সিলেটে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ ঘিরে চড়াও পুলিশ, আটক ২৫

সিলেটে বুধবারের সমাবেশ ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থান নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।

তাদের দাবি, সমাবেশ পণ্ড করতে মঙ্গলবার দিনভর নগরীর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।

এ সময় সমাবেশ সফলের একটি প্রস্তুতি বৈঠক থেকে সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী ও সিসিকের সাবেক প্যানেল মেয়র রেজাউল হাসান কয়েস লোদীসহ অন্তত ২৫ জনকে আটক করা হয়েছে।

স্থানীয় বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতারা জানান, সমাবেশ সফল করার জন্য রাত ৯টার দিকে নগরীর যতরপুরে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীমের বাসায় বৈঠক চলছিল। সেখানে হঠাৎ করে পুলিশ হানা দিয়ে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় ওই দুই নেতাসহ ১৯ জনকে আটক করে।

এ সময় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনেককে গ্রেফতার এড়াতে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যেতে দেখা যায়।

এছাড়া নগরীর উপ-শহরের রোজভিউ পয়েন্ট থেকে ছাত্রদলের আরো ৬ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।

তবে আটকের বিষয়ে কিছু জানে না বলে দাবি করেছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ।

সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ জানান, জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীমের বাসায় রাতে বৈঠক চলছিল। সেখানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মোহাম্মদ শাহজাহান, বরকত উল্লাহ ভুলু, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, তাহসিনা রুশদী লুনা, এমএ হক, ড. ইনামুল হক চৌধুরী, খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, ‘বৈঠক চলাকালে হঠাৎ পুলিশ বাসা ঘিরে ফেলে। নেতাকর্মীদের অবরুদ্ধ করে রাখে। বৈঠক থেকে বিশেষ কাজে বের হলে গেট থেকে ডা. শাহরিয়ার ও কয়েস লোদীসহ ১৯ জনকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।’

এর আগে উপ-শহরের রোজভিউ হোটেলের সামনে থেকে জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের ৬ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলেও দাবি করেন আলী আহমদ।

সিলেট জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আহাদ খান জামাল বলেন, ‘সমাবেশ পণ্ড করতে পুলিশ প্রশাসন নগরীসহ জেলাজুড়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে বিএনপি-ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ধাওয়া করেছে। বাসাবাড়িতেও তল্লাশি চালিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ডা. শাহরিয়ার, কয়েস লোদীসহ বিএনপি ও ছাত্রদলের ২৫ জনকে পুলিশ আটক করেছে।’

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ সমাবেশের জন্য আমরা বৈঠক করছিলাম। কিন্তু, পুলিশ এসে আমাদের নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে, বিনা কারণে নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে গেছে।’

সমাবেশের প্রচারণার মাইক পুলিশ নিয়ে গেছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

তবে আটকের বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করেছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আবদুল ওয়াহাব।

তিনি বলেন, ‘আটকের বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। আমি ছুটিতে আছি।’

অবশ্য কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ সেলিম মিঞা জানান, নগরীতে পুলিশের নিয়মিত অভিযান চলছে। সেখানে অনেকেই আটক আছেন। এদের মধ্যে বিএনপির কারা, আপাতত বলা সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে, দীর্ঘদিন পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে সিলেটে সমাবেশ করছে বিএনপি। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা গেছে।

একের পর এক মামলায় পলাতক থাকা বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে এসেছেন।

ইতোমধ্যে অধিকাংশ মামলায় নিম্ন আদালত ও উচ্চ আদালত থেকে জামিনে থাকা নেতৃবৃন্দের মধ্যেও ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ প্রত্যাশার ডালা মেলেছে।

বিএনপির নেতাকর্মীরা সমাবেশ থেকে আগামীর দিক-নির্দেশনা প্রত্যাশা করছেন।

ঐক্যফ্রন্টের স্থানীয় নেতারা জানান, বুধবার সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।