সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় আবু রায়হান মিকাঈল এক তরুণ কিংবদন্তী

মোস্তফা কামাল মাহদী : আজ থেকে ৮ বছর আগে কথা। তখন আমি সবেমাত্র প্রচার গ্রুপের পত্রিকা ‘আর্থিক খবর’ এবং শিশু কিশোরদের শিক্ষা ও বিনোদনমূলক ম্যাগাজিন ‘মাসিক স্কুল বিচিত্রা’র নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দিয়ে সাপ্তাহিক ‘দেশকন্ঠ’ এবং শিক্ষা, বিনোদন ও সমসাময়িক মূলক ম্যাগাজিন ‘মাসিক শিক্ষা পরিক্রমা’র সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে কাজ শুরু করি।

একদিন বন্ধুবর কবি মঈন মুরসালিনের রাজধানীর মগবাজারস্থ প্রতিভা প্রকাশ তথা কানামাছি অফিসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। তখন মঈন মুরসালিন বললো- আমার কাছে কয়েকজনের কিছু লেখা জমা আছে আপনি ওগুলো আপনার পত্রিকা এবং ম্যাগাজিনে প্রকাশ করতে পারেন; এই বলে কতগুলো লেখা দিলেন। লেখাগুলোর সাথে কয়েকজনের মোবাইল নম্বরও দিলেন। সেখানে সুবর্ণা আরফিনের লেখা একটা গল্প ‘পাভেল’, ইয়াসিন মাহমুদ এর প্রবন্ধ কলাম, আবু রায়হান মিকাঈলের গল্প ‘মায়ের ঋণ’ সহ আরো কয়েকটি লেখা।

আমি যথারীতি লেখাগুলো মাসিক শিক্ষা পরিক্রমা ম্যাগাজিনে ছাপালাম এবং সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে তাদের ঠিকানায় পাঠালাম কিছু ম্যাগাজিন। পাশাপাশি তাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ রাখলাম। তখন ইয়াসিন মাহমুদের সাথে ফোনে কথা হতো। সে তখন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতো। আবু রায়হান মিকাঈলের সাথেও মাঝে মাঝে ফোনে কথা হতো সে তখন তার এলাকার একটি কলেজে পড়াশুনা করতো। এভাবে তাদের দুজনের সাথে মাঝে মাঝে কথা হতো এবং তারা লেখা পাঠাতো।

এদিকে বাংলাদেশ সরকার আমার সম্পাদিত সাপ্তাহিক দেশকন্ঠ পত্রিকার ডিক্লারেশন দেননি। কারণ এর কিছুদিন পূর্বে দেশের কন্ঠ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা ডিক্লারেশন পায়। এতে আমি কয়েক লক্ষ টাকার আর্থিক লোকসানে পড়ি সত্যি কিন্তু মনোবল হারাইনি। তাই নতুন করে সাপ্তাহিক দেশগ্রাম এবং সাপ্তাহিক দিনগুলি এই দুটো পত্রিকার নাম দিয়ে ফের আবেদন করি। সাপ্তাহিক দেশগ্রাম নামটা আমি সিলেক্ট করি আর সাপ্তাহিক দিনগুলি নামটি জাতীয় প্রেসক্লাবের সিনিয়র সদস্য আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় সৈয়দ অলিউর রহমান (অলি সৈয়দ) সিলেক্ট করে দেন। যে কোন একটা নামে ডিক্লারেশন পেলেই হবে এ চিন্তা ছিল প্রথমে কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম সাপ্তাহিক দিনগুলি নামে ডিক্লারেশন পেলে এই নামে পরে দৈনিক করলে হবে দৈনিক দিনগুলি যেটা কোন স্বার্থক কিংবা সঠিক নাম হিসেবে অবিবেচ্য তাই সাপ্তাহিক দেশগ্রাম নামে ডিক্লারেশন পাওয়ার জন্য চেষ্টা করলাম। তখন ডিসি অফিস থেকে বলে যে মনে হয় দেশগ্রাম নামে চট্রগ্রাম থেকে একটা পত্রিকা প্রকাশ হয়। তখন আমি বললাম দেশগ্রাম নয় এটা দেশকথা নামে। এরপর কয়েকমাস পর ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর বুধবারে সাপ্তাহিক দেশগ্রাম এর ডিক্লারেশন পাই। তখন ইয়াছিন মাহমুদ এবং আবু রায়হান মিকাঈল সহ আমার দেশ-বিদেশের সাংবাদিকদের জানাই।

