সাদ্দামের পরিণতি কিম দেখেছে, কিমকে রোখা যাবে না : পুতিন

কিম জং উনের দেশের পরমাণু অস্ত্র প্রকল্প যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে ‘আন্তর্জাতিক বিপর্যয়’ হয়ে যেতে পারে বলে আজ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আর তাতে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা তৈরি হতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি।

চীনের শিয়ামেনে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, উত্তর কোরিয়া নিয়ে ক্রমশ ‘সামরিক উন্মাদনা’-র দিকে না এগিয়ে কূটনীতির পথে এই সঙ্কটের মোকাবিলা করতে হবে। কিম যে দিন হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটান, সে দিনও অবশ্য এ কথাই শোনা গিয়েছিল রুশ প্রেসিডেন্টের মুখে।

এ দিন হুঁশিয়ারির সঙ্গে তার বক্তব্য, উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন মনে করেন, তার ‘সাম্রাজ্য’ বাঁচাতে গেলে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে হবে। ইরাকে সাদ্দাম হুসেনকে যে ভাবে পশ্চিমী হস্তক্ষেপে পদচ্যুত হতে হয়েছে, সেই ইতিহাস কিম দেখেছেন। তার পরে ইরাক যুদ্ধে বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছে।

এই প্রসঙ্গেই পুতিনের সতর্কতা, কিম কিন্তু ইরাকের মতো পরিণতি চান না। রুশ প্রেসিডেন্টের কথায়, ”গণ-বিধ্বংসী অস্ত্র তৈরির দাবি উড়িয়েও সাদ্দাম বাঁচতে পারেননি। তার পরিবারের লোকদেরও মরতে হয়েছিল। দেশটা শেষ হয়ে গিয়েছিল। এটা সবাই জানে আর উত্তর কোরিয়ার সব নাগরিকও জানে।”

রাষ্ট্রপুঞ্জে মার্কিন দূত নিকি হ্যালি সোমবার বলেছিলেন, ”কিম যুদ্ধটা বাধিয়েই ছাড়বেন!” এ ব্যাপারে পিয়ংইয়ংয়ের পরমাণু প্রকল্পে রাশ টানতে তাদের উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপানোর জন্য তিনি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অনুরোধ জানান। ব্রিকস মঞ্চের আলোচনার শেষ পর্বে পুতিন কিন্তু বলে গেলেন, কিমের দেশের উপরে যে কোনও ধরনের নিষেধাজ্ঞা চাপানো ‘অর্থহীন এবং তাতে কোনও প্রভাবই পড়বে না।’

রুশ প্রেসিডেন্টের সাফ কথা, কিম তার সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে দেশের লোককে না খাইয়ে রাখতেও পিছপা হবেন না! তার মতে, ”ওরা ঘাস খাবে, তবু দেশের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে যা দরকার, সে পথ ছেড়ে নড়বে না।”

পুতিন যখন এই সব মম্তব্য করে কিম জং উনের দেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করছেন, ঠিক তখনই জেনিভায় বসে মঙ্গলবার রাষ্ট্রপুঞ্জে উত্তর কোরিয়ার দূত হান তায়ে সং হুমকি দিলেন, আমেরিকার জন্য তাদের দেশ ‘আরও উপহার’ পাঠাতে প্রস্তুত! জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে সম্মেলন চলছে। এই সম্মেলন শুরু হওয়ার দু’দিন আগেই উত্তর কোরিয়া ছ’নম্বর পরমাণু প্রকল্পের অঙ্গ হিসেবে পরীক্ষামূলক ভাবে হাইড্রোজেন বোমা ফাটিয়েছে।

তা নিয়ে বিস্তর সমালোচনা সত্ত্বেও জাতিসংঘের মঞ্চে কিমের দূত বললেন, ”গর্বের সঙ্গে বলছি, আন্তর্মহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) থেকে হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আমাদের দেশ পরমাণু প্রকল্পে আরও এগিয়ে গিয়েছে। আমাদের এই প্রতিরক্ষা কৌশল আমেরিকার জন্য বিশেষ উপহার ছাড়া আর কিছুই নয়।”

এর পরেই হানের হুমকি, ”যত দিন ওরা (আমেরিকা) আমাদের প্ররোচনা দেওয়া এবং চাপ তৈরির ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাবে, আমাদের দেশের তরফে এমন আরও উপহার পেতে থাকবে।” এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি কিমের দূত।

তবে পুতিনের সুরে তার মুখে শোনা গিয়েছে একই কথা। ”আমার দেশে চাপ বা নিষেধাজ্ঞা কোনও কাজই করবে না। উত্তর কোরিয়া কখনওই আলোচনার টেবিলে বসে তার পরমাণু প্রকল্প থেকে সরে আসবে না।”

এর পাশাপাশিই কিমের দেশের হয়ে হানের সাফাই, সেখানে যা যা অস্ত্র পরীক্ষা চলছে, তার সবই কয়েক দশকের মার্কিন পরমাণু হুমকির মুখে নিজস্ব নিরাপত্তা রক্ষার তাগিদেই হচ্ছে। যদিও এ দিন কিমের পড়শি দেশ দক্ষিণ কোরিয়াকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পাল্টা বার্তায় জানিয়েছেন, প্রয়োজনে তারা আমেরিকার কাছ থেকে অত্যাধুনিক অস্ত্র কিনতে পারে।

এই সব জেনেবুঝেই যেন শিয়ামেনে পুতিন জানিয়ে গেলেন, ”আমরা জানি উত্তর কোরিয়ার হাতে পরমাণু অস্ত্র আছে। হয়তো ওদের আরও অস্ত্র আছে যা খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর।” তাই এই ‘সামরিক উন্মাদনা’ ভাল কিছুর দিকে এগোবে না বলে রুশ প্রেসিডেন্টের সতর্কবার্তা ‘আন্তর্জাতিক বিপর্যয়’ নিয়ে।