‘সুযোগ পেয়েও স্ত্রীকে রেখে দৌড়ে পালাননি রিফাত’

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া রিফাত হত্যাকাণ্ডের ভিডিও দেখে আমাদের অনেকের মনে, ‘রিফাত দৌড়ে পালিয়ে যেত পারত, কোপ খাওয়ার পরও পালাল না কেন? –এমন অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

যখন একের পর এক কোপ রিফাতের ঘাড়ে, পায়ে, পিঠে ও বুকে পড়ছিল, তখন দৌড়ে পালিয়ে যাওয়া সুযোগও ছিল- এরপরও পালাল না কেন? ঘটনার দুইদিন পর শনিবার গণমাধ্যমকে এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন নিহত শাহ নেয়াজ রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি।

মিন্নির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সদ্যবিবাহিত বউকে ছেড়ে চলে যেতে চায়নি রিফাত। এজন্য উপর্যুপরি রামদার কোপ সহ্য করতে না পেরে, দু’পা পিছিয়ে গিয়ে আবার দাঁড়িয়ে পড়ত রিফাত।

তিনি বলেন, রিফাত চাইলে দৌঁড়ে পালিয়ে বাঁচতে পারত। শুধু আমি ওখানে ছিলাম বলে আমার কথা চিন্তা করে দাঁড়িয়ে ছিলো। আমার গায়ে যেন কোপ না পড়ে, আমার যেন ক্ষতি না হয়। আমাকে বাচাঁতে রিফাত পালিয়ে যায়নি।

নির্মম সেই দিনের কথা স্মরণ করে মিন্নি বলেন, ঘটনার দিন সকালে আমাকে বাসা থেকে নিয়ে যায় রিফাত। তারপর আমরা বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলাম। এক পর্যায়ে রিফাত আমাকে খাওয়ানোর জন্য নিয়ে যেতে চায়। আমি খেতে যেতে রাজি হচ্ছিলাম না। ঠিক ওই সময় চারদিক থেকে ৪/৫ জন ছেলে এসে রিফাতের সঙ্গে তর্ক শুরু করে দেয়। তখনও তাদের হাতে কোন অস্ত্র ছিল না। তর্কের এক পর্যায়ে রিফাতকে কিল ঘুষি দিতে থাকে।

পরে নয়ন ও রিফাত ফরাজী রামদা নিয়ে এসে রিফাতকে কোপাতে শুরু করে। তখন রিফাত ওদের বারবার অনুরোধ করছিল, ‘ছেড়ে দে, আর মারিস না’ বলতে বলতে এক পা দু’পা করে পিছিয়ে যাচ্ছিল।

আমি ওদের আটকানোর চেষ্টা করছিলাম আর চিৎকার করে মানুষকে ডাকছিলাম। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি।

মিন্নি বলেন, রিফাত রামদার কোপ সহ্য করতে না পেরে একপা দু’পা করে পিছিয়ে যাচ্ছিল। তখনও তার পালিয়ে বাঁচার সুযোগ ছিল। পালাতে পারলে, সে বেঁচে যেত। সে আমার জন্যই পালাতে চায়নি। ওই জায়গায় আমার যদি কোনো ক্ষতি হয়ে যায়। তখন কি হবে!

উল্লেখ্য, প্রকাশ্য দিবালোকে বরগুনা সরকারি কলেজ গেটে স্ত্রীর সামনে শাহ নেয়াজ রিফাত শরীফ (২৫) নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।

বুধবার (২৬ জুন) নিহত রিফাতের বাবা ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পাঁচ থেকে ছয় জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।