সুরুজের রিটে ‘তথ্য গোপন’, দুই আপিলে একই যুক্তি

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থগিত হয়েছে যে রিট আবেদনে সেটি তথ্য গোপন করে করার অভিযোগ উঠেছে। এই স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে করা রিটে আবেদনে এই বিষয়টির পাশাপশি আরও দুইটি যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে।

১৫ মের ভোটের নয় দিন আগে ৬ মে সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ বি এম আজহারুল ইসলাম ‍সুরুজের রিট আবেদনে তিন মাসের জন্য স্থগিত হয়ে যায় গাজীপুরের ভোট।

সুরুজের আপত্তির কারণ, তার ইউনিয়নের ছয়টি মৌজা গাজীপুর সিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে। আর ২০১৬ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এসব মৌজার ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। এখন তারা ইউনিয়নেরও ভোটার, আবার সিটি করপোরেশনেরও ভোটার। তবে এই বিষয়টি নিয়ে পাঁচ বছরে বহুবার উচ্চ আদালতে এসেছেন সুরুজ।

প্রায় এক মাস আগে গত ১০ এপ্রিল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদকে আইনজীবী নিয়োগ করে রিট আবেদন করেন সুরুজ। কিন্তু সেদিন আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ হয়ে যায়। আর রবিবারের আবেদনে এই বিষয়টি আদালতকে জানানো হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুরুজ বলেন, ‘আমি আইনজীবীদের কাছে কিছু লুকাইনি। তারা কী করেছেন, সে বিষয়ে আমি জানি না।’

হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে সোমবারই আপিল করেছন বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমও আপিলের সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছেন। সোমবার তিনি উচ্চ আদালতে গেলেও আপিল জমা দিতে পারেননি। মঙ্গলবার সকালে সেটি জমা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী।

সোমবারই চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদালতে হাসান সরকারের আপিলের ওপর শুনানি হওয়ার কথা ছিল। তার আইননজীবীরা প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। তবে হাইকোর্টের আদেশের নথি না আসায় শুনানি হয়নি।

মঙ্গলবার হাসানের পাশাপাশি জাহাঙ্গীরের আপিলের শুনানিও এক সঙ্গে হতে পার বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হাসান-জাহাঙ্গীরের একই যুক্তি

হাসানের আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং জাহাঙ্গীরের আইনজীবী শফিকুল ইসলাম দুই জনই জানান, তারা তিনটি করে যুক্তিতে আপিল করেছেন।

হাসান উদ্দীন সরকারের আইনজীবী মাহবুব উদ্দীন খোকন বলেন, ‘তিনটি গ্রাউন্ডে (যুক্তিতে) আপিল আবেদন করা হয়েছে।’

‘প্রথম গ্রাউন্ড হলো যে কোনো নির্বাচন স্থগিত করতে হলে আমাদের সংবিধানের ১২৫(গ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনকে নোটিশ দেয়ার কথা। কিন্তু সেই নোটিশ দেয়া হয়নি, তাদেরকে সুযোগ দেয়া হয়নি।’

‘দ্বিতীয়ত,এইকই বাদী, একই গ্রাউন্ডে, একই প্রার্থনায়, একই আদালতে এর আগেও একটি রিট দায়ের করেছিলেন। সেখানে আদালত কোনো আদেশ দেয়নি। এই বিষয়টি গোপন করে বাদী পুনরায় একটি আদেশে নিয়েছে। এর মাধ্যমে আদালতের সঙ্গে তিনি প্রতারণা করেছেন।’

‘তৃতীয়ত, যিনি আবেদন করেছেন, তিনি নির্বাচনী এলাকার ভোটার না, তিনি গাজীপুরের বাসিন্দাই নন। ঢাকা জেলার বাসিন্দা তিনি।’

জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলমের আইনজীবী শফিকুল ইসলামও একই ধরনের যুক্তি উল্লেখ করে তার আপিল আবেদন প্রস্তুত করার কথা বলেন।

শফিকুল বলেন, ‘যে ব্যক্তির রিটে গাজীপুর সিটির নির্বাচন স্থগিত হয়েছে এই ব্যক্তি ২০১৩ সালে একই বিষয়ে একটি রিট দায়ের করেছিল। ওই রিটে রুল দিয়েছিল। পরে সেই রিট নিষ্পত্তি করে দিয়েছে আদালত। কিন্তু সে একই বিষয় নিয়ে আবার রিট করেছেন। এখানে সে তথ্য গোপন রেখে রিট করে আদেশ নিয়েছেন, যা গ্রহণযোগ্য নয়।’

‘এছাড়া রিটকারী গাজীপুর সিটি করপোরেশনের লোক না। তিনি শিমুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। ২০১৬ সালে যখন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হয় তখন তিনি আদালতে আসেন নাই তার সীমানা জটিলতা নিয়ে। এই বিষয়টিও তিনি গোপন রেখেছেন। এছাড়া যথাযথভাবে তিনি মামলা করেন নাই। তার সমস্যা সীমানা নিয়ে। কিন্তু সে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থগিত করেছেন।’