স্বামীর কাছে নয়, বডিগার্ডে সুখ খুঁজেছেন প্রিন্সেস ডায়ানা

সত্যি কি বডিগার্ড বেরি মানাকি’র সঙ্গে প্রেমে মজেছিলেন প্রয়াত প্রিন্সেস ডায়ানা! গোপনে গোপনে প্রেম করেছেন তারা দু’জনে। কেনসিংটন রাজপ্রাসাদের ড্রয়িংরুমে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখা গেছে তাদের। তাহলে কি স্বামী প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে দাম্পত্য সঙ্কটের কারণে ডায়ানা গোপনে সুখ খুঁজছিলেন!

মিডিয়ার খবরে এসেছে, প্রায় ৭ বছর প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে (প্রচার অযোগ্য শব্দ) সম্পর্ক ছিল না ডায়ানার। এ জন্যই কি ডায়ানা কখনো বেরি মানাকি, কখনো হার্ট সার্জন হাসনাত খানের কাছে সুখ খুঁজেছেন! যদি তা-ই না হয়, তাহলে সড়ক দুর্ঘটনায় মানাকি মারা যাওয়ার খবরে কেন তিনি অঝোরে কেঁদেছিলেন! নিজের গায়ের পোশাক টেনেই বা ছিঁড়েছিলেন কেন! তার বাহুতে, পায়ে আঁচড়ের দাগ এসেছিল কোথা থেকে! কেন মানাকি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর ডায়ানা বলেছিলেন, তাকে হত্যা করা হয়েছে!

কেন তিনি কান-এ চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিতে যাওয়ার পথে বিমানে বসে অঝোরে কেঁদেছিলেন। বৃটিশ রাজপরিবারের অনেকেই মনে করতেন, বেরি মানাকি ছিলেন প্রিন্সেস ডায়ানার একজন প্রেমিক। প্রিন্সেস ডায়ানা, প্রিন্স চার্লস, বৃটিশ রাজপরিবার, প্রিন্স চার্লসের বর্তমান স্ত্রী ক্যামেলিয়া-এসব নিয়ে বহু ইতিহাস লেখা হয়েছে। অনেক কাহিনী বৃটিশ ট্যাবলয়েডগুলোর পাতায় পাতায়। কিন্তু প্রিন্সেস ডায়ানার প্রেম, ভালোবাসা, ব্যক্তিগত জীবন এসব নিয়ে এবার ডকুমেন্টারি প্রচার করবে বৃটেনের চ্যানেল ২৪।

রোববার স্থানীয় সময় রাত ৮টায় এই চ্যানেলে প্রচার হবে ‘ডায়ানা: ইন হার ওন ওয়ার্ডস’ নামের ডকুমেন্টারি। এতে তুলে ধরা হচ্ছে ডায়ানার (প্রচার অযোগ্য শব্দ) জীবনের গোপন অধ্যায়। এতে বলা হচ্ছে, বেরি আলবার্ট মানাকি ছিলেন ডায়ানার বডিগার্ড। তিনি ১৯৮৭ সালের মে মাসে অফিসের কাজ শেষ করে বাসায় ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। বৃষ্টিস্নাত এক রাতে তিনি একটি মোটরসাইকেলে করে ফিরছিলেন। কিন্তু ১৭ বছর বয়সী বিউটিশিয়ান নিকোলা চোপের গাড়ি ফোর্ড ফিয়েস্তার সঙ্গে টক্কর লেগে তিনি দুর্ঘটনায় মারা যান।

রেখে যান স্ত্রী সুসান ও দুই মেয়ে ক্লারে ও মিশেলেকে। তার মৃত্যুতে তদন্ত কমিটি হয়। তারা দু’মাস পরে দেখতে পান সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন মানাকি। বিষয়টি এখানেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার এ মৃত্যু নিয়ে যখন উঁচু মহলের কেউ শোক প্রকাশ করেন, ভেঙে পড়েন তখন তা কাহিনীকে অন্য দিকে নিয়ে যায়। ওই সময় মানাকি ছিলেন ৩৯ বছর বয়সী পুলিশ অফিসার। মারা যাওয়ার দু’এক মাস আগেও তিনি প্রিন্সেস ডায়ানার বডিগার্ড ছিলেন। তার মারা যাওয়ার খবর প্রথম ডায়ানাকে দেন স্বামী প্রিন্স চার্লস।

বলা হয়, এ খবর শুনে ডায়ানা অনিয়ন্ত্রিতভাবে কাঁদতে শুরু করেন। ওই সময় তারা কান চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। এমন সময় বিমানেই ডায়ানাকে ওই খবর দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি যেন জমে হিম হয়ে যান। এ সময় তিনি নিজের গায়ে আঁচড় কাটতে থাকেন। কান-এ যাওয়ার পুরো ফ্লাইটে কেঁদেছেন ডায়ানা। বিমানবন্দরে নামার পর তার গাউন ঠিকঠাক করে দেন সহকারী।

