স্বামী শ্বাশুড়ির নির্যাতনে অসহায় নার্গিসের ঠাই হলো শিশু পরিবারে

মাগুরা প্রতিনিধি : স্বামী, শাশুড়ির নির্যাতনের শিকার হয়ে মাগুরা সদর হাসপতালে ১২দিন ধরে চিকিৎসা নিয়েছেন নার্গিস বেগম নামে এক গৃহবধূ। মঙ্গলবার হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে তাকে। কিন্তু স্বামীর সংসারে নির্যাতনের ভয়ে ফিরে যেতে পারছেন না নার্গিস (২৫)। অন্যদিকে শিশু বয়সে বাবা-মা মারা যাওয়ার পাশাপাশি বাবার বসতবাড়ি বিক্রির টাকা স্বামীকে দিয়ে দেয়ায় সেখানে ফিরে যাবার অবস্থাও নেই তার। যে কারণে দিশাহারা হয়ে নার্গিস এখন মাগুরা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আশ্রয় নিয়েছেন সরকারি শিশু পরিবারে। নার্গিসের সঙ্গে রয়েছে তার ১৭ মাস বয়সি শিশু ছেলে সাহাদ।

নির্যাতিতা নার্গিস জানান- তার ৩মাস বয়সে মা রোকেয়া বেগম মারা গেছেন এরপর ৬ বছর বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মরা যান বাবা মিজানুর রহমান। বাবার বাড়ি যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার খানপুর গ্রামে প্রতিবেশীদের কাছে কোনরকমে খেয়ে পড়ে মানুষ হয়েছে নার্গিস। তারপর স্বাবালিকা হলে প্রতিবেশীরা মিলে তাকে বিয়ে দিয়েছিলেন মাগুরার শালিখা উপজেলার হরিশপুর গ্রামে মৃত রকিব উদ্দিন মন্ডলের ছেলে মোসলেম মন্ডলের সাথে। সবার প্রত্যাশা ছিল স্বামীর ঘরে সুখেই থাকবে নার্গিস। প্রথম প্রথম স্বামীর সংসারে ভালই কাটছিল দিন। ১৭ মাস আগে জন্ম নেয় একমাত্র ছেলে সাহাদ। স্বামীকে খুশি করার জন্যে তার কথামত একমাত্র সম্বল হিসেবে থাকা বাবার ভিটার ৭শতক জমি বিক্রি করে ৩লাখ ২০ হাজার টাকা নার্গিস তুলে দিয়েছিলেন স্বামী মোসলেমের হাতে।

মোসলেম সেই টাকা দিয়ে নিজের নামে জমি কেনেন। শুধু তাই নয় বিয়ের সময় গোপন রাখা তালাকপ্রাপ্ত প্রথম স্ত্রীকে কয়েকমাস আগে ঘরে আনে মোসলেম। ক্রমেই মোসলেমের আসল রূপ বেরিয়ে আসতে শুরু করলো। সুখ অধরাই থেকে গেল এতিম নার্গিসের জীবনে। সর্বশেষ গত ২৭ সেপ্টেম্বর মোসলেম ও তার মা চিয়ারন নেছাসহ পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য মিলে মারপিট করে তাকে শিশু সাহাদসহ বাড়ি থেকে বের করে দেয়। ওইদিন তিনি মাগুরা সদর হাসপাতালে এসে ভর্তি হন। মঙ্গলবার তাকে মাগুরা সদর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিয়ে দিলে বিপাকে পড়ে নার্গিস। এ সময় তিনি নিরাপদ আশ্রয়ের জন্যে সহযোগিতা চান মাগুরা সদর হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেল এর অফিসার লাবনী রায়ের কাছে। তিনি তাকে নিয়ে যান জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফাতেমা জহুরার কার্যালয়ে। পরে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তাকে মাগুরা সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা) তে সাময়িক আশ্রয় দেয়া হয়।

ভুক্তভোগী নারগিস জানান- বিয়ের সময় মোসলেম তার প্রথম স্ত্রী মৃত বলে দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে তাকে বিয়ে করেন। কিন্তু পরে তিনি জানতে পারেন প্রথম স্ত্রী তানিয়া জীবিত আছে। এবং মোসলেম নড়াইলের নলদি মিঠাপুর গ্রামে তাকে নিয়ে আলাদা বাসায় মাঝে মধ্যে বসবাস করেন। এটি জানার পরই মোসলেম নার্গিসের উপর নির্যাতন শুরু করে। একটি সন্তান নিয়ে এখন তার যাওয়ার কোন জায়গা নেই। তিনি এ বিষয়ে আইনের সহযোগিতা চান।

নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে স্বামী মোসলেম মন্ডল জানান- ৪ মাস আগে আমি তাকে তালাক দিয়ে দিয়েছি। তার সঙ্গে আমার এখন আর কোন যোগাযোগ নেই।

লাবনী রায় জানান- অসহায় নার্গিসের কোন আশ্রয় না থাকায় তার আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তাকে মাগুরা সরকারি শিশু পরিবারে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থার জন্য জেলা লিগ্যাল এইইড কমিটির সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে।