সৌদি জোটের নতুন সন্ত্রাসী তালিকায় কারা?

নতুনভাবে আরও দু’টি সংগঠন এবং ১১ জন ব্যক্তিকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করেছে কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে অবরোধ আরোপ করা আরববিশ্বের চারটি দেশ। সৌদি জোটের দাবি, সন্ত্রাসী তালিকাভুক্তরা দোহার মদদপুষ্ট।

বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সৌদি প্রেস অ্যাজেন্সি যৌথ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবেই সৌদি জোট এ তালিকা প্রকাশ করেছে। সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের সূত্র বন্ধ করা, চরমপন্থী মতাদর্শের বিরোধিতা করা এবং তার প্রচার ঠেকানোই তাদের কাজ। সৌদি আরব, বাহরাইন, মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত যৌথ ওই বিবৃতি দিয়েছে।

ইরানের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং জঙ্গি সংগঠনগুলোকে সমর্থন, অর্থায়ন ও লালন-পালনের অভিযোগে চলতি বছরের ৫ জুন কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে অবরোধ আরোপ করে সৌদি জোট। তবে বরাবরই সৌদি জোটের দাবি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়ে আসছে কাতার।

নতুনভাবে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত দু’টি সংগঠন হলো ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলারস; মিসরের বিশিষ্ট ধর্ম বিশারদ ইউসুফ আল কারদায়ী ওই সংগঠনের প্রধান। অন্যটি হলো দোয়া ও ত্রাণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক ইসলামি কাউন্সিল।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত সংগঠন দু’টি সন্ত্রাসবাদ প্রতিষ্ঠা এবং ইসলামি মতাদর্শ ধ্বংস করে দিতে চায়। এছাড়া তারা বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে আসছে বলেও দাবি করা হয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিরাও কাতারের সহায়তায় বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে আসছে। তাদের কার্যক্রম পরিচালনায় কোনো অসুবিধা যেনো না হয়, সেই বিবেচনায় কাতারের বিভিন্ন দাতব্য সংস্থায় কাজ দেয়া এবং পাসপোর্ট ও ভিসা তৈরিতে দোহা সহায়তা করেছে।

কাতার রেড ক্রিসেন্টের ত্রাণ ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থার পরিচালক খালিদ নাজিম দিয়াব, বাহরাইনের ভিন্ন মতাবলন্বী হাসান আলি মুহাম্মদ জুমা সুলতান এবং মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা মাহমুদ ইজ্জাতের নাম রয়েছে তালিকাভুক্ত ১১ জনের মধ্যে।

এছাড়া মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা আলা আলি আল সামাহি, মিসরের ভিন্ন মতাবলম্বী কাদরি মুহাম্মদ ফাহমি মাহমুদ শেখের নামও রয়েছে।

কাতারের নাগরিক মুহাম্মদ সুলায়মা আল হায়দারও সেই তালিকায় রয়েছেন। বাকিরা মিসর, লিবিয়া এবং সোমালিয়ার নাগরিক।

সৌদি জোটের দাবি, কাতার কর্তৃপক্ষ ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি’ এবং ‘অঞ্চলের নিরাপত্তা’ রক্ষার অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে।

প্রাথমিকভাবে দেয়া সন্ত্রাসী তালিকায় কারদায়ীর নাম রেখেছিল সৌদি জোট। পরবর্তী সময়ে ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এবং রাজপরিবারের সদস্যসহ কাতারের ১৮ জন নাগরিকের নাম প্রকাশ করা হয়।

দ্বিতীয়বারের দেয়া তালিকায় লিবিয়ার ছয়জন, ইয়েমেনের তিনটি সংগঠনের নাম আসে। সৌদি জোটের দাবি, এরা সবাই আল কায়েদার সঙ্গে সম্পৃক্ত।

বুধবার রাতে কাতারের প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন নাসির আল থানি টেলিভিশনে দেয়া বক্তব্যে জানান, উপসাগরীয় অঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টির উদ্দেশ্য হলো কাতারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করা।

তিনি আরও জানান, এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য এবং সেটা আমাদের এমনকি কাতারের সকল নাগরিকের সহ্যের শেষ সীমায় পৌঁছেছে। কাতার এ ব্যাপারে সমঝোতা করার চেষ্টা করেছে এবং করে যাবে।

তিনি আরও জানান, কাতারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার শর্তে মধ্যস্থতার ব্যাপারে আলোচনার সুযোগ থাকবে।

এর আগে সৌদি জোটের দাবি ছিল, মুসলিম ব্রাদারহুডের সমর্থন বন্ধ করা, ইরানের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় না রাখা এবং আল জাজিরা টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ করে দিতে হবে। তবে জোটের সেই দাবি নাকচ করে দিয়েছে কাতার।

সূত্র : আল জাজিরা