সাইবার নিরাপত্তার জন্য মেনে চলুন কিছু নিয়ম

সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে যাচ্ছে, ডেবিট কার্ড বা ই ওয়ালেট থেকে টাকা গায়েব হয়ে যাচ্ছে। অনলাইনে চুরি হয়ে যাচ্ছে ব্যক্তিগত নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। এ ধরনের আরও নানা সিকিউরিটি কেন্দ্রিক ঘটনা এখন মহামারি রূপ ধারণ করেছে। তবে সামান্য সচেতনতা আর সহজ কিছু কৌশল অবলম্বন করলে খুব সহজেই হ্যাকিং থেকে বাঁচতে পারেন আপনিও।

১. অনলাইনের সব অ্যাকাউন্ট ব্যবহার শেষে লগ আউট করবেন। এছাড়াও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে শুরু করে ই-মেইল এমনকি ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ সবকিছুতেই টু-স্টেপ ভেরিফিকেশনের অপশন চালু করতে পারেন। এ অপশন চালু থাকলে প্রতিবার অ্যাকাউন্টে লগ-ইন করার সময়ে মোবাইলে মেসেজ আকারে একটি লগিন এপ্রুভাল; কোড আসবে এবং সেই লগিন এপ্রুভাল কোড ইনপুট না দেয়া অবদি আপনি লগ-ইন করতে পারবেন না। এ অপশন চালু থাকার সুবিধাটি হল, হ্যাকার আপনার পাসওয়ার্ড জেনে ফেললেও আপনার মোবাইলে আসা কোডটি ছাড়া সে অ্যাকাউন্টে ঢুকতে পারবে না। আর এভাবেও বেঁচে যেতে পারেন হ্যাকিংয়ের হাত থেকে।

২. আপনার সঙ্গে কোন তারকার চেহারা মিল আছে, অথবা ৫০ বছর পর আপনাকে কেমন দেখাবে এই জাতীয় লিংকে কখনোই ঢুকবেন না।

৩. আপনার ফেসবুক বা ই-মেইল পাসওয়ার্ড চায় এ ধরনের লিংকে কখনই প্রবেশ করবেন না।

৪. অপরিচিত কোনো মেইল বা লিংকে কোনক্রমেই প্রবেশ করা যাবে না।

৫. . কোন অপরিচিত নাম্বার হতে ফোন করে আপনার অনলাইনের কোন তথ্য চায় যেমন-এনআইডি নাম্বার, মেইল একাউন্ট, জন্ম তারিখ, ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার, রকেট নাম্বার, বিকাশ নাম্বার ইত্যাদি। তাহলে সেই ফোন বর্জন করতে হবে। অপরিচিত কাউকেই ব্যক্তিগত কোন তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।

৬. কম্পিউটার, মোবাইল অথবা ই-মেইলের পার্সওয়ার্ড সর্বোচ্চ ৩ মাস ব্যবহার করবেন। এরপর অবশ্যই তা পরির্বতন করবেন।

৭. কোনক্রমেই লোকেশন/অবস্থান জানিয়ে ছবি আপডেট দেওয়া যাবে না। যেমন-আমি সাক্ষী দিতে যাচ্ছি, আমি এখন ট্রেনে,বাসে ইত্যাদি।

৮. আপনার ফেসবুকের টাইমলাইনের সেটিংস যথাযথভাবে ঠিক করুন। আপনার টাইমলাইনে অন্য কেউ যাতে কিছু লিখতে না পারে সেভাবে সেটিং সাজান।

৯. আপনার মোবাইল বা কম্পিউটারে কিংবা মেসেঞ্জারে কোন অপরিচিত নাম্বার হতে কোন মেইল কিংবা ছবি আসলে তা কোনক্রমেই ওপেন করতে যাবেন না।

১০. আপনি লটারিতে টাকা বা গাড়ি জিতেছেন এরকম লোভনীয় কোন মেইল থেকে সতর্ক থাকুন।

১১. কোন অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন করে যদি আপনাকে জানানো হয় যে, ফোন কোম্পানির কাস্টমার কেয়ার সেন্টার থেকে ফোন করা হয়েছে। তাদের সার্ভারের সমস্যার কারনে আপনার মোবাইল ফোনটি কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখতে হবে। এ ধরনের কোন তথ্য শুনে ফোন বন্ধ করতে যাবেন না।

১৩. কোন অপরিচিত নাম্বার হতে মিস কল আসলে তা ব্যাক করা যাবে না; এতে আপনার নাম্বার ক্লোন হতে পারে।

১৪. যেকোন সফট্ওয়ার বা এ্যাপসে প্রবেশের সময় আপনার ব্যক্তিগত তথ্য বা এক্সেস চায়; সেখানে না প্রবেশ করাই শ্রেয়।

১৫. সব একাউন্টে সব সময় শক্তিশালী পার্সওয়ার্ড, যেমন-সংখ্যা, Symbol ও অক্ষরের Mixed/Complexযুক্ত পার্সওয়ার্ড ব্যবহার করুন।

১৬. মোবাইল বা কম্পিউটারে কোনো অন্তরঙ্গ ছবি রাখা যাবে না। এই ধরনের কাজ হতে বিরত থাকুন। কারন যে কোন সময় আপনার মোবাইল ফোনটি হারিয়ে যেতে পারেকিংবা যে কোন সময় আপনার বন্ধু-বান্ধব আপনার কম্পিউটারে ঢুকে আপনার ছবি চুরি করে নিয়ে আপনাকে কিংবা আপনার প্রিয়জনকে ব্ল্যাকমেইল করতে পারে।

১৭. সিকিউরিটি সিস্টেম যত আপডেট হচ্ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে হ্যাকিংয়ের কৌশল। তাই হ্যাকারদের থাবা থেকে বাঁচতে ব্যবহার করতে পারেন ফিঙ্গারপ্রিন্ট সিকিউরিটি। এতে একদিকে যেমন কোনো পাসওয়ার্ডের ঝামেলা নেই, অন্যদিকে খুব সহজেই লগ-ইন করতে পারেন নিজের অ্যাকাউন্টে। প্রায় সব স্মার্টফোনেই এখন এ ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।

১৮. রেস্টুরেন্ট ও পাবলিক প্লেসগুলোতে পাবলিক ওয়াই-ফাই কানেক্ট হওয়া থেকে বিরত থাকুন। ওয়াই-ফাই সেটআপের ক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড দিন। ডিফল্ট পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন না। সিকিউরিটি এনক্রিপশন দেয়ার বেলায় ডব্লিউপিএ-২ নির্বাচন করে দিন। বেশিরভাগ রাউটারে ওয়্যারড ইকুভ্যালেন্ট প্রাইভেসি (ডব্লিউইপি) বা ওয়্যারলেস প্রটেক্টেড অ্যাকসেস (ডব্লিউপিএ) ডিফল্ট আকারে দেয়া থাকে। যে কোনো মূল্যে এ এনক্রিপশন বাদ দিন।

১৯. কেউ একজন কল করল আর আপনাকে বাল্ক এসএমএস পাঠিয়ে বলল ভুলে আপনার ওয়ালেটে টাকা চলে গিয়েছে আপনি অ্যাকাউন্ট না দেখে শুধু এসএমএস দেখেই তার নাম্বারে টাকা ট্রান্সফার করে দিলেন। কিছু সময় পর দেখতে পেলেন আসলে আপনি আপনার নিজের টাকাই তাকে পাঠিয়েছেন। এমন স্পাম কল এলে ফোন কেটে আগে নিজের অ্যাকাউন্ট চেক করুন, নিশ্চিত হোন তারপর ডিসিশন নিন।