নিজের শরীরে যে ক্ষতি তিনি করে ফেলেছেন তা কোনোমতে ঢেকে দেন তার ড্রেসাররা। কিন্তু ডায়ানার জীবনের এসব অধ্যায় বাইরের কেউ জানতে পারেননি। বেরি মানাকি ছিলেন ৬ ফুট লম্বা। তার পিতা ছিলেন ডাগেনহ্যামে ফোর্ড গাড়ির একজন শ্রমিক। সেই বেরি মানাকির সঙ্গে ডায়ানার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা ঘটনার প্রায় ৭ বছর পরে। এর কিছু কিছু প্রকাশ পেয়েছে প্রিন্সেস ডায়ানার বিভিন্ন ভিডিও মন্তব্যে। এর কিছু কিছু প্রকাশ পেয়েছে। কিছু ডায়ানা শেয়ার করেছেন তার কণ্ঠশীলন বিষয়ক কোচ পিটার সেটেলেনের সঙ্গে।

ততক্ষণে তিনি প্রিন্স চার্লসের থেকে আলাদা হয়ে গেছেন। ডায়ানাকে তখন আবেগ তাড়া করে ফিরত। তাই তিনি আলোচনায় প্রায়ই নিয়ে আসতেন তার গোপন জীবন, তখনকার ক্যামিলা পার্কার বৌলসের সঙ্গে তার স্বামী চার্লসের সম্পর্ক নিয়ে। এরই এক পর্যায়ে ডায়ানা স্বীকার করেন, তিনি এমন একজনের গভীর প্রেম অনুভব করেন, যিনি তার খুব ঘনিষ্ঠ। তবে ডায়ানা ওই স্বীকারোক্তিতে বেরি মানাকির নাম প্রকাশ করেননি।

তবে বলেছেন, তিনি এমন একজন, যিনি এই পরিবেশের মধ্যে কাজ করে চলেছেন। আমি এতদিন যাবত যাদেরকে দেখেছি তার মধ্যে তিনি সবচেয়ে বেশি অনুগত। আমি তাকে দেখার জন্য সবসময় অপেক্ষায় থাকি। আপনি জানেন, আমিার হৃদয় রয়েছে আস্তিনের ভেতর। সে যখন আমার পাশে থাকে শুধু তখনি নিজেকে সুখী মনে হয়। এরই এক পর্যায়ে তার কাছে পিটার সেটেলেন জানতে চান, আপনি যে ভালোবাসা পেতে চান তা কি তিনি আপনাকে দিচ্ছেন? জবাবে প্রিন্সেস ডায়ানা বলেন, হ্যাঁ। আমি এই রাজকীয় জীবন ত্যাগ করে সুখী হতে চাই। জাস্ট বেরিয়ে যেতে চাই। বসবাস করতে চাই তার সঙ্গে। আপনি কি এটা বিশ্বাস করেন?

এরপরেই ডায়ানা হাসতে থাকেন। তারপর স্মৃতি হাতড়ে বলেন, সেও আমার মতো মনে করত এটা ছিল একটি চমৎকার ধারণা। আবেগপ্রবণ প্রিন্সেস ডায়ানা তার কাছের মানুষ মানাকির মৃত্যু নিয়ে বলেন, আমি মনে করি তাকে হত্যা করা হয়েছে। ওদিকে প্যারিসে ডায়ানার মৃত্যু নিয়েও বিভিন্ন মত রয়েছে। কারণ, ওই সময় তিনি তার প্রেমিক দোদি আল ফায়েদের সঙ্গে ছিলেন একটি গাড়িতে। সেই গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ে তারা মারা যান। ২০০৪ সালে আমেরিকান টিভিতে পিটার সেটেলেনের ভিডিও টেপ দেখানো হয়। এর আগে পর্যন্ত বেরি মানাকির মৃত্যু স্রেফ একটি দুর্ঘটনা ছাড়া অন্য কিছু ছিল না বলেই ধরে নেয়া হতো।

ওই ভিডিও টেপে প্রিন্সেস ডায়ানাকে ৯০ দশকের শুরুর দিকে বলতে শোনা যায়, মানাকির ওই মৃত্যু ইচ্ছাকৃতভাবে আয়োজন করেছিল সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টরা। এর কারণ, মানাকির সঙ্গে তার দহরম মহরম। পূর্ব লন্ডনে সড়ক দুর্ঘটনায় মানাকি মারা যাওয়ার ৩০ বছরেরও বেশি সময় পড়ে আজ রোববার ডায়ানার সেইসব ভিডিও টেপ প্রচার করবে চ্যানেল ২৪। বৃটিশ টিভি’র চ্যানেল ২৪-এ প্রথমবারের মতো প্রচার হচ্ছে এটা। তবে টিভি কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন ডায়ানার বন্ধুবান্ধব ও ভাই আর্ল স্পেন্সার।