মোস্তফা কামাল মাহদী

পত্রিকায় কাজের জন্য আবু রায়হান মিকাঈল ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারীর ২ তারিখে ঢাকায় আসেন। ১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৪ বুধবার সাপ্তাহিক দেশগ্রাম এর উদ্বোধনী সংখ্যা প্রকাশিত হয় আবু রায়হান মিকাঈল ও ডিজাইনার আরিফ হোসেনের হাত দিয়ে। রায়হান তার কাজ ও দক্ষতার কারনে কম্পিউটারের কাজ থেকে এক মাসে সহ-সম্পাদক এবং এর একমাস পর সিনিয়র সহ-সম্পাদক এবং তিন মাস পরে যুগ্ম-বার্তা সম্পাদকে পদোন্নতি পান সাপ্তাহিক দেশগ্রাম পত্রিকায়। এরপর কয়েকমাস সাপ্তাহিক দেশগ্রাম ছিলেন। তখন স্নেহভাজন কলামিস্ট ইয়াসিন মাহমুদ বলেন ভাইয়া- রায়হান অনেক দক্ষ, অভিজ্ঞতা সম্পন্ন অত্যন্ত সৎ একটা ছেলে যা আপনি পরে বুঝতে পারবেন। ওর নামে সুনাম ছাড়া কোন দুর্ণাম নেই। রায়হান এরপর কয়েক মাস পর সাপ্তাহিক দেশগ্রাম থেকে আওয়ার নিউজ বিডি ডটকমে যোগদান করেন এবং এই অনলাইন পোর্টালেও সে তার দক্ষতা, মেধা, সততা দিয়ে আওয়ার নিউজ বিডি ডটকমকে একটা সুউচ্চে নিয়ে গেছেন।

এ প্রসঙ্গে বর্তমান দশকের অন্যতম প্রধান কবি ও সাংবাদিক আবিদ আজম বলেন, দেশে হাজার হাজার অনলাইন পত্রিকার মধ্যে আমি আওয়ার নিউজ বিডিকে সেরাদের একটা মনে করি শুধুমাত্র আবু রায়হান মিকাঈলের দক্ষতাপূর্ণ কাজের কারণে। ওর কারণে পত্রিকাটা পূর্ণতা পেয়েছে বলে আমি মনে করছি ।আওয়ার নিউজের কাজের পাশাপাশি আবু রায়হান মিকাঈল সাপ্তাহিক দেশগ্রাম পত্রিকায়ও কম বেশী ভূমিকা রাখছেন সব সময়ই।

দেশগ্রাম পত্রিকার নিউজ সংক্রান্ত ব্যাপারে রায়হানের দক্ষতা দেখে প্রশংসা না করে পারলেন না বিশিষ্ট গবেষক, সাংবাদিক ও কবি নাজমুস সায়াদাত। বিশিষ্ট এই সংগঠক বলেন, আবু রায়হান মিকাঈলের সত্যিই প্রতিভা আছে। তার নিউজ সিলেকশন অত্যন্ত নিখুঁত এবং তাৎপর্যপূর্ণ।

বিভিন্ন ছোটখাটো বিষয় নিয়ে আবু রায়হান মিকাঈলের সাথে আমার সম্পর্কের টানপড়েন হলেও ওটা অস্থায়ী; আর এর মূল কারন হচ্ছে ওর সততা। কিছুদিন আগে আমি কয়েকজন সাংবাদিকের সামনে বলেছিলাম সাপ্তাহিক দেশগ্রাম শত শত সাংবাদিকদের মধ্যে দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং পড়াশুনা জানা হাই-কোয়ালিটি সাংবাদিকদের মধ্যে সৈয়দ নাজমুল আহসান, আল হাফিজ, নাজমুস সায়াদাতের পরে কবি আবিদ আজম এবং আবু রায়হান মিকাঈলই। বাকিরা যারা আছেন তারা মোটামুটি মানের এবং কিছু আছেন নিম্মমানের।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক সোসাইটির অন্যতম উপদেষ্টা ও ভাষা আন্দোলন স্মৃতিরক্ষা পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি কবি ও কলামিষ্ট সৈয়দ নাজমুল আহসান বলেছেন, ছোটখাটো বিষয় নিয়ে রেশারেশি নয় বরং কাজের দিকে বেশী মনোযোগীটাকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে আর আবু রায়হান মিকাঈল একজন সৎ, দক্ষ ও নিষ্ঠাবান অভিজ্ঞ সাংবাদিক। সে শুধু আওয়ার নিউজ নয় সে সাপ্তাহিক দেশগ্রাম ও দেশীয় মিডিয়ার গর্ব।

উল্লেখ্য যে, এই তরুণ কিংবদন্তী সাংবাদিক ও সাহিত্যিক আবু রায়হান মিকাঈল সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলাধীন সীমান্তবর্তী এক নির্ভৃতপল্লীর সোনাবাড়ীয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আব্দুল লতিফ গাজী ও রূপভান বিবি দম্পতির একমাত্র সন্তান তিনি। তাঁর লেখালেখির সূচনা হয় সপ্তম শ্রেণীতে অধ্যয়নকালে।

২০০৬ সালের জুন মাসে রাজশাহী থেকে প্রকাশিত বহুল প্রচারিত একটি মাসিক পত্রিকায় “আহবান” শিরোনামে তার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন স্থানীয়, জাতীয় দৈনিক ও ম্যাগাজিনে নিয়মিত তার লেখা প্রকাশ পেতে থাকে।

২০০৮ সালের ২৩ মে তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আত্মপ্রকাশ পায় সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংগঠন ‘মুক্ত লেখনী সাহিত্য পরিষদ’। এরপর থেকে তার সম্পাদনায় “মুক্ত লেখনী” নামক সাহিত্য ম্যাগাজিন নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে।

২০১০ সালে বাংলাদেশ বেতার খুলনা কেন্দ্র থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত “চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ” বিষয়ক একটি অনুষ্ঠানে নিয়মতি অংশগ্রহণ করতেন।

এদিকে নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে তিনি সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি সাংবাদিকতায়ও মনোনীবেশ করেন। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০৮ সালে “ইছামতি” লেখক সম্মাননা ও গাংচিল খুলনা লেখক সম্মননা পান।

পত্রিকা সম্পাদনায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০৯ সালের ১৬ জানুয়ারী “কবি সিকান্দার আবু জাফর পদক” পান। তার সম্পাদনায় ‘মুক্ত লেখনী’ সাহিত্য পত্রিকা ছাড়াও ‘ইত্যাদি, ‘সুপ্রভাত, আলাপন, আমাদের ক্যাম্পাস পত্রিকা প্রকাশিত হয়।

“মা হারানোর বেদনা” নামক একটি গল্পের বই ২০১১ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত হয়। তারপর ২০১৬ সালের জানুয়ারীতে স্থানীয় দৈনিক পত্রদূতের প্রকাশনায় বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ পায়।

এছাড়াও একুশে বইমেলা ২০১৮ সালে সম্পাদিত কাব্য সংকলন “ছন্দে-ছড়ায় বঙ্গবন্ধু” নামক একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।

তবে আমার দৃষ্টিতে আমি বলতে চাই আবু রায়হান মিকাঈল সাহিত্য ও সাংবাদিকতা জগতে এক অনন্য ভূমিকায় অবতীর্ণ একটি নাম। নিজের যোগ্যতা, দক্ষতা,সততা এবং বুদ্ধিমত্তার কারনে আজ সে তার নিজের একটা অবস্থান তৈরী করতে সক্ষম হয়েছেন। আওয়ার নিউজ বিডি ডককমের বার্তা সম্পাদক তরুণ সাহিত্যিক এবং সাংবাদিক আবু রায়হান মিকাঈলের জন্মদিনে তাকে জানাই ফুলেল শুভেচ্ছা, অভিনন্দন এবং অবিরাম ভালোবাসা। শুভ জন্মদিন প্রিয় আবু রায়হান মিকাঈল। মহান আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন তার সকল সৎকর্ম কবুল করে তাকে শতায়ু দীর্ঘ জীবন দান করুন। আমীন।


লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক , সাপ্তাহিক দেশগ্রাম এবং প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান , বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক সোসাইটি