সাভারে অচল সড়ক : আশ্বাস দিলেও সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেই

বিধান মুখার্জী, গণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : প্রয়োজনীয় সংস্কার, মেরামত, উন্নয়ন আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সাভারে ঢাকা আরিচা মহাসড়কের বাইশ মাইল থেকে শুরু হয়ে নলাম পর্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক প্রবল বর্ষণ, জলাবদ্ধতা আর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করলেও ভাঙা ইটের টুকরা ফেলা ছাড়া সড়কটি সংস্কারের যথাযথ কোন উদ্যোগ দৃশ্যমান হচ্ছে না। ফলে প্রতিনিয়ত এ সড়কে চলাচলকারী যানবাহন ও পথচারীদের অসহনীয় ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।

পথচারীরা জানান, বাইশ মাইল থেকে শুরু করে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পর্যন্ত সড়কটির কার্পেটিং উঠে গিয়ে সংস্কারের অভাবে ধীরে ধীরে অসংখ্য খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে যেখানে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে পুকুরের আকার ধারণ করে ফলে পথচারীদের পায়ে হেঁটে যাতায়াত করা একদম অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এছাড়াও রাস্তার দুরবস্থার জন্য প্রতিদিনই যাত্রীদের কোন না কোন দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে। গাড়ি আটকে যাবার ভয়ে কোন গাড়িও এরাস্তায় চলাচল করতে চায় না। বিপাকে পরে যাত্রীরা বেশি ভাড়ায় যাতায়াত করছেন। এছাড়াও গাড়ি আটকে গেলে যাতায়াতের কোন বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় যাত্রীদের জামা কাপড় ভিজিয়ে পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতেও দেখা গেছে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

সভারের নলাম এলাকার এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি প্রতিদিনের নিত্যপ্রয়োজনে ব্যবহার করেন প্রায় কয়েক হাজার মানুষ। গণ বিশ্ববিদ্যালয়, গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, পি এইচ এ ভবন,গণস্বাস্থ্য ফারমাসিউটিক্যালস, মির্জা গোলাম হাফিজ কলেজ, আলহাজ্ব জাফর ব্যাপারি উচ্চ বিদ্যালয়, দরিদ্র শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার স্কুল গণ বিদ্যাপীঠসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় দশ হাজার শিক্ষার্থী ও বেশ কয়েকটি শিল্পকারখানার কর্মকর্তা, কর্মচারী, রোগীসহ বিভিন্ন শ্রেনিপেশার মানুষের যাতায়াতের প্রধান সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত এই সড়কের সংস্কারের কোন উদ্যোগ না নেয়ায় জনভোগান্তি এখন অসহনীয় পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। রাস্তাটি সংস্কারের জন্য বারবার পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলেও সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ কোন উদ্যোগ নেই।

এর আগে গতবছর সেপ্টেম্বর মাসে সড়কটি সংস্কার ও ল্যাম্পপোস্টের আওতাভুক্ত করার জন্য গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানালে সড়কটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের আওতাভুক্ত বলে এড়িয়ে যান তারা। এরপর গণ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের দ্বিতীয় কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং ঢাকা ১৯ আসনের সংসদ সদস্য ডাঃ এনামুর রহমান আসার পূর্বে রাস্তাটি নামমাত্র সংস্কার হলেও আবারো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়লে ডিসেম্বর মাসে রাস্তাটি সংস্কার ও ল্যাম্পপোস্ট স্থাপনসহ তিন দফা দাবীতে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করলে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিনুল কাদির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিলেও পরবর্তীতে সমস্যা সমাধানে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় নি।

পরবর্তীতে এবছর জানুয়ারি মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনীতে প্রধান অতিথি হিসেবে সংসদ সদস্য ডাঃ এনামুর রহমান অনুষ্ঠানে এলে শিক্ষার্থীরা আবারো রাস্তার সমস্যা তুলে ধরলে তিনি অতিসত্বর রাস্তার কাজ শুরু হবে বলে মৌখিক আশ্বাস দেন। সর্বশেষ ১৩ জুন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আবারো মানববন্ধন করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে রাস্তাটি ঈদ উপহার হিসেবে পাওয়ার দাবি তোলেন এবং পরবর্তীতে ১৮ জুন আবারো ভাঙা ইট ফেলে নামেমাত্র সংস্কারের কাজ দেখলে শিক্ষার্থীরা অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাঙা ইট নয়, স্থায়ী সমাধান চাই লিখে সমালোচনা করেন।

স্থানীয় মানুষের কাছে জানা যায়, রাস্তাটির দুরবস্থার প্রভাব ঘোড়াপীর মাজার বাজার, নলাম বাজার সহ সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থায় পড়তে শুরু করেছে। এমনকি রোগীবাহী এম্বুলেন্সও আটকে থাকতে দেখা গেছে বলে দাবী করেন তারা। অতিসত্বর এই ভোগান্তি দূর করতে রাস্তাটি পুনঃনিরমানের দাবী ভুক্তভোগীদের।