সু চিকে ইমেজ নষ্ট না করার ‘পরামর্শ’ মোদির

বিষয়টি অনুমিতই ছিল। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফরে বেশ জোরেশোরেই উঠবে নির্যাতিত রোহিঙ্গা ইস্যু। কারণ, এক প্রতিবেশী মিয়ানমারকে নিয়ে যে এই দুই প্রতিবেশী (বাংলাদেশ-ভারত) উল্টো ধারায় চলে আসছে! সেটি আঁচ করতে পেরেই সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে সমানে বলে চলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে তারা বাংলাদেশের অবস্থানকে সম্পূর্ণ সমর্থন করে।

ভারতের এনডিটিভি’র খবরে বলা হয়েছে, সুষমা স্বরাজ রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে রোববার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।

সুষমা স্বরাজের ভাষ্যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন নেত্রী অং সাং সু চিকে পরামর্শ দিয়েছেন, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনা বাহিনীর অভিযানের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তিনি (সু চি) যেন সেটির পক্ষে অবস্থান নিয়ে নিজের ভাবমূর্তি নষ্ট না করেন।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার যৌথ পরামর্শ কমিশনের চতুর্থ বৈঠকে অংশ নিতে রোববার দুপুরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ঢাকা আসেন। এরপর তিনি সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে এসব কথা বলেছেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সুষমা স্বরাজকে উদ্ধৃত করে পিটিআই-কে বলেন, ‘তিনি (নরেন্দ্র মোদি) তাকে (সু চি) বলেছেন- বিশ্বে আপনার অত্যন্ত ভালো ভাবমূর্তি রয়েছে, সেটিকে ধ্বংস করবেন না।’

এনডিটিভির খবরেই বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঠিক এটা বলেছেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। কারণ, গতমাসে মিয়ানমার সফরে তিনি যখন সু চির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করে রাখাইনে অভিযানে পক্ষে মত দেন, তখন বাংলাদেশি মিডিয়ার তোপে পড়েন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

ইহসানুল করিম বলেন, ‘সুষমা স্বরাজ রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের পক্ষে তার পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। অবশ্যই মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের ফেরত নিতে হবে এবং কোনোভাবেই সন্ত্রাস দমনের নামে সাধারণ মানুষকে শাস্তি দেওয়া যাবে না।’

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমার সন্ত্রাসীদের শাস্তি দিতে পারবে। কিন্তু, সাধারণ মানুষকে কোনোভাবেই শাস্তি দেওয়া ঠিক হবে না।’

সুষমা স্বরাজ রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের প্রতি সমর্থন জানালেও মিয়ানমারের নির্যাতনে পালিয়ে বিপুলসংখ্যক শরণার্থী যে দেশটির ওপর বোঝা হয়ে আছে, সে বিষয়ে ভারতের অবস্থান ব্যাখ্যা করেননি।

গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করলে প্রাণ বাঁচাতে ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটা (রোহিঙ্গা শরণার্থী) বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় বোঝা এবং তারা কত দিন এটি বহন করবে?’

মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের তাদের নাগরিক বলে স্বীকৃতি দেয় না। দেশটির দাবি, এসব লোকেরা বাঙালি এবং বাংলাদেশ থেকে রাখাইনে এসে অবৈধভাবে বসতি গড়েছে।

নতুন করে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা আসা শুরু করলে বাংলাদেশ তাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারকে চাপ দিতে ভারতের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে।

সুষমার সঙ্গে বৈঠকে শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার পর শেখ রেহেনাসহ তাদের দুই বোনের প্রতি ভারতের অবদানের কথা স্মরণ করেন।