তারা বলেছেন, এটা খুবই ক্ষতিকর। ডায়ানার দুই ছেলে প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্স হ্যারির জন্য এটা হবে অনেক বেশি ক্ষতিকর। কিন্তু কারো কথায় কান দেবে না চ্যানেল কর্তৃপক্ষ। প্রশ্ন হচ্ছে, সার্জেন্ট বেরি মানাকির এই বিদায়ের পিছনে তাহলে আসল সত্য কি? যখন ডায়ানার বডিগার্ড ছিলেন মানাকি তখন পর্যন্ত বিষয়টি গোপন রাখতে চেয়েছিলেন ডায়ানা। কিন্তু রাজপ্রাসাদের স্টাফদের চোখ ফাঁকি দিতে পারেননি তারা। ওই সময় মানাকির বয়স ছিল ৩৭ বছর। তিনি ছিলেন বিবাহিত। এ সময়ে ১৯৮৫ সালে তাকে প্রিন্সেস ডায়ানার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় কেনসিংটন রাজপ্রাসাদে।

এটা প্রিন্স হ্যারির জন্মের এক বছর পরের কথা। ওদিকে এরই মধ্যে প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে দাম্পত্য জীবন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ১৯৮৬ সালের জুলাই মাসের এক রাতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন প্রিন্স অ্যানড্রু ও সারাহ ফারগুসন। সেই রাতে ডায়ানা তার দুই ছেলেকে গুডনাইট জানিয়ে চুমু খান এবং সেখান থেকে এগিয়ে যান কেনসিংটন প্রাসাদের ড্রয়িং রুমের দিকে। সেখানে তার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন সার্জেন্ট বেরি মানাকি। ওই সময় রাজপ্রাসাদের একটি সূত্র বলেছেন, ড্রয়িং রুমে ডায়ানা ও মানাকি একান্তে অবস্থান করছিলেন। তখন প্রিন্স চার্লসের একজন সিনিয়র স্টাফ সেখানে উঁকি মারেন। তিনি দেখতে পান ডায়ানা ও তার বডিগার্ড সন্দেহজনক অবস্থায় বসে আছেন।

তাদের মধ্যকার এই অস্বাভাবিক সম্পর্ক নিয়ে কান কথা ততদিনে ছড়িয়ে পড়েছে। এর এক বছর আগে তাদের দু’জনকে একান্তে বালমোরালে পাহাড়ের ওপর দিয়ে গাড়ি চালাতে দেখা যায়। ডায়ানাকে একটি বাদামি টেডি বিয়ার উপহার দিয়েছিলেন। তা ডায়ানা রেখেছিলেন তার বিছানায়। তাদের এই সম্পর্কের কথা চার্লসকে জানিয়েছিলেন তার এক বার্তাবাহক। কয়েকদিন পরে বিষয়টি রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথকে জানান ডায়ানার নিকট-আত্মীয় স্যার রবার্ট ফেলোসকে দিয়ে। ব্যাস, মানাকিকে তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সমন পাঠায়।

তারা প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে তার অতিরিক্ত ঘনিষ্টভাবে মেলামেশার অভিযোগ আনেন। এতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। এর ফলে বেরি মানাকিকে রাজ পরিবারের সমস্ত দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করা হয়। তাকে পাঠানো হয় ডিপ্লোম্যাটিক প্রটেকশন স্কোয়াডে। এর মধ্য দিয়ে দৃশ্যত তাকে প্রিন্সেস ডায়ানার জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া হয়। এর এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ১৯৮৭ সালের ১৪ই মে বৃহস্পতিবার বৃষ্টিভেজা এক রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান বেরি মানাকি। তখন ডায়ানার সন্দেহ হয়েছিল। তিনি মনে করেছিলেন অন্য কিছু।

এ বিষয়ে পিটার সেটেলেনকে ডায়ানা বলেছেন, তাকে হত্যা করা হয়েছে। তাকে খুন করা হয়েছে। এ কথাটি কখনোই আমরা জানতে পারব না। ডায়ানা এসব কথা বলেছেন ভিডিও টেপে। তিনি এই সন্দেহের কথা ঘনিষ্ঠ বন্ধুদেরও বলেছিলেন। ডায়ানার বিবাহ বিচ্ছেদের পর হার্ট সার্জন হাসনাত খানের সঙ্গেও ডায়ানার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।

ডায়ানা মারা যাওয়ার পর সেই হাসনাত খান বলেছেন, ডায়ানা বিশ্বাস করতেন বেরি মানাকিকে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। ডায়ানা মনে করেন, এটা সাধারণ কোনো মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ছিল না। ডায়ানার কাছে বেরি মানাকির মৃত্যুর খবর যেভাবে জানিয়েছিলেন প্রিন্স চার্লস তাতে তিনি অত্যন্ত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। -এমজমিন