সীমান্তের খালে মিয়ানমারের সেতু, বাংলাদেশে বন্যার আশঙ্কা

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু খালসংলগ্ন সীমান্তে স্থায়ী সেতু নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিচ্ছে মিয়ানমার সরকার।

মিয়ানমারের সীমানার ভেতরে হলেও সেতুটি নির্মিত হলে আগামী বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে খালসংলগ্ন কোনারপাড়া, নো-ম্যানস ল্যান্ডের রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ বিশাল এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবার চিঠির মাধ্যমে মিয়ানমারকে এ সংকটের কথা অবহিত করা হলেও নির্মাণকাজ বন্ধ করা হয়নি। বরং আরো বেশি সংখ্যক শ্রমিক নিযুক্ত করে দ্রুতগতিতে নির্মাণকাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সূত্র জানিয়েছে।

কক্সবাজার বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল এস এম বায়েজিদ বলেন, গত সোমবার নো-ম্যানস ল্যান্ডে কেন পাকা পিলার নির্মাণ করা হচ্ছে, তা জানতে চেয়ে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপিকে চিঠি দেয় বিজিবি। কিন্তু আজ পর্যন্ত চিঠির কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

চলতি মাসের ৮ তারিখে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তুমব্রু খালে পিলার নির্মাণের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে মিয়ানমারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি চিঠি দেওয়া হয়।

এদিকে খালের ওপর সেতুর নির্মাণকাজ অব্যাহত রাখায় স্থানীয় বাসিন্দা ও রোহিঙ্গাদের মনে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় এক বাসিন্দার (৪৫) কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমাদের ঘুমধুম তুমব্রুর পাশাপাশি যে ব্রিজটা, মিয়ানমার সরকারের যে ব্রিজটা হচ্ছে, এই ব্রিজটার কারণে জলাবদ্ধতা হবে। জলাবদ্ধতার কারণে আমাদের চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের জনসাধারণ যারা, ভুক্তভোগী এনারাই খুব বেশি কষ্ট পাবেন। বিশেষ করে বলতে গেলে আমাদের চাষাবাদের ভীষণ বিঘ্নতা সৃষ্টি হবে।’

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা (৪৫) বলেন, ‘মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ যে ব্রিজটা করে, এই ব্রিজটার কারণে আমরার এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হইব, সয়সম্পদ নষ্ট হই যাইব এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্প ডুবি যাইব। এবং পার্শ্ববর্তী চাষাবাদের জমি যা আছে, সমস্ত জমিজমা বন্ধ হই যাইব। এলাকার ক্ষয়ক্ষতি হইব এবং ব্রিজের কারণে অত্র এলাকার মানুষ পানিবন্দি হই যাইব।’

নির্মাণাধীন সেতুটির ব্যাপারে এক রোহিঙ্গা শরণার্থীর (৬০) কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে যখন এইখানে তারকাঁটা দিছে, ওইখানে যে ওয়াল-টোয়াল করি দিছে, তা হইলে এখানে যে পানি ওইখানে দিয়ে চলি যাইতে না পারলে এখানে পানি উঠি যায়। এখানে কোনারপাড়া সব ডুবি যায়। তা হইলে ওইখানে যদি আবার যদি ব্রিজ দিলে তাহলে এইখানে এই তুমব্রু কোনারপাড়ায় কোনো লোকজন থাকতে।’

আরেক রোহিঙ্গা শরণার্থী বলেন, ‘ব্রিজ ছাড়াই এখানে পানি ওঠে, এখানে ফ্লাড হয়। যদি কাঁটাতার দেয়, এখানে এইটা ওইটা ছাতা ময়লা বাজবে, আরো পানি বাড়বে। শুধু আমরা ক্ষতি হবো না। এখানে বাংলাদেশও ক্ষতি হবে। আমরা তো ছয় মাস থাকব, নাইলে এক বছর থাকব। কাঁটাতার হইলে বাংলাদেশের জন্য খুব ক্ষতি হবে।’