স্কুল ফাঁকি দিয়ে ইটভাটায় শিশুরা!

ঝালকাঠি: কেউ পারিবারিক অভাবের কারণে আর কেউ নিজে আয় করে ইচ্ছে মতো খরচ করতে উপার্জনের পন্থা হিসেবে কাজ করছে ইটভাটায়। পারিবারিক অভাবের কারণে সংসার চালাতে সহায়তা করতে আবার কেউ খেলার সামগ্রী কিনতে অথবা অনুষ্ঠানে বাবার কাছে টাকা না চেয়ে নিজের উপার্জন দিয়েই খরচ করতে ইটভাটায় শিশু শ্রমের কাজ করছে।

প্রতিদিন ২৫০ টাকা করে তাদের বেতন দিচ্ছে মালিক। প্রতিদিনের বেতন প্রতিদিন সন্ধ্যায় না নিয়ে একত্রে জমিয়ে নিতে মালিকপক্ষ সব টাকা পরিশোধ না করে বিভিন্ন অজুহাতে কমিয়ে দেয় বলেও অভিযোগ করেছে শিশু শ্রমিকরা।

রাজাপুর উপজেলার গালুয়া ইউনিয়নের পশ্চিম পুটিয়াখালী গ্রামের মো. রুস্তম আলী হাওলাদারের ইটভাটায় (অনুমোদনহীন পাঁজা) গিয়ে দেখা যায়, শিশু শ্রমিকের কাজ করছে লোকমান (১২), আ. শুক্কুর (১৩), মো. সাব্বির হোসেন (১২), হৃদয় হোসেন (১৬), সবুজ (১৬), শাহীন (১৬), তারেক (১৭)। তারা সবাই ছাত্র। পড়ালেখার পাশাপাশি ইটভাটার কাজে জড়িত। তাদের তদারকির জন্য রয়েছে আব্দুল বারেক নামের আরেক শ্রমিক।

একে একে কথা হয় সবার সঙ্গেই। লোকমান জানায়, বাবা-মা সবাই আছে। একটি কওমী মাদরাসা থেকে পড়াশুনা করে পুটিয়াখালী আলিয়া মাদরাসায় ৫ম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। বাড়ি থেকে মাদরাসা অনেক দূর। তাই এখানে কাজ করে সেই টাকা দিয়ে একটি বাই সাইকেল কিনবে। এরপর যে টাকা থাকবে তা দিয়ে কিছু খেলাধুলার সামগ্রী কিনবে আর মাহফিল বা অন্য কোনো অনুষ্ঠানে গেলে নিজের ইচ্ছে মতো খরচ করবে।

আ. শুক্কুর জানায়, কয়েক বছর পূর্বে তার বাবা মারা গেছে। মা এবং ৩ ভাই-বোনের সংসার। পশ্চিম পুটিয়াখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণিতে পড়ালেখা করে সংসার চালানোর খরচ হিসেবে ইটভাটায় কাজ করতে হচ্ছে।

মো. সাব্বির হোসেন জানান, দেড় বছর পূর্বে বাবা মারা গেছেন। মা ও ৩ ভাই বোনের সংসার। এরমধ্যে একমাত্র পুরুষ সে। গালুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র। সংসার ও নিজের পড়ালেখার খরচ চালাতে কাজ করতে হচ্ছে।

৯ম শ্রেণির ছাত্র হৃদয় হোসেন জানান, বাবা নেই, মা ও ৩ ভাই ও এক বোনের সংসারে একমাত্র উপার্জনকারী সে। প্রথমে বোন তারপরে হৃদয় বাকি সবাই ছোট।

সকল শিশু শ্রমিকরা শুকনো-কাঁচা ইট পাঁজায় সাজানোর কাজে নিয়োজিত। এদের সবারই বেতন ২শ’ ৫০ টাকা।

একই ভাটায় ভিন্ন রকম কাজ করছে ১০ম শ্রেণির ছাত্র সবুজ ও শাহিন এবং উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র তারেক। তারা জানায়, আমাদের কাজ “প্রস্তুতকৃত নরম মাটি দিয়ে ইটের তৈরির খড়মায় ফেলে কাচা ইট রোদে শুকানো। শুকানো হলে পাশেই সারি দিয়ে রাখা। এতে প্রতিহাজারে ১ হাজার টাকা ধার্য করা হয়েছে। আমরা সেই চুক্তিতে কাজ করি। প্রতিদিন আমাদের দেড় থেকে ২ হাজার ইট প্রস্তুত করা হয়। আমাদের তদারকিতে আছেন বয়স্ক আ. বারেক। তার বেতনও আমাদের মধ্যে। তাতে আমাদের প্রতিদিন ৩শত টাকা বেতন আসে।

শিশুশ্রমের বিষয়ে ইট তৈরির কারখানার মালিক মো. রুস্তম আলী হাওলাদারের বাড়িতে গিয়ে না পেয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।