স্বাধীনতাবিরোধীদের রাষ্ট্রীয় পদে দেখতে চাই না : বুদ্ধিজীবীর সন্তানরা

‘রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় স্বাধীনতাবিরোধী কোনও ব্যক্তি, তাদের সহযোগী, মদদদাতা এবং স্বাধীনতাবিরোধীদের সন্তানদের আমরা দেখতে চাই না। আমরা স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় দেখতে চাই।’

শুক্রবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজারে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে বুদ্ধিজীবীদের সন্তানরা তাদের এই দাবির কথা জানান। প্রজন্ম ৭১ -এর ব্যানারে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সন্তানরা রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে এক মানববন্ধনে অংশ নেন। এর আগে তারা শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের ছোট ছেলে তৌহিদ রেজা নূর। তিনি বলেন, ‘সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আমরা দেশের নাগরিকদের অনুরোধ জানাচ্ছি, ‘রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এমন কাউকে সমর্থন করবেন না, যারা স্বাধীনতাবিরোধী এবং স্বাধীনতাবিরোধীদের মদদ দেয়। স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে ভোট দিন।’

তিনি বলেন, ‘শহীদ পরিবারের সদস্য হিসেবে নয়, একজন নাগরিক হিসেবেই বলবো, রক্তের বিনিময়ে এই দেশ সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্যই এ দেশের রাষ্ট্রের ক্ষমতা গ্রহণ করবে- মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি। আজকে শোকের দিন, জাতিকে মেধাশূন্য করার অভিপ্রায় নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে। এই বেদনা বাংলাদেশের তরুণরা তাদের হৃদয়ে ধারণ করে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমাদের প্রত্যাশা, তরুণরা এই বিজয়ের মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধী ও তাদের মদদদাতাদের বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে। এটা আমাদের প্রত্যাশা।’

তিনি বলেন, ‘আমার বাবাসহ মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তারা এমন দেশ চাননি। একটি স্বাধীন দেশে কী করে স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীরা বসবাস করে? তাদের নিয়ে বিএনপি রাজনীতি করছে। তাদের হাতে কী করে মার্কা তুলে দেয়? আমরা নতুন প্রজন্মকে তাদের বয়কট করার দাবি জানাচ্ছি।’

রায়েরবাজারের বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা বুদ্ধজীবীদের সন্তানরা স্মরণ করেন তাদের পূর্বসূরিদের আত্মত্যাগের কথা। এ সময় অনেকেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছোট ছেলে আসিফ মুনীর বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের বাবাদের সঙ্গে যারা ছিলেন, তাদের বন্ধুরা অনেকে এখনও বেঁচে আছেন। তাদের উচিৎ নতুন প্রজন্মকে সেই সময়ের প্রেক্ষাপট বেশি-বেশি জানানো। তাহলে নতুন প্রজন্ম দেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সম্পর্কে সত্যিকারের ইতিহাস জানতে পারবে।’ তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনও খুব বেশি বই নেই, যেখানে আমাদের ছোটরা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে জানতে পারবে।’

শহীদ মুনীর চৌধুরী ছিলেন ১৪ জন ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয়। ১৪ ডিসেম্বর দুপুর ১২টার দিকে আলবদর-রাজাকাররা মুনীর চৌধুরীকে হাতিরপুলের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। ছেলে আসিফ মুনীর চৌধুরী বলেন, যারা স্বাধীনতাবিরোধী আমরা তাদের বিরুদ্ধে। এ জায়গায় কোনও আপস নেই।’

শহীদ নিজাম উদ্দিন আহমেদের ছেলে সাফকার নিজাম বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও বাংলাদেশের মাটিতে বন্ধ হয়নি স্বাধীনতাবিরোধীদের ষড়যন্ত্র। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এ দেশে এখনও তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করে চলেছে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র, যেমনটা করেছিল একাত্তরে। নতুন প্রজন্মের কাছে সত্যিকারের ইতিহাস প্রচার করে তাদের প্রতিহত করতে হবে।’
মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে ডিসেম্বরে এসে নিজেদের পরাজয় অনিবার্য জেনে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার গোপন নীলনকশা গ্রহণ করে। নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের দুইদিন আগে একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর সহস্রাধিক বুদ্ধিজীবীকে ধরে নিয়ে পৈশাচিকভাবে হত্যা করে ঘাতকরা।

আজকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে সেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সন্তানদের চাওয়া- এ দেশ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের চিরতরে বিনাশ করতে হবে। শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. এএফএম আবদুল আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী শম্পা রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বলেন, ‘সামনে নির্বাচন। আমরা জনগণের কাছে আপিল রাখতে চাই- যুদ্ধাপরাধীকে, যুদ্ধাপরাধীদের সহযোগীকে, যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। তাদের যেন ভোট না দেন।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশটি গড়ে উঠবে। যুদ্ধাপরাধীদের যে অপরাজনীতি তা নির্মূল করতে হবে।’খবর বাংলা ট্রিবিউনের।