সাবমেরিন ক্যাবল-১ বন্ধ থাকবে তিন দিন, ইন্টারনেট সেবায় বিপর্যয়ের আশঙ্কা

দেশের প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল (সি-মি-উই-৪) আগামী ২২ থেকে ২৪ অক্টোবর, ৩ দিন বন্ধ থাকবে। এ সময় বিকল্প ব্যবস্থায় দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল (সি-মি-ইউ-৫) দিয়ে দেশে ব্যান্ডউইথ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার কথা বলছে সরকার। তবে ওই সময় ব্যান্ডউইথ ঘাটতিতে ইন্টারনেট সেবায় বিপর্যয় হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট খাতের সঙ্গে সম্পৃক্তরা।

ওই তিনদিন যে পরিমাণ ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করা হবে, তাতে ঘাটতির পরিমাণ মোট চাহিদার চেয়ে ৫০ জিবিপিএস-এর কম হবে বলে জানিয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএসসিসিএল। আর ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি ওই সময় ব্যান্ডউইথের ঘাটতি থাকবে ২০০ জিবিপিএস-এরও বেশি। ফলে ওই সময় দেশে ভয়াবহ ইন্টারনেট বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখছেন ইন্টারনেট সেবাদাতারা।

প্রসঙ্গত, সি-মি-উই-৪ সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে এখন বাংলাদেশ পাচ্ছে ৩০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ। এরমধ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে ২৫০ জিবিপিএস, যা সরবরাহ করছে বিএসসিসিএল। তবে দেশে মোট ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের পরিমাণ ৪৪০ জিবিপিএস।

এদিকে ৬টি আইটিসি (ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল ক্যাবল) প্রতিষ্ঠান আমদানি করছে ১৫০ জিবিপিএস-এর বেশি ব্যান্ডউইথ।

জানা গেছে, দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের (সি-মি-ইউ-৫) সক্ষমতা ১০০ জিবিপিএস। এতে করে প্রায় ১৫০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ঘাটতিতে পড়বে দেশ। এই প্রয়োজন আইটিসির ব্যান্ডউইথ দিয়েও মেটানো সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন ইন্টারনেট ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে শনিবার অবসরে যাওয়া সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল)–এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সি-মি-ইউ-৫-এ বর্তমানে ১০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ সক্ষমতা রয়েছে। শিগগিরই তা ২০০ জিবিপিএসে শিফট হবে। সিঙ্গাপুর অংশে আমাদের ১০০ রয়েছে, আর ইউরোপের দিকে রয়েছে ১০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ। এটিসহ আইটিসির ব্যান্ডউইথ দিয়েই দেশে ইন্টারনেট সেবা স্বাভাবিক রাখার ব্যবস্থা রাখা হবে।’

মো. মনোয়ার হোসেন আরও বলেন, ‘সাবমেরিন ক্যাবল মেরামত ও সংস্কার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। অনেকদিন হয়ে গেছে মেরামত করা হয় না। এ মাসের ৩ দিন সি-মি-উই-ফোর মেরামতের কাজ চলবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভারতে যে ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ রফতানি করা হয়, তা কক্সবাজার লিংক থেকে পাঠানো হয়। বন্ধের ওই তিন দিন কুয়াকাটা থেকে ব্যান্ডউইথ ঢাকায় এনে তা আবার কক্সবাজার নেওয়া হবে। সেখান থেকে কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে আগরতলা পৌঁছানো হবে।’

এরই মধ্যে দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে চিঠি দিয়ে ওই তিন দিনের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলেছে বিএসসিসিএল। চিঠি প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন ইন্টারনেটে সেবা দাতাদের সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)-এর সভাপতি আমিনুল হাকিমও। তিনি বলেন, ‘ওই সময় দেশে ইন্টারনেট নিয়ে ভালো একটা ভোগান্তি হবে।’ তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল থেকে ১০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ পাওয়ার কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে পাওয়া যায়, যা ২০-৩০ জিবিপিএসের বেশি নয়। তাহলে ২২ থেকে ২৪ অক্টোবর দেশে কিভাবে নিরবছিন্ন ইন্টারনেট সেবা দেওয়া সম্ভব হবে?’

আইটিসিগুলোর কথা উল্লেখ করে আমিনুল হাকিম জানান, ‘৬টি প্রতিষ্ঠান বর্তমানে দেশে ১৪৭-১৫০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ নিয়ে আসে। তিন দিনের জন্য তারা তো বেশি ব্যান্ডউইথ ভারত থেকে আনতে পারবে না। ফলে দেশের ইন্টারনেট ব্যবস্থা বড় ধরনের ঝামেলার মধ্যে পড়তে পারে।’ তিনি বলেন, ‘রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার চালানোর জন্য যখন সি-মি-উই-৪ ফুল শাটডাউন করে ফেলা হবে, তখন মোট চাহিদার তুলনায় এই স্বল্প পরিমাণ ব্যান্ডউইথ দিয়ে সেবা চালিয়ে যাওয়া মুশকিল হবে।’ ওই সময় ইন্টারনেট সেবা খাতে চরম অবস্থা বিরাজ করবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন