‘রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকাংশই হবে প্রতিবন্ধী’

কয়লাভিত্তিক রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়িত হলে সুন্দরবন এলাকার ভবিষ্যৎ প্রতিবন্ধী হবে। কারণ এ প্রকল্প থেকে প্রতি বছর ২২৩ কেজি পারদ নির্গত হবে। এ পারদ পাশের সংবেদনশীল ভূমিতে অবক্ষেপ ও সঞ্চিত হবে।

‘পারদের নিঃসরণ, বায়ুমণ্ডলে সঞ্চয়ন ও প্রতিবেশ দূষণ : সুন্দরবনের জীব ভৌগলিক বলয়ে রামপাল থেকে নির্গত পারদের প্রভাব’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সিরাকাস বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক চার্লস টি ড্রিসকল এ গবেষণা করেছেন।

শনিবার (১৭ জুন) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট যৌথভাবে এর আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে বাপা ও সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, বাপার সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আব্দুল মতিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরুল ইমাম, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ, ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের ডা. নাজমুন নাহার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসাইন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পারদ দূষণ মানুষকে বিকলাঙ্গ করে দেবে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে সুলতানা কামাল বলেন, এটা জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়ঙ্কর দিক। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে যে মানুষের মৃত্যু ঘটছে তাও মানুষের সৃষ্টি। তিনি জানান, পাহাড় কাটার কু-প্রভাব নিয়ে তারা অনেক সুপারিশমালা সরকারকে দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার তা গ্রহণ করেনি। তাই আজ এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, প্রস্তাবিত কয়লাভিত্তিক রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা প্রজ্জ্বলনের কারণে প্রতি বছর ২২৩ কেজি পারদ নির্গত হবে। ফলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির আশেপাশের অঞ্চলে পারদ দূষণের বড় ঝুঁকি বহন করে। এ ঝুঁকি নদীপথ ও বায়ুপথে জলজ ও বনজ পরিবেশ, যেখানে পশুর নদী ও গাঘেঁষা সুন্দরবনকে আক্রান্ত করবে।

তিনি বলেন, এ অঞ্চলের বন্য প্রাণীকূল যারা মাছ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে; যেমন পাখি, সরীসৃপ ও বাঘ। এসব প্রাণীকে পারদ দূষণের ঝুঁকিতে ফেলবে। একই কারণে এখানে বসবাসকারী মানুষ যারা মাছ খেয়ে থাকেন, তাদেরও পারদ দূষণের আওতায় নিয়ে আসবে।

গবেষণায় বলা হয়, বিশ্বের উন্নত দেশে পারদ নির্গতকারী প্রতিষ্ঠানে যত উন্নতমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হোক না কেন, তা প্রতি বছর ২২৩ কেজির অর্ধেক নির্গতই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। অথচ রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে পারদ নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে অতটা উন্নতমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে না। তাই এর প্রভাব মানুষের ওপর প্রকটভাবে পড়বে।

ডা. নাজমুন নাহার বলেন, পারদ দূষণ খুবই মারাত্মক। এটি মানুষকে বিকলাঙ্গ করাসহ জীবনে নানা ধরনের জটিল রোগের আবির্ভাব ঘটায়। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েরা এর দ্বারা আক্রান্ত হয়ে প্রতিবন্ধী শিশু জন্ম দেয়। অর্থাৎ এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকাংশই হবে প্রতিবন্ধী।