সীমান্তে সক্রিয় দালাল চক্র, সর্বস্ব হারাচ্ছেন রোহিঙ্গারা

মিয়ানমার সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সুযোগ নিয়ে দালাল চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। রোহিঙ্গাদের সহযোগিতার নামে কৌশলে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে দেশ ছেড়ে আসার সময় নিয়ে আসা শেষ সম্বলটুকুও। এসব ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত তিন দিনে অন্তত ২০ দালালকে আটক করেছেন পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা। আটক ব্যক্তিরা সীমান্তে রোহিঙ্গাদের পারাপারের কাজ করছিল।

অভিযোগ রয়েছে, মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকায় টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের সীমান্ত পারাপারের কাজ করছে একটি দালাল চক্র। এই চক্রে স্থানীয় বাঙালি ও রোহিঙ্গা দুই ধরনের সদস্যই রয়েছে। সীমান্তের ওপারে এবং নো-ম্যানস ল্যান্ডে আটকে থাকা রোহিঙ্গাদের পারাপারে সহায়তা করছে এই দালালরা। যারা নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থান করছেন, তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে কৌশলে রাতের অন্ধকারে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করিয়ে ক্যাম্প পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। একারণে প্রত্যেক রোহিঙ্গার কাছ থেকে এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে । যাদের টাকা পয়সা নেই , তাদের কাছ থেকে টাকার পরিবর্তে মূল্যবান স্বর্ণ ও জিনিসপত্র হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে নাফ নদীর জলসীমানায় এরা বেশি সক্রিয় বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে দালালদের পরিচয় বলতে অপরাগতা প্রকাশ করছেন ওই সূত্রটি।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি/তদন্ত) মোহাম্মদ কায় কিসলু বলেন, ‘সীমান্তে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশে সহযোগিতার অভিযোগে এ পর্যন্ত ২০ দালালকে আটক করা হয়েছে। এরমধ্যে সীমান্তে বিজিবি আটক করে আমাদের কাছে সোপর্দ করেছে ১৫ জনকে। আটক দালালরা প্রত্যেকেই সীমান্তে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের কথা স্বীকার করেছে।’

কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্নেল মন্জুরুল হাসান খান বলেন, ‘সীমান্তে দালাল চক্রের বিষয়টি গত কয়েকদিন ধরে শুনে আসছি। সর্বশেষ বুধবার (৩০ আগস্ট) সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ১৫ জনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের বেশিরভাগ রোহিঙ্গা। মূলত সীমান্তে বসবাসরত কিছু অসাধু ব্যক্তি টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের সীমান্ত পার করে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার জন্য আশ্বস্ত করে। তবে এ ব্যাপারে বিজিবি’র সদস্যরা খুব কড়া নজরদারিতে রয়েছেন।’

সীমান্তে বিজিবি’র কঠোর নজরদারি সত্বেও বন্ধ নেই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) তথ্য অনুযায়ী গত এক সপ্তাহে অবৈধভাবে ১৮ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কথা বলা হলেও এই সংখ্যা আরও বেশি। প্রতিদিন হাজার হাজার রোহিঙ্গা উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

গত সোমবার (২৮ আগস্ট) বালুখালী ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা মো. রফিক, জায়মুন্নেছা, নুরুল ইসলাম ও মৌলভী জুনায়েতসহ অনেকেই বলছেন, মিয়ানমারে অমানবিক নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গারা অর্ধাহারে-অনাহারে বন-জঙ্গলে লুকিয়ে থেকে সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছেন দালালের হাত ধরে। এই রোহিঙ্গারা ওই দিন উখিয়ার হোয়াইক্যং উলুবনিয়া সীমান্ত দিয়ে পার হয়েছেন ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে।

সীমান্তে বসবাসকারী একাধিক স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিয়ানমার সীমান্তজুড়ে প্রায় দেড় শতাধিক দালাল সক্রিয় রয়েছে। এরা নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু, ঘুমধুম, জলপাইতলী, উখিয়ার ধামনখালী, রহমতেরবিল, পালংখালী, আন্জুমানপাড়া, টেকনাফের হোয়াইক্যং, উলুবনিয়া, মৌলভীপাড়া, নয়াপাড়া, হ্নীলা, সাবরাং, শাহপরীরদ্বীসহ বিভিন্ন সীমান্তে তৎপর রয়েছে। দালালরা রোহিঙ্গাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশে নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে প্রতিদিন এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।