সেলফিতে বিশ্বে কত প্রাণহানি? জানলে অবাক হবেন

চমৎকার সেলফি তুলতে পারা অনেক আনন্দের বটে! কিন্তু তাই বলে উড়োজাহাজ চালাতে গিয়ে, গুলি ভরা বন্দুক নিয়ে কিংবা খাদের পাশে পিচ্ছিল পাথরে দাঁড়িয়ে বিপদের মুখে সেলফি তোলা একেবারেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

সম্প্রতি পারিবারিক সুরক্ষা ও চিকিৎসাবিষয়ক অনলাইন গবেষণাপত্র ‘জার্নাল অব ফ্যামিলি মেডিসিন অ্যান্ড প্রাইমারি কেয়ার’-এ প্রকাশিত এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, ২০১১ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের নভেম্বর সময়কালের মধ্যে সারা বিশ্বে সেলফি তুলতে গিয়ে ২৫৯ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সে’র আওতায় ভারতের নয়াদিল্লির পাবলিক মেডিকেল কলেজের একদল গবেষক ওই জরিপ চালান।

গত বুধবার সিএনএনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

গবেষণায় দেখা যায়, সেলফি তুলতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে ভারতে। এরপর যথাক্রমে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের অবস্থান। প্রাণহানির শিকার বেশিরভাগই পুরুষ (৭২ শতাংশ), যাদের বয়স তিরিশের নিচে।

গবেষণা অনুসারে, ২৫৯ জনের মধ্যে কেবল ভারতেরই নাগরিক ১৫৯ জন, যা মোট সংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি।

যদিও পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি সেলফি তোলেন, কিন্তু পুরুষরা নাটকীয় ছবির জন্য তুলনামূলক বেশি মাত্রায় ঝুঁকি নিয়ে খাঁড়া পাহাড় বা এমন স্থানে সেলফি তোলেন। এ কারণেই সেলফি-মৃত্যুর হার বেশি বলে গবেষণায় জানানো হয়।

সেলফি তুলতে গিয়ে পানিতে ডুবে প্রাণহানির হার বেশি। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, কেউ হয়তো উত্তাল সাগর বা নদীর তীরে সেলফি তুলতে গিয়ে ঢেউয়ে ভেসে যান বা নৌকা থেকে পড়ে গিয়ে প্রাণ হারান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর কারণ যানবাহন-সংক্রান্ত। দেখা যায়, কেউ হয়তো ছুটন্ত ট্রেনের সামনে গিয়ে সেলফি তুলছেন।

সেলফি তুলতে গিয়ে উঁচু জায়গা থেকে পড়ে যাওয়া বা আগুন সংশ্লিষ্টতার কারণে তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রাণহানি ঘটেছে বলে গবেষণায় জানানো হয়।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে দেখা যায়, আগ্নেয়াস্ত্র সংক্রান্ত ঘটনায় সেলফি-মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। এসব ক্ষেত্রে কেউ হয়তো বন্দুক নিয়ে ছবি তুলতে গিয়ে দুর্ঘটনাবশত নিজেকে গুলি করে ফেলেন। এসবের বাইরেও সেলফি তোলার সময় পশুর আক্রমণ, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়াসহ আরো একাধিক কারণে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

গবেষণা বলছে, সেলফি-মৃত্যুর বেশিরভাগ কারণই জানা যায় না। যেমন, কেউ হয়তো চলন্ত গাড়িতে সেলফি তুলতে গিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন, সে ক্ষেত্রে সেটিকে গাড়ি দুর্ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়। এ বাদেও অনেক উন্নয়নশীল দেশে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সেলফির কারণে মৃত্যুর ব্যাপারটাকে সেভাবে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেন না। অথচ সেলফির কারণে প্রাণহানির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ২০১১ সালে সেলফির কারণে মাত্র তিনজনের প্রাণহানির কথা জানা গেলেও ২০১৬ সালের মধ্যে সে সংখ্যা ৯৮ জনে গিয়ে ঠেকে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসাধারণ ছবি পোস্ট করে লাইক ও কমেন্ট পাওয়ার বাসনার ফলে তরুণ ও পর্যটকরা সেলফির ব্যাপারে আগ্রহী বলে জানান গবেষকরা। গবেষণাটিতে আরো বলা হয়, ‘সেলফি ব্যাপারটি ক্ষতিকারক নয়, কিন্তু মানুষের মানসিকতা এটিকে বিপজ্জনক করে তোলে। সবারই ঝুঁকি কিংবা বিপজ্জনক আচরণ বিষয়ে শিক্ষা প্রয়োজন, যাতে তারা বুঝতে পারে কোথায় সেলফি তোলা যায় আর কোথায় যায় না।’

গবেষকরা পরামর্শ দেন, পাহাড়ের চূড়া, জলাধার কিংবা উঁচু ভবন ও ভ্রমণের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে ‘নো সেলফি জোন’ (সেলফি তোলা নিষেধ) স্থাপন করা উচিত।