সালিশে গৃহবধূকে জুতাপেটা, অপমান সইতে না পেরে বিষপান

ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় সালিশের অপমান সইতে না পেরে এক গৃহবধূ বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্বামীর মিথ্যা অপবাদে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাতেমা বেগম সাজুর নেতৃত্বে সালিশের মধ্যে জনসম্মুখে সাথী বেগম (২০) নামে ওই গৃহবধূকে জুতাপেটা করা হয় বলে অভিযোগ সাথীর পরিবারের।

শনিবার উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের মাওলানা কান্দি গ্রামের হানিফ দালাল বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে গৃহবধূ সাথী ভোলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সাথীর বড় ভাই মনু মিয়া ও মা বিবি ফাতেমা অভিযোগ করেন, গত চার বছর আগে সাথী বেগমের সঙ্গে একই এলাকার রবিউল হকের ছেলে মো. রিয়াজের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামী রিয়াজ সাথীকে কারণে অকারণে সন্দেহ করতেন।

গত ২৪ মার্চ শনিবার রাতে সাথী টয়লেটে গেলে এই সুযোগে রিয়াজের চাচাতো ভাই ফরিদ তাদের ঘরে ঢুকে। সাথী ঘরে ঢুকে ফরিদকে দেখতে পেয়ে চিৎকার দেয়। এ সময় আশেপাশের লোকজন আসলে একই বাড়ির হানিফ দালাল ফরিদকে সাথীর ঘরে ঢোকার কারণে শাসিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। পরে সাথীর স্বামী রিয়াজ নদী থেকে এসে এ ঘটনা শুনতে পেয়ে পরদিন সকালে স্ত্রী সাথীকে নিয়ে থানায় মামলা করতে যান। কিন্তু ওই দিন থানায় মিটিং থাকায় ওসি ফারুক আহমেদ তাদেরকে পরে আসতে বলেন। পরবর্তীতে ঘটনাটি তজুমদ্দিন উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাতেমা বেগম সাজু থানায় ফোন করে মামলা না নেয়ার জন্য বলেন এবং বিষয়টি তিনি মীমাংসা করে দিবেন বলে আশ্বাস দেন।

এরই মধ্যে এ ঘটনা নিয়ে সাথীর স্বামী রিয়াজ কয়েক দফায় তাকে মারধরও করেছেন বলে অভিযোগ করে সাথীর পরিবার।

এ ঘটনার মীমাংসার জন্য শনিবার বিকাল ৪টায় ওই মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে স্থানীয় হানিফ দালালের বাড়িতে সাবেক ইউপি সদস্য সিরাজ মেম্বার ও মাওলানা বাড়ির জসিম উদ্দিনসহ স্থানীয়ভাবে সালিশে বসেন। প্রায় দুই ঘণ্টা সালিশ বৈঠকের পর সাথীকে ২০ঘা জুতাপেটা করার সিদ্ধান্ত হয়।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সালিশে উপস্থিত প্রায় দেড় শতাধিক মানুষের সামনে স্থানীয় নারী ইউপি সদস্য প্রার্থী রেহানা বেগম তাকে ১২ঘা জুতাপেটা করেন।পরে সাথীকে তার স্বামীর ঘরে উঠিয়ে দেয়া হয়।

পরবর্তীতে সন্ধ্যা ৭টার দিকে সাথী বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তাকে দ্রুত উদ্ধার করে প্রথমে তজুমদ্দিন হাসপাতালে নিয়ে আসলে অবস্থা অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতে তাকে ভোলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এ ব্যাপারে সাথীর স্বামী রিয়াজ বলেন, তাকে জুতাপেটা করা হয়নি। সালিশদাররা তাকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে আমার ঘরে উঠিয়ে দিয়ে গেছেন। এরপর হয়তো রাগে সে সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিষপান করে।

এ ব্যাপারে তজুমদ্দিন উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাতেমা বেগম সাজু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সাথীর স্বামী রিয়াজ সালিশের মধ্যে সাথীকে জুতাপেটা না করলে তাকে স্ত্রী হিসেবে রাখবে না বলায় জুতাপেটা করা হয়েছে। এ সময় আমি জুতাপেটা করতে নিষেধ করেছি। এছাড়াও রিয়াজের মা আনোয়ারা বেগম ফরিদকে পরিকল্পিতভাবে সাথীর ঘরে ঢুকিয়েছেন বলে সালিশে ফরিদ স্বীকার করেছেন। তজুমদ্দিন থানার ওসি ফারুক আহমেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সালিশে প্রথমে গৃহবধূকে চড়-থাপ্পড় দেয়ার পর স্বামীর পক্ষের দাবির প্রেক্ষিতে জুতাপেটা করা হয়েছে। তবে সালিশের বিরুদ্ধে কেউ থানায় অভিযোগ করলে গ্রহণ করা হবে।