সাকিবের ম্যাচসেরা না হওয়া বিস্ময়কর!

সাকিব আল হাসানকে ম্যাচসেরা হতে আর কী কী করতে হতো?

একটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচে প্রতিপক্ষকে ১৪০ রানের নিচে বেঁধে ফেলায় বল হাতে তাঁর অবদান ৪-০-২১-২। বাউন্ডারি দিয়েছেন মাত্র একটি, ২৪ বলের এই স্পেলে ‘ডট’ ১১টি। ম্যাচসেরা হতে এটা যথেষ্ট নয় বুঝি?

তা, না হতেই পারে। কলকাতার বিপক্ষে কালকের ম্যাচে ঠিক একই বোলিং ফিগার তাঁর সানরাইজার্স সতীর্থ বিলি স্ট্যানলেকের (৪-০-২১-২)। ১৫ ‘ডট’ বল অস্ট্রেলিয়ান পেসারকে খানিকটা এগিয়ে দিয়েছে। তবে ব্যাট হাতে পারফরম্যান্সটাও তো দেখতে হবে। স্ট্যানলেকের অবশ্য এ ক্ষেত্রে কিছুই করার নেই। দলের শেষ ব্যাটসম্যান হলে আর কতটুকই বা করা যায়!

স্ট্যানলেক কাল সে সুযোগও পাননি। বলা ভালো চতুর্থ উইকেটে কেন উইলিয়ামসন-সাকিবের জুটি ম্যাচটা অত দূর পর্যন্ত গড়াতে দেয়নি। ১৩৯ রান তাড়া করতে নেমে ২৩ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। এখান থেকে চতুর্থ উইকেটে ৫৯ রানের মূল্যবান জুটি গড়ে দলকে টেনে তোলেন সাকিব-উইলিয়ামসন। হায়দরাবাদের ৫ উইকেটের এই জয়ে সাকিবের অবদান ২১ বলে ২৭। দলের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর।

সানরাইজার্সের ৫ উইকেটের এই জয়ে সাকিবের অবদান দাঁড়াচ্ছে তাহলে বল হাতে ২১ রানে ২ উইকেট। আর ব্যাট হাতে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ২৭ রানের ইনিংস। নিখাদ অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্স। কিন্তু ম্যাচ অ্যাডজুকেটরেরা এত অল্পে (!) সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তাঁদের বিবেচনায় ম্যাচসেরা স্ট্যানলেক!

তিনে ব্যাটিংয়ে নামা নীতিশ রানা ও আন্দ্রে রাসেলের উইকেট নিয়েছেন স্ট্যানলেক। অষ্টম ওভারে নীতিশকে তুলে নেওয়ার পাশাপাশি মাত্র ৩ রান দেন স্ট্যানলেক। বিপজ্জনক রাসেলকে ফিরিয়েছেন দ্রুতই। ১৪তম ওভারে এই ক্যারিবীয়কে তুলে নেওয়ার বিনিময়ে দিয়েছেন ৭ রান। নিঃসন্দেহে ভালো পারফরম্যান্স। কিন্তু গোটা ম্যাচে ব্যাটে-বলে কিংবা ফিল্ডিংয়ে সাকিবের প্রভাবটাই চোখে পড়েছে বেশি।

স্ট্যানলেক নীতিশকে ফেরানোর আগের ওভারটা ছিল সাকিবের প্রথম। মাত্র ৩ রান দিয়ে শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। নিজের দ্বিতীয় ওভারে (কলকাতার ইনিংসে ৯ম ওভার) দিয়েছেন মাত্র ৪ রান। কলকাতার ইনিংসে ১১তম ওভারে এসে সুনীল নারাইনকে তুলে নিয়ে দেখা পান প্রথম উইকেটের। এই ওভারে দিয়েছেন ১১ রান। কিন্তু তাঁর শেষ ওভারটা ছিল এক কথায় অসাধারণ। কলকাতার ইনিংসে সর্বোচ্চ স্কোরার ক্রিস লিনকে ফিরিয়েছেন দুর্দান্ত এক ফিরতি ক্যাচে।

বাঁ দিকে ডাইভ দিয়ে তিনি যে ক্যাচটা নিয়েছেন সেটা কিন্তু দলের প্রতি তাঁর নিবেদনেরও উদাহরণ। কয়ে কমাস আগে বড়রকম চোট পেয়েছিলেন বাঁ হাতের আঙুলে। কিন্তু সামনে দিয়ে ক্যাচ যাচ্ছে আর সাকিবের মতো পেশাদার ক্রিকেটার তা লুফে নিতে আঙুলের তোয়াক্কা করবেন, তা হয় না। তবে কাল বোঝা গেল দলের প্রতি এতটা নিবেদনও যে ম্যাচসেরা হতে যথেষ্ট নয়!

এমনকি, এই ম্যাচে পরিসংখ্যানের সাকিবকেও তোয়াক্কা করেননি ম্যাচ অ্যাডজুকেটরেরা। আইপিএলের ইতিহাসে মাত্র সপ্তম খেলোয়াড় হিসেবে এক ম্যাচে পঁচিশোর্দ্ধ রান, ন্যূনতম ২ উইকেট আর ২টি ক্যাচ নিয়েছেন সাকিব। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিন্তু এই ম্যাচের ‘নায়ক’ বাংলাদেশের অধিনায়ক। অর্থাৎ স্কোরকার্ডে না হোক সাকিব অন্তত সমর্থকদের চোখে ঠিকই ম্যাচসেরা।