সু চির দফতরের মন্ত্রীসহ প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসছে রোববার

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির দফতরের মন্ত্রী খিও টিন্ট সোয়ের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল রোববার ঢাকায় আসছে। প্রতিনিধি দলটি কাল ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসবে।

অপরদিকে, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক ৩ অক্টোবর চার দিনের সফরে ভারত যাচ্ছেন। ভারতের অর্থনৈতিক সম্মেলনে যোগদানের লক্ষ্যে পররাষ্ট্র সচিবের এবারের ভারত সফর। তবে এ সফরের সুযোগে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ভারতের কর্মকর্তা ও নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন তিনি। সংকট নিরসনে ভারতকে পাশে পেতে চায় বাংলাদেশ।

এ ছাড়া আগামী ৩ অক্টোবর ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এবং ২৩ অক্টোবর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশ সফরে আসছেন। এসব সফরে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনা হতে পারে।

ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন, খিও টিন্ট সোয়ে মিয়ানমারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। তার কাছে মিয়ানমার সরকারের কোনো প্রস্তাব আছে কিনা তা জানার চেষ্টা করবে বাংলাদেশ।

সম্প্রতি নিউইয়র্কে মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দ্রুত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরুর অনুরোধ জানানো হয়। তখন মিয়ানমারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা বিষয়টি নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যে সু চির দফতরের মন্ত্রী খিও টিন্ট সোয়েকে আমন্ত্রণ জানাতে বলেন।

উপদেষ্টা মনে করেন, রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ম্যান্ডেট সোয়ের আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে মিয়ানমারের মন্ত্রী বাংলাদেশ সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরতে কিছুটা দেরি হতে পারে বলায় এখন রোববার রাতেই ঢাকায় আসছেন খিও টিন্ট সোয়ে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া পাঁচ দফার আলোকে আলোচনা করা হবে। তার মধ্যে রাখাইনে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো এবং তাদের নাগরিকত্বের ইস্যু প্রাধান্য পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে, ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি আগামী ৩ অক্টোবর তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন। সফরকালে তিনি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ-ভারত ফাউন্ডেশনের একটি সেমিনারে বক্তব্য দেবেন তিনি। ভারতের অর্থায়ন করা প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন।

ঢাকায় সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিভিন্ন সময়ে বিদেশ সফরে অরুণ জেটলির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। এসব সাক্ষাতে জেটলিকে বাংলাদেশ সফরে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তারপর আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পাঠালে তিনি তা গ্রহণ করেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে দু’মাস আগেই অরুণ জেটলি বাংলাদেশ সফরে আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। তারপর ব্যস্ততার কারণে ওই সময় সফরটি স্থগিত হয়। এবার জেটলির সফরকালে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশ ব্যস্ত। ফলে জেটলির সফরকালেও রোহিঙ্গা সংকটের বিষয় আলোচনা হতে পারে।

ভারত থেকে এ মাসেই বাংলাদেশে উচ্চপর্যায়ের সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ আগামী ২৩ অক্টোবর দু’দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন। সুষমা স্বরাজ সম্প্রতি নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বৈঠকে যোগ দিতে তারা দু’জন একই ফ্লাইটে আটলান্টিক পাড়ি দিয়েছেন। এ সময় তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে বিস্তর। তবে এবারের আনুষ্ঠানিক সফরকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন।

এসব আলোচনায় অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও আলোচনা হতে পারে। রোহিঙ্গা সংকটের শুরুর দিকে ভারত মিয়ানমারের পক্ষে ছিল। পরবর্তী সময়ে ঢাকা-দিলি­র মধ্যে কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে ভারতকে তার অবস্থান থেকে খানিকটা নমনীয় করা গেছে।