সেই দস্যুদের জন্য র‌্যাবের ঈদ উপহার

ওরা বাঘের চেয়েও ভয়ঙ্কর। ওরা নিষ্ঠুর। ওর নির্দয় । এই কঠিন শব্দগুলি যাদের উদ্দেশ্যে বলা হত তারা সুন্দরবনের দস্যু। গত ৮ মাসে সুন্দরবনের দুর্ধর্ষ ৯টি বাহিনীর প্রধানসহ ৯২ জন এ পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করেছে। এদের মধ্যে ৪৫ জন জামিনে মুক্তি পেয়ে ফিরেছে স্বাভাবিক জীবনে।

বুধবার রাতে র‌্যাব ৮এর উপঅধিনায়ক মেজর আদনান এক ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে সাংবাদিকদের জানান, পবিত্র ঈদ উল ফিতর উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (২২ জুন ) মহাপরিচালক র‌্যাব ফোর্সের এর পক্ষ হতে আত্মসমর্পণকারী সেই সব জলদস্যুদের শুভেচ্ছা উপহার দেয়া হবে।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে পৃথক দুটি স্থান থেকে র‌্যাব এ কার্যক্রম পরিচালনা করবে। স্থান দুটি হলো, বাগেরহাটের মংলার বিএফডিসি ঘাট ও সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানার মুন্সীগঞ্জ বাজার।

জানা গেছে, র‌্যাব ও কোস্টগার্ডের যৌথ অভিযানের মুখে গত বছরের ৩১ মে থেকে চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯২ জন ১৯৫টি আগ্নেয়াস্ত্র ও প্রায় ১০ হাজার রাউন্ড গুলিসহ আত্মসমর্পণ করে।

এরমধ্যে গত বছরের ৩১ মে সুন্দরবনের কুখ্যাত দস্যু মাস্টার বাহিনীর ১০ সদস্য ৫২টি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও প্রায় ৪৫০০ রাউন্ড গোলাবারুদ নিয়ে আত্মসমর্পণ করে। এ বাহিনীর সবাই জামিনে রয়েছে।

এরপর ১৫ জুলাই জলদস্যু মজনু ও ইলিয়াস বাহিনীর ১১ জন সদস্য ২৫টি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১০২০ রাউন্ড গোলাবারুদ নিয়ে র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করে। এ দুটি বাহিনীর সবাই জেলহাজতে রয়েছে।

৭ সেপ্টেম্বর শান্ত ও আলম বাহিনীর ১৪ জন ২০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১০০৮ রাউন্ড গুলিসহ আত্মসমর্পণ করে। এদের মধ্যে শান্ত বাহিনীর ১০ জন জামিনে রয়েছে। আলম বাহিনীর প্রধান জেলহাজতে ও অপর তিন সদস্য জামিনে মুক্ত।

১৯ অক্টোবর সাগর বাহিনীর ১৩ জন ২০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫৯৬ রাউন্ড গুলিসহ আত্মসমর্পণ করে। এ বাহিনীর ৩ জন জেলহাজতে ও ১০ জন জামিনে মুক্ত। ২৭ নভেম্বর খোকাবাবু বাহিনীর ১২ জন ২২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১০০৩ রাউন্ড গুলিসহ আত্মসমর্পণ করে। এ বাহিনীর সবাই জামিনে মুক্ত। গত ৬ জানুয়ারি নোয়া বাহিনীর ১২ জন ২৫টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১১০৫ রাউন্ড গুলিসহ আত্মসমর্পণ করে। এ বাহিনীর সবাই রয়েছে জেলহাজতে।

সর্বশেষ ২৯ জানুয়ারি জাহাঙ্গীর বাহিনী প্রধানসহ ২০ জন ৩১টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১৫০৭ রাউন্ড গুলিসহ আত্মসমর্পণ করে। এদেরকে কারাগারে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

জানতে চাইলে র‌্যাব -৮এর উপঅধিনায়ক মেজর আদনান কবীর বলেন, ‘আত্মসমর্পণকারী যেসব দস্যু জামিনপ্রাপ্ত হয়েছে তাদের ওপর প্রশাসনের সব বাহিনীর পর্যবেক্ষণ রয়েছে। তারা নিজ নিজ এলাকায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে স্বাভাবিক জীবনেই রয়েছে। মাস্টার বাহিনীর প্রধান মাস্টার এখন চট্টগ্রামে একটি কাজ করছে। সে একটি ভালো কাজ পেতে আগ্রহী। অন্যরাও স্বাভাবিক জীবন ধারণের জন্য মানসম্মত কাজ পেতে চায়। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকেও তাদের এ চাওয়াকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে পুনর্বাসনে কিছুটা সময় লাগছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘গত ৭ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রথম আত্মসমর্পণকৃত ৬০ জনকে জনপ্রতি ২০ হাজার করে টাকা এবং প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র দেওয়া হয়েছে। এগুলো ছিল টোকেন উপহার। বৃহস্পতিবার তাদের শুভেচ্ছা উপহার দেয়া হবে।