহাই পায়। এর আগেও বেশ কয়েকবার সন্ত্রাসীরা নদীকে হত্যার হুমকি দেয়। হুমকির বিষয়গুলো নিয়ে নদী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে বারবার নালিশ করেছে। এর মধ্যে চলতি বছরের রোজার আগে পবিত্র শবে বরাতের আগের দিন শিল্পপতি আবুল হোসেন তাঁর ছেলে রাজিবকে মামাতো বোন মেঘার সঙ্গে বিয়ে দেন। এরপর নারী নির্যাতন দমন ও যৌতুক আইনে নদী তাঁর স্বামী রাজিবসহ তিনজনের নামে মামলা করেন।

আবুল হোসেনের ছোট মেয়ে শাপলা সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর বাবা সমাজসেবক। রোটারি ক্লাবের সভাপতি ছিলেন। তাদেরকে ছোট করতে এই জঘন্য মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অরবিন্দ সরকার বলেন, রাজিবকে ধরতে শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। খুব শিগগির তাঁকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।

গত ২৮ আগস্ট রাতে পাবনা শহরের রাধানগর মহল্লায় বাসার সামনে অনলাইন দৈনিক জাগ্রত বাংলার সম্পাদক ও প্রকাশক এবং আনন্দ টিভির পাবনা প্রতিনিধি সুবর্ণা আক্তার নদীকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বুত্তরা। ঘটনার পরদিন ২৯ আগস্ট নিহত সাংবাদিকের মা মজির্না বেগম বাদী হয়ে সুবর্ণা নদীর সাবেক শ্বশুর, সাবেক স্বামীসহ তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো সাত-আটজনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ওইদিন দুপুরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে নদীর সাবেক শ্বশুর আবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে।