সেই মাদরাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আরো যত অভিযোগ

ছাত্রীর গায়ে আগুন দেয়ার ঘটনায় আলোচিত ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে মাদরাসার অধ্যক্ষ হন। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ওই মাদরাসার বিপুল পরিমাণ অর্থ-আত্মসাতের অভিযোগও উঠে তার বিরুদ্ধে। বহু ছাত্রীকে যৌন হয়রানির কেলেঙ্কারিতেও তার নাম জড়িয়েছে। চেক জালিয়াতি, প্রতারণা ও নাশকতার অভিযোগে ৪টি মামলা হলেও মাদরাসায় স্বপদে বহাল ছিলেন সাবেক এই জামায়াত নেতা।

শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করায় মাদরাসাটির ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ৮০ ভাগ অগ্নিদগ্ধ হওয়া রাফি বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজে বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে।

এ ঘটনার ৬ মাস আগে ওই অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন মাদরাসার আরেক ছাত্রী।

নুসরাত জাহান রাফীর সহপাঠি ও মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নাসরিন সুলতানা ফুর্তি সাংবাদিকদের বলেন, ‘অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ উদ্দৌলা ছিলেন, একজন লম্পট প্রকৃতির লোক। রাফির গায়ে হাত দেওয়ার ঘটনায় আমি নিজেও অধ্যক্ষের কাছে প্রতিবাদ করেছি।’

জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার দাবি জানায়, রাফির আরেক সহপাঠী নিশাত। তাকে মারা হচ্ছে বলেই রাফিকে পরীক্ষার হল থেকে বের করে এনেছিলো দুর্বৃত্তরা।

স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর বলেন, ‘অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজদ্দৌলা মাদরাসার এক ছাত্রীকে অন্তসত্তা করে ফেলেন। পরে তিনি স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতার হাত-পা ধরে বেঁচে যান। ২০১৬ সালে একবার চেক জালিয়াতি মামলায় জেল খেটেছেন, এরপরও উক্ত মাদরাসায় অধ্যক্ষ পদে বহাল ছিলেন।’

তার বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতি, প্রতারণা, নাশকতা ও যৌনহয়রানিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ফেনী ও সোনাগাজী থানায় চারটি মামলা রয়েছে। চেক জালিয়াতির মামলায় ২০১৭ সালেও জেল খেটেছিলেন তিনি।

ফেনী জেলা জামায়াতের আমির এ কে এম শামসুদ্দিন জানান, অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা একসময় জামায়াতের রোকন ছিলেন। বিভিন্ন অভিযোগে ২০১৬ সালে তাঁকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোনাগাজী থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, রাফীর গায়ে অগ্নিদদ্ধের ঘটনায় প্রভাবশালী একটি মহল ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, মাদরাসার একটি মাত্র প্রবেশ পথ। গেইটের দারোয়ান ছিল, পুলিশ ছিল, পরীক্ষা কেন্দ্রে বহিরাগত কোন লোকই ছিল না। নুসরাত জাহানের গায়ে কে বা কাহারা আগুন লাগিয়েছে, তার চাইতে বড় কথা হলো, অগ্নি সংযোগকারী সেই দূর্বৃত্তরা পুলিশ, দারোয়ান কে এড়িয়ে কিভাবে প্রবেশ পথ দিয়ে বের হয়ে গেলো, তা অবাক হওয়ার বিষয়।

রবিবার চট্টগ্রাম রেঞ্জের এডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ আবুল ফয়েজ অপারেশন এন্ড ক্রাইম, ফেনীর পুলিশ সুপার এবং উক্ত মাদরাসার গর্ভনিং বডির সভাপতি, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি.কে এনামুল করিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে এডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ আবুল ফয়েজ সোনাগাজী থানায় বেলা ১১ টা থেকে নুসরাত জাহান রাফীর সহপাঠী আলীম পরীক্ষার্থীদেরকে তার কক্ষে এক এক করে ডেকে রাফীর অগ্নিদগ্ধ’র ঘটনা সম্পর্কে জানতে চান এবং প্রত্যেকের বক্তব্য রেকর্ড করেন।

তিনি বেলা ৪ টার দিকে নুসরাত জাহান রাফীর সহপাঠী নিশাতের বক্তব্য নেন। পরে তার আরেক সহপাঠী নাসরিন সুলতানা ফুর্তিরও বক্তব্য রেকর্ড করেন। বেলা ৫ টার দিকে এডিশনাল ডিআইজি সাংবাদিকদের এক ব্রিফিং এ বলেন, তিনি ছাত্রী ও শিক্ষকদের বক্তব্যের পর বেশ কিছু তথ্য উপাত্ত পেয়েছেন এবং কিছু ঘটনা আঁচ করতে পেরেছেন, যা তদন্তের স্বার্থে তিনি প্রকাশ করতে রাজী নন। তদন্ত শেষে এ নারকীয় ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

ক্ষতিগ্রস্থদের পক্ষ থেকে থানায় এখনও কোনো মামলা হয়নি, তবে যদি ক্ষতিগ্রস্থদের পক্ষ থেকে কোন মামলা করতে রাজী না হলে, পরবর্তীতে পুলিশ তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

এদিকে সোনাগাজীর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সার্কেল সাইকুল আহমেদ ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনার সবকিছু সময় মতো বের হয়ে আসবে, তবে একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে।