স্মার্টকার্ড প্রকল্পে ব্যর্থতা, ১৪০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিল ফ্রান্সের কোম্পানি

চুক্তি অনুযায়ী ৯ কোটি নাগরিকের হাতে উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্টকার্ড) তুলে দিতে পারেনি ফ্রান্সের ‘অবার্থু’র টেকনোলজিস’। এর জন্য চুক্তির শর্তানুযায়ী ১৪০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে ফ্রান্সের কোম্পানীটি। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বুধবার এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘অবার্থু’র টেকনোলজিসের সঙ্গে আমাদের একটি চুক্তি ছিল। সেই চুক্তি মোতাবেক তাদের যে কার্যক্রম পরিচালনার কথা ছিল, তারা তা সেইভাবে করতে পারেনি। যার জন্য তাদের সঙ্গে আমরা চুক্তি বাতিল করেছি। এখন আমরা সমস্ত কার্যক্রম নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়, নিজেদের তত্ত্বাবধানে করছি। তারা ৩০ মাসে ১৩ মিলিয়ন কার্ড পারসোনালাইজেশন করতে পেরেছে। বর্তমানে আমাদের যে সক্ষমতা রয়েছে তাতে আমরা তা করতে পারছি মাত্র তিন মাসে। পাশাপাশি এ কাজের জন্য আমরা দক্ষ জনবলও তৈরি করতে পারছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘অবার্থু’র টেকনোলজিসের সাথে চুক্তি বাতিল করে নিজেরