স্ত্রীর পরকীয়ার বলি হয়েছেন রংপুরে নিখোঁজ আইনজীবী

নিখোঁজ রংপুরের আইনজীবী রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে গুম করে রেখেছিলেন তার স্ত্রীর দীপা ভৌমিকের প্রেমিক কামরুল ইসলাম। নিখোঁজের পাঁচ দিন পর বুধবার (৪ এপ্রিল) রাত ২টার দিকে রংপুর মহানগরীর মাহিগঞ্জ মোল্লাপাড়া এলাকার একটি নির্মাণাধীন বাড়ির মাটির নিচ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এর আগে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে নিখোঁজ বাবু সোনার স্ত্রী দীপা ভৌমিককে আটক করে র‌্যাবের একটি দল। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী ওই এলাকার কামরুল ইসলাম নামে এক শিক্ষকের বড় ভাইয়ের নির্মাণাধীন বাড়ির মাটির নিচ থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে মরদেহ শনাক্তের জন্য বাবু সোনার ছোট ভাই সাংবাদিক সুশান্ত ভৌমিক সুবল ও স্ত্রী দীপা ভৌমিককে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা গিয়ে বাবু সোনার মরদেহ সনাক্ত করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র‌্যাব-১৩ এর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক আরমিন রাব্বী।

এদিকে, সোমবার তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কামরুল ইসলাম ও মতিয়ার রহমানকে আটকের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্ত ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। সোমবার কামরুল ও মতিয়ারকে আটক করা হলেও তখন কিছু জানায় নি পুলিশ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাদের আটকের কথা স্বীকার করেন কোতয়ালী থানার ওসি বাবুল মিঞা।

স্থানীয় এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা গেছে, রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনার স্ত্রী দীপা ভৌমিক তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক কামরুল ইসলামের সঙ্গে দীপার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে এলাকায় গুঞ্জন ওঠে। পরকীয়া সম্পর্কের জেরে কামরুল ও দীপা পরিকল্পিতভাবে বাবু সোনাকে হত্যার পর তার মরদেহ মাটির নিচে পুঁতে রাখে। দীপা ভৌমিকের প্রেমিক কামরুল ইসলামের পৈত্রিক নিবাস হচ্ছে তাজহাট মোল্লপাড়া। তিনি পরিবার নিয়ে নগরীর রাধাবল্লভ এলাকায় বসবাস করলেও শিক্ষকতার কারণে মোল্লাপাড়ার বাড়িতেও নিয়মিত যাতায়াত করতেন।

গত শুক্রবার (৩০ মার্চ) সকাল থেকে নিখোঁজ ছিলেন অ্যাডভোকেট রথীশ চন্দ্র ভৌমিকবাবু সোনা (৫৮)। ওইদিন তার স্ত্রী দীপা ভৌমিক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বাবু সোনা ভোর ৬টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে যান। কোথায় গিয়েছেন সে বিষয়ে বাড়িতে কাউকে কিছু বলেননি। দীপা ভৌমিকের এমন বক্তব্যের পর বুধবার তারই স্বীকারোক্তিতে মরদেহ উদ্ধার হওয়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।

অ্যাডভোকেট রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনা চাঞ্চল্যকর জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও এবং মাজারের খাদেম রহমত আলী হত্যাকান্ডের রাষ্ট্রপক্ষেও প্রধান আইনজীবী ছিলেন। তিনি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের যুদ্ধাপরাধ মামলারও সাক্ষী ছিলেন।

এছাড়াও রথীশ চন্দ্র ভৌমিক রংপুর আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত সহ-সাধারণ সম্পাদক, জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের রংপুর বিভাগের ট্রাস্ট্রি, পূজা উদযাপন পরিষদের রংপুর জেলার সভাপতি ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংষ্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।