স্বামীর পরকীয়া প্রেমে বাঁধা দিতে গিয়েই গর্ভের সন্তানসহ নির্মম খুন হলেন মুন্নী

গার্মেন্টস কর্মকর্তা স্বামীর পরকীয়া প্রেমের বাঁধা হবার দায়ে এবার প্রাণ দিতে হলো ফুটফুটে দুই শিশু সন্তানের জননী অন্তঃসত্ত্বা এক মা’কে। শুক্রবার ভোরে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের দক্ষিণ গোড়ান ৩৪৭ নম্বর বাড়ির ৮ তলায় পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় এক বিরুদ্ধে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে ।

ঘটনার পরই খিলগাঁও থানা পুলিশ অভিযুক্ত স্বামী সাইফুল আল মামুনকে (৩৫) আটক করেছে। এরপর শুক্রবার বিকালে নিহত মাহমুদা আক্তার মুন্নীর (২৬) লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠিয়েছে । নিহত মাহমুদা আক্তার মুন্নি লক্ষ্মীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল করিমের মেয়ে।

নিহতের ছোট ভাই শাহাদাৎ হোসেন আনন্দ জানান, তিনি বোনের বাসায় থেকে লেখাপড়া করেন। সাইফুল-মুন্নীর সংসারে মোসাফ (৭) ও আরফা (৩) নামে দুই ছেলে রয়েছে।বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে মদ্যপ অবস্থায় বাসায় ঢোকেন ভগ্নিপতি সাইফুল আল মামুন। এত রাতে কোথায় ছিলেন? জানতে চাওয়ায় মাহমুদা আক্তার মুন্নির সঙ্গে তার ঝগড়া হয়।

আনন্দ জানান, তার ভগ্নিপতি ভেতরে ঢোকার পর তিনি (আনন্দ) শবেবরাতের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে চলে যান। ফিরেন রাত ৩টার দিকে। দরজায় কলিং বেল চাপলেও ভেতর থেকে দরজা খুলছিল না কেউ।

আনন্দ বলেন, ভেতরে ‌`বাঁচাও’ `বাচাঁও’ বলে আপুর আর্তচিৎকার শুনতে পাই। এসময় বাইরে থেকে কী করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এক পর্যায়ে আপু (মুন্নি) হামাগুড়ি দিয়ে এসে দরজা খুলে দেন। এরপরই তিনি অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন।

আনন্দ আরও বলেন, আপুকে আমি তুলে নিয়ে খাটের উপর শুইয়ে দেই। এরপর তার স্বামীকে ডাক্তার ডাকতে বললেও তিনি কোনো কথা শুনছিলেন না। এক পর্যায়ে ভোর সাড়ে ৫টায় অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হলে ৬টায় অ্যাম্বুলেন্স বাসায় আসে। এরপর সাড়ে ৬টায় স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এরপর খিলগাঁও থানা পুলিশ হাসপাতাল থেকে তার স্বামী সাইফুল আল মামুনকে গ্রেফতার করে।

নিহতের স্বজনরা জানান, মাহমুদা আক্তার মুন্নি তার স্বামীকে নিয়ে তার স্বামী সাইফুল আল মামুন নারায়ণগঞ্জের ফারিহা গার্মেন্টসে জিএম হিসেবে কর্তব্যরত। ওই গার্মেন্টসে কর্মরত এক তরুণীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়া সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছিলেন সাইফুল আল মামুন। এ নিয়ে মাহমুদা আক্তার মুন্নির সঙ্গে তার ঝগড়াঝাটি লেগেই ছিল। এর জের ধরেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।

অন্যদিকে নিহতের চাচা ফজলুল করিম জানান, মুন্নি তার স্বামীকে নিয়ে খিলগাঁওয়ের দক্ষিণ গোরান ৩৪৭ নম্বর বাড়িতে থাকতেন। তার স্বামী আল মামুন কিছু দিন আগে একটি হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করে। এ নিয়ে মুন্নির সঙ্গে বাক-বিত-ার জেরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত আল মামুন।

নিহতের বাবা মনিরুল করিম জানান, গত তিন বছর আগে মাহমুদা আক্তার মুন্নি বিএ পরীক্ষা দেয়ার জন্য লক্ষ্মীপুরে যান। সেখানে অবস্থানের সুযোগে সাইফুল আল মামুন এক তরুণীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। সে প্রায় রাতেই মদ্যপ হয়ে বাসায় ফিরতো। কথায় কথায় মাহমুদা আক্তার মুন্নীকে নির্যাতন করতো। ওই তরুণী নিজেও মাদকাসক্ত বলে জানান তিনি।

এদিকে খিলগাঁও থানার ওসি কাজী মাইনুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, এ ঘটনায় নিহত মুন্নির স্বামী সাইফুল আল মামুনকে আটক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে নিহতের বাবা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন।