সিটি নির্বাচন : নিরপেক্ষতার পাশাপাশি জয় চায় আওয়ামী লীগ

আসন্ন ৬টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয় ও নিরপেক্ষতা দুটোই চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আগামী বছরের শেষ দিকে জাতীয় নির্বাচন থাকায় এসব সিটি করপোরেশনে মরণ কামড় দিয়ে জিততেই হবে এমন তাড়না বোধ করছে না দলটি। বরং শক্তিশালী প্রার্থী দিয়ে মাঠে সরকারের সাফল্যগুলো তুলে ধরে ভোটের লড়াইয়ে জয়লাভ আর প্রতিপক্ষকে নির্বাচনের মাঠে এনে প্রচারণার সুযোগ দিয়ে নিরপেক্ষ পরিবেশ বজায় রাখার পক্ষে তারা।

এ কারণে ডিসেম্বরের রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর আগামী বছরের শুরুতে অনুষ্ঠেয় গাজীপুর, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট নির্বাচনেও একই চাওয়া ক্ষমতাসীনদের। আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী সূত্রগুলো আসন্ন ৬ সিটির নির্বাচন নিয়ে দলটির এমন অবস্থানের কথা নিশ্চিত করেছেন।

নীতি-নির্ধারণী সূত্রগুলো বলছে, আসন্ন সিটি নির্বাচনগুলোতে জেতা যেমন জরুরি তেমনি নিরপেক্ষতা বজায় রাখাও অপরিহার্য। শুধু জিততে হবে কিন্তু নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা যাবে না সিটিতে এই প্রক্রিয়ায় জয় ছিনিয়ে আনার বিপক্ষে তারা। নীতি-নির্ধারকদের যুক্তি হলো, তাতে সরকারের ভাবমূর্তি হুমকির মুখে পড়বে। এ বছর ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন আর আগামী বছরের শুরুর দিকে অন্য ৫টি সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য অধিকাংশ সিটির নির্বাচনে পুরনো প্রার্থীদের ওপর আস্থা রাখতে শুরু করেছে দলটি।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, রংপুর সিটি নির্বাচনসহ সবগুলো সিটিতেই নির্বাচনে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা ও নির্বাচন কমিশনকে সর্বাÍক সহযোগিতা করবে সরকার। আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীকে জয়যুক্ত করতে কাজ করবে। তিনি বলেন, আমাদের কাছে জেতা এবং নির্বাচনে নিরপেক্ষতা দুটোই জরুরি।

দল সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে দলীয় প্রার্থীর জয়লাভ সম্ভব না হলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। আবার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে না পারলেও সরকার বিশ্বাসযোগ্যতাও হারাবে। ভাবমূর্তি যেমন প্রয়োজন, তেমনি বিশ্বাসযোগ্যতাও প্রয়োজন। আর দুটো জিনিস রক্ষাই জরুরি মনে করায় সিটি নির্বাচনগুলোতে জিততে যেমন চায়, তেমনি নির্বাচনে নিরপেক্ষতাও নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর আওয়ামী লীগ। এজন্য দলের ঐক্য সুদৃঢ় রাখার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

দলটির সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সবগুলো সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা ছিল সরকারের ও আওয়ামী লীগের অন্যতম লক্ষ্য। অতীতে আমরা তাই করেছি, নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করেছি। তিনি বলেন, ক্ষমতায় থেকেও অতীতে অনেক সিটিতে আমরা হেরেছি। সুতরাং দলীয় প্রার্থীর বিজয়ই শুধু সরকার ও আওয়ামী লীগের কাছে মুখ্য নয়।

সূত্রগুলো জানায়, আগামী বছর ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সংসদ নির্বাচনকে মাথায় রেখে সরকার ও দলকে প্রত্যেকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তাই সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে জেতার কোনও বিকল্প নাই- এমন চিন্তা মাথায় আনাই যাবে না বলে মনে করে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।

দলটির নীতি-নির্ধারক পর্যায়ের নেতারা আরও জানান, প্রার্থীকে নিজ যোগ্যতায় জিতে আসতে হবে এমন অবস্থানের কারণে রংপুর সিটি করপোরেশনে সরফ উদ্দীন আহমেদ ঝন্টুকে বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। সেখানে ১৬ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন সংগ্রহ করলেও আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড মনে করে সেখানে নৌকা বিজয়ী হয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে একমাত্র ঝন্টুকে দিয়েই। অন্য যেসব প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছে তাদের মধ্যে ঝন্টুকে নির্বাচনে ‘ফাইট’ করার মতো প্রার্থী হিসাবে ধরে নেয়া হয়েছে।

আগামী বছরের শুরুতে হওয়া গাজীপুর, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচনেও শক্ত প্রার্থী খুঁজছে আওয়ামী লীগ। দলটির দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, রাজশাহী ও সিলেটে দলীয় প্রার্থী বদলের সম্ভাবনা খুবই কম, তবে খুলনা, গাজীপুর ও বরিশালে নতুন মুখ খুঁজছে দলটি। সেক্ষেত্রে রাজশাহীতে খায়রুজ্জামান লিটন, সিলেটে বদরুদ্দীন আহমেদ কামরানকেই সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী হিসেবে ভাবছে আওয়ামী লীগ। আর, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে দলের জয় আনতে পারেন এমন নতুন মুখ হতে পারেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। গত নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু, দলীয় প্রার্থী আজমত উল্লাহর সম্মানে কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুরোধে বসে যান।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে আগামী বছর। ওই সিটিতেও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে মনোনয়ন দেয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। রাজশাহীতে খায়রুজ্জামান লিটন, সিলেটে বদরুদ্দীন আহমেদ কামরান, খুলনায় শেখ জুয়েল, বরিশালে নতুন প্রার্থী খোঁজা হচ্ছে।

প্রার্থীর নিজের যোগ্যতায় জিতে আসতে পারবে এমন বিবেচনায় সিলেট, রাজশাহী ও গাজীপুরে পুরনো প্রার্থীর ওপর আস্থা রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। খুলনা বরিশাল নতুন প্রার্থীর চিন্তা রয়েছে। সেখানে জেতার মতো প্রার্থীর সন্ধান এখনও চলছে। তবে শেষ পর্যন্ত খুলনা ও বরিশালে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের আত্মীয়-স্বজনকে বেছে নেয়া হতে পারে।-প্রতিবেদন সোনালী নিউজের সৌজন্যে প্রকাশিত।