সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ইসির প্রতি ঐক্যফ্রন্টের হুঁশিয়ারি

৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপের ফলাফল জেনে নির্বাচন কমিশনকে তফসিল ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করার অনুরোধ জানিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সোমবার বিকেলে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে আরো কিছু দাবি তুলে ধরেন নেতারা।

বৈঠক শেষে কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ৮ নভেম্বরই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্তে আছে কমিশন। তিনি আরো জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাজনৈতিক জোটের সংলাপের ওপর নজর রাখছে নির্বাচন কমিশন।

বৈঠকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনকে হুঁশিয়ার করে দেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। বৈঠক শেষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০১৯ সালের জানুয়ারির পরেও এই নির্বাচন কমিশনকে, আমাদেরকে এই দেশে থাকতে হবে। আমরা বলেছি, আপনারা সেইভাবে কাজ করবেন যাতে করে ২০১৯ সালের জানুয়ারির পরও দেশে থাকবেন, সেই কথা যেন মনে থাকে।’

আবদুর রব বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে প্রথম কথাটা আমরা বলেছি যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে ৭ নভেম্বর সকাল ১১টায় সংলাপের পূর্বে এবং সংলাপের ফলাফল না জেনে নির্বাচন কমিশন যেন কোনো তফসিল ঘোষণা না করে। ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত পার্লামেন্টের মেয়াদ আছে। আমার মনে হয় অনেক সময় এখনো আছে। এর পূর্বে প্রত্যেকটা সরকারের আমলে তফসিল বহুবার পরিবর্তিত হয়েছে নির্বাচন কমিশনে। অতএব, এইবারও তফসিল একবারে অত তারিখে ঘোষণা করতে হবে, নাহলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে, নির্বাচন হবে না-এমন কোনো ব্যাপার নেই।

জেএসডি সভাপতি বলেন, তফসিল পেছানোর বিষয়ে নির্বাচন কমিশন আমাদের প্রস্তাব বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপের বিষয়টি বিবেচনায় রাখার কথা বলেছেন।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা বলেন, তফসিল ঘোষণা, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার ও সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে ইসি তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি। সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে সিইসি আমাদের বলেছে, ‘আমরা একবারও বলিনি সেনা মোতায়েন করা হবে না। তার অর্থ হলো নির্বাচনে সেনাবাহিনী থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে। আমরা বলেছি, অতীতের মতো নির্বাচনে সেনাবাহিনী রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে রাখলে হবে না। সেনাবাহিনীকে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচনে মোতায়েন করতে হবে। তবে এ বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

আ স ম আবদুর রব জানান, বৈঠকে আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি বিষয় তাৎক্ষণিক মেনে নিয়েছে ইসি। মেনে নেওয়া বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তা দেওয়া হবে। নির্বাচনের ফল ঘোষণার যে নীতিমালা আছে, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পোলিং কর্মকর্তা যেভাবে সিল মেরে, স্বাক্ষর করে ফল ঘোষণা করে কিন্তু এবার সেটা পোলিং এজেন্ট পর্যন্ত দিতে হবে। ফলাফলে পোলিং এজেন্টদের স্বাক্ষরও থাকতে হবে। কারণ অনেক সময় কারচুপির জন্য পোলিং এজেন্টদের স্বাক্ষর আগে নিয়ে নেওয়া হয়। ফল গণনার আগে এজেন্টদের স্বাক্ষর নেওয়া যাবে না। এসব বিষয়ে কমিশন আমাদের তাৎক্ষণিক আশ্বস্ত করেছে।

নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার দাবি জানিয়ে রব বলেন, ইভিএম ব্যবহার দেশের জনগণ অর্থাৎ ভোটাররা চায় না। আমরা, কোনো রাজনৈতিক দলও চায় না। আমরা বলেছি, ইভিএমে ভোট ম্যানুপুলেশনের সুযোগ আছে। ইভিএম ব্যবহার করা হবে কি না- সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কিছু বলেনি। তবে তারা দাবি করেছে, এতে ম্যানুপুলেশনের সুযোগ নেই।

জেএসডির সভাপতি আ স ম রবের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর আহমেদ ও গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ।

অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। এ সময় অপর চার কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদত হোসেন চৌধুরী এবং কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।