‘সারা বিশ্বের বাংলাদেশ থেকে শেখার আছে’

অথনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশ বিশ্বকে পথ দেখিয়েছে বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংক প্রধান জিম ইয়ং কিম। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোরিও গুতেরেস নারীর ক্ষমতাসয়ন ও শিক্ষা বিস্তারে বাংলাদেশের অগ্রণী ভূমিকায় মুগ্ধ।

আরেক দাতা সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বাংলাদেশের উন্নয়ন অভাবনীয়।

বাংলাদেশ আত্মনির্ভরশীলতার পথে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি লাভ করেছে বলে মনে করে ইউএসএআইডি।

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে সাত দিনের আনন্দ আয়োজনে পাঠানো ভিডিও বার্তায় সংস্থাগুলোর প্রধানরা বাংলাদেশকে এভাবেই প্রশংসায় ভাসান।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানানোর আয়োজনে এই ভিডিবার্তাগুলো দেখানো হয়।

‘বাংলাদেশের প্রত্যয় প্রশংসাযোগ্য’

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোরিও গুতেরেস বলেন, ‘দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে বাংলাদেশের মানুষ যে প্রত্যয় দেখিয়েছে, সেটা প্রশংসার যোগ্য। নারীর ক্ষমতায়ন এবং শিক্ষা বিস্তারেও বাংলাদেশ ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ একটি মাইলফলক। বাংলাদেশে মধ্যম আয়ের দেশ হতে এবং টেকসই উন্নয়ন অর্জন করতে হলে সঠিক পরিকল্পনা এবং শক্তিশালী নেতৃত্ব, নীতিমালা এবং প্রকল্প গ্রহণ জরুরি। জাতিসংঘ বাংলাদেশের এই যাত্রায় সহায়তা করে যাবে।’

উন্নয়নের প্রথে বাংলাদেশ অনুপ্রেরণা : বিশ্বব্যাংক প্রধান

গত দুই দশকে বাংলাদেশে দুই কোটি মানুষের দারিদ্র্যসীমা থেকে বের হয়ে আসার কথা জানিয়ে বিশ্বব্যাংক চেয়ার‌্যান বাংলাদেশকে পথপ্রদর্শক বলেছেন। তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি অনুপ্রেরণার নাম।’

জিম ইয়ং কিম বলেন, ‘রেকর্ড সময়ের মধ্যে দারিদ্র্যের হার অর্ধেকে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ বিশ্বকে দেখিয়েছে তার উদ্ভাবনী শক্তি, প্রত্যয়, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্ব দিয়ে সব প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করা যায়। এক সময় যেটা অসম্ভব মনে হতো, সেটাকেও সম্ভব করা যায়।’

‘দারিদ্র্যমুক্তি করে উন্নয়নের পথে যাত্রা দেখতে আমি ২০১৬ সালে বাংলাদেশে এসেছিলাম। আমি বাংলাদেশের মানুষের ঐকান্তিক ইচ্ছশক্তি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম।’

‘সারা বিশ্বের বাংলাদেশ থেকে শেখার আছে। নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশ জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটাতে পেরেছে।’

‘আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সরকারের নেতৃত্ব এবং বাংলাদেশের জনগণকে এই অর্জনের জন্য অভিনন্দন জানাতে চাই।’

‘বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের জন্মের পর থেকেই এর অগ্রযাত্রার সাথী। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষে যাত্রার সঙ্গেই আমরা থাকতে চাই।’

‘বাংলাদেশের সাফল্য অভাবনীয়’

অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে সাফল্য দেখিয়েছে, সেটি ভাবনারও অতীত বলে মনে করেন এডিবি চেয়ারম্যান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে ভিডিও বার্তায় তাকিহিতো নাকাও বলেন, ‘গত এক দশকে বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে। গত এক দশকে বাংলাদেশের গত প্রবৃদ্ধি ৬.৩ শতাংশের বেশি। গত বছর যা ছিল প্রায় ৭.৩ শতাংশ।’

গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরের কথা তুলে ধরে প্রথমবারের মতো ব্যাপক উন্নয়ন, পানি ও স্বাস্থ্য নিয়ে নাগরিক সচেতনতা, শিক্ষার্থীদের উচ্চাভিলাস দেখে মুগ্ধ হওয়ার কথা জানান এডিবি প্রধান। বলেন, বাংলাদেশে শিল্প কারখানাগুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ, ব্যবসা বাণিজ্যেও বিকাশ হচ্ছে।

১৯৭৩ সাল থেকেই এডিবি বাংলাদেশের পাশে আছে। জানিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে তার ৪৫ বছরের সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন এডিব প্রধান। দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ করে রেলওয়ে, পানি ও পয়ঃনিষ্কাষণ, স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে এডিবি কাজ করতে চায় বলেও জানান তাকিহিত নাকাও।’

‘আত্মনির্ভরশীলতার পথে ‍গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি’

বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি আত্মনির্ভরশীলতার পথে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন ইউএসএআইডির কর্মকর্তা মার্ক গ্রিন।

ভিডিও বার্তায় গ্রিন বলেন, ‘গত ২৫ বছরে আপনাদের দেশ মাতৃমৃত্যু এবং পাঁচ বছরের নিচের শিশু মৃত্যুর হার ‍দুই তৃতীয়াংশের বেশি এবং গত ১৫ বছরে দারিদ্র্যের হার অর্ধেকে নামিয়ে এনেছেন। এটি একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।’

‘আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের পথে আজ আপনারা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক উদযাপন করছেন। তবে এখনও আপনাদের অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে।’

উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ইউএসএআইডি সব সময় বাংলাদেশের পাশে খাকবে বলেও অঙ্গীকারের কথা বলেন মার্ক গ্রিন।

‘উন্নয়নশীল দেশের যাত্রায় পাশে থাকবে জাইকা’

২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হতে বাংলাদেশ যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, সে লক্ষ্য পূরণে তাতে জাপানের সহযোগী সংস্থা জাইকা পাশে থাকবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান শিনিচি কিতাওকা।

কিতাওকা বলেন, ‘১৯৭৩ সাল থেকেই জাইকা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে তার সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে। গুরুত্বপূর্ণ সব আর্থ সামাজিক খাতেই জাইকা কাজ করছে।’

‘বাংলাদেশে জাইকার ২৩৩টি ঋণ এবং অনুদানের প্রকল্প চলছে, এখানে কাজ করছে ৭০০ জন বিশেষজ্ঞ। এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) এবং মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় জাইকার ভূমিকা অব্যাহত থাকবে।’