‘সোনালী কাবিন’ এর স্রষ্টার চির বিদায়

জীবনের শেষ কটা দিন হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত রোগের সঙ্গে লড়তে লড়তেই মারা গেলেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ। তাঁর মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন বড় ছেলে শরীফ মাহমুদ। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।

শরীফ মাহমুদ বলেন, ‘রাত ১১টা ৫ মিনিটে আব্বা মারা যান।এর আগে আমরা আইসিইউর বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। উনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। রাত দশটার পরে ডাক্তাররা উনার বুকে পাঞ্চ করে, এরপর আর তাঁর জ্ঞান ফেরেনি।’

কবি আল মাহমুদ ভর্তি ছিলেন ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে।নিউমোনিয়াসহ বার্ধ্যক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন কবি আল মাহমুদ। গত ৮ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে ভর্তির পর কবিকে ৯ ফেব্রুয়ারি প্রথমে সিসিইউতে নেওয়া হয়। এরপর অবস্থার অবনতি হলে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। তিনি ওই হাসপাতালের নিউরোলজি বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল হাইয়ের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, কবির নিউমোনিয়া বৃহস্পতিবার থেকে বেড়ে গিয়েছিল। শুক্রবার সকাল থেকে নতুন করে প্রেসার কমে যেতে শুরু করে। তবে ওষুধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়।এরপর রাতে হঠাৎ করে হৃদপিণ্ড ঠিকভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। তখন রক্তচাপ কমে যেতে থাকে। এতে মস্তিষ্ক সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন না পৌঁছুলে মানুষ ক্লিনিক্যালি মারা যায়। কবির বেলাতেও সেটাই হয়েছে।

পারিবারিকভাবে কবিকে ঢাকার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শরীফ মাহমুদ জানান, যদি সেখানে অনুমতি না পাওয়া যায় তাহলে কবিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, নিজের গ্রামে দাফন করা হবে। তিনি আরো বলেন, ‘কবির জানাজা ঈদগাহ ময়দানে জোহরের নামাযের পরে করতে চাই। সেখানেও অনুমতি লাগে। আমার ছোট ভাই অনুমতির জন্য গেছে। সেখানে অনুমতি না পেলে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে আমরা জানাজা পড়বো।’

আল মাহমুদ শুধু আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি নন, তিনি একাধারে ছিলেন ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্প লেখক, শিশুসাহিত্যিক এবং সাংবাদিক।

কবি আল মাহমুদের প্রকৃত নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। ১৯৩৬ সালরে ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আল মাহমুদ।

সাহিত্যে অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় সম্মান একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার, শিশু একাডেমি (অগ্রণী ব্যাংক) পুরস্কার, ফররুখ স্মৃতি পুরস্কার, জীবনানন্দ দাশ স্মৃতি পুরস্কারসহ বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন এই কবি। লোক লোকান্তর (১৯৬৩), কালের কলস (১৯৬৬), সোনালী কাবিন (১৯৬৬) ইত্যাদি আল মাহমুদের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ।