স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করলো ৬ শতাধিক চরমপন্থি

দেশের উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণবঙ্গের চরমপন্থী দলের ৫৬৫ জন সদস্য স্বাভাবিক জীবনে ফেরার অঙ্গীকারে আত্মসমর্পণ করেছেন।

মঙ্গলবার বিকেলে পাবনার শহীদ আমিন উদ্দিন স্টেডিয়ামে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন তারা।

অনুষ্ঠানে পাবনাসহ ১৪টি জেলার ৫৯৫ জন চরমপন্থী সদস্য আত্মসমর্পণ করেন। অনুষ্ঠানে ৫৭৫টি দেশি অস্ত্র ও ৬৮টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেন চরমপন্থীরা।

এর আগে আত্মসমর্পণকারীদের মাঝে আর্থিক প্রণোদনা বিতরণ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, অন্ধকারের পথ ছেড়ে আলোয় ফেরা চরমপন্থীদের পুনর্বাসনে সহযোগিতা দেবে সরকার।

এক সময়ের চরমপন্থী সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য পাবনায় মঙ্গলবার ছিল অন্যরকম একটি দিন। চার যুগেরও বেশি সময় ধরে যাদের কাছে জিম্মি ছিল সাধারণ মানুষ, নৃশংসতার পথ ছেড়ে তারাই ফিরেছেন স্বাভাবিক জীবনে। ইতিহাসের সাক্ষী হতে আসা হাজারো মানুষের ছিল তাই বাঁধভাঙা আনন্দ।

সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ১৪ জেলা থেকে অনুষ্ঠানস্থলে আসতে শুরু করে বিভিন্ন চরমপন্থী দলের সদস্যরা। বিকেলে পূর্ববাংলার সর্বহারা, পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (লাল পতাকা), নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি ও কাদামাটি দলের চরমপন্থীরা আত্মসমর্পণ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে।

এসময় অতীত অপরাধের জন্য ক্ষমা চেয়ে চরমপন্থীরা জানান, প্রতিনিয়ত মৃত্যু থেকে পালিয়ে ফেরা অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি পেতেই তাদের এই আত্মসমর্পণ।

আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ। আজ যারা আত্মসমর্পণ করলেন তাদের আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হবে।

মন্ত্রী আরো বলেন, সরকার চরমপন্থা অনুসরণকারীদের ভালো পথে ফেরার সুযোগ দিয়েছে। যারা আত্মসমর্পণ করলেন, তাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রণোদনা দিয়েছেন।

যারা এখনও অন্ধকার জগতে রয়েছে তাদের ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তারা যদি ফিরে না আসে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আত্মসমর্পণকারী চরমপন্থী সদস্যদের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, অস্ত্রসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। আত্মসমর্পণ করায় তাদের প্রতি সরকারের সহানুভূতি থাকবে।

তবে বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ আরো কঠোর হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।

তিনি বলেন, পথচ্যুত মানুষদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে কাজ করছে সরকার। বাংলাদেশ পুলিশ তাদের আইনি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।

আইজি বলেন, উগ্রপন্থা ও চরমপন্থা দমনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে রোল মডেল। আজ যেসব চরমপন্থী আত্মসমর্পণ করছেন তাদের আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সহযোগিতা করা হবে, যাতে তারা মূলধারায় ফিরে আসতে পারেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, সংরক্ষিত নারী আসনের (পাবনা-সিরাজগঞ্জ) এমপি নাদিরা ইসলাম জলি, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি এম খুরশীদ হোসেন, পাবনা-১ আসনের এমপি ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, পাবনা-২ আসনের এমপি আহমেদ ফিরোজ কবির, পাবনা-৩ আসনের এমপি মকবুল হোসেন, পাবনা-৪ আসনের এমপি শামসুর রহমান শরীফ ডিলু, পাবনা-৫ আসনের এমপি গোলাম ফারুক প্রিন্স, রাজশাহী-৪ আসনের এমপি প্রকৌশলী এনামুল হক, পাবনার জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন, পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম।

শ্রেণিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠাকে মূলমন্ত্র বললেও, নিষিদ্ধ চরমপন্থী দলগুলোর হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাইয়ে এ অঞ্চলের মানুষ ছিল ভীতসন্ত্রস্ত। দুর্ধর্ষ চরমপন্থীদের আজকের আত্মসমর্পণে রক্তাক্ত সে ইতিহাসের সমাপ্তি ঘটলো বলেই মনে করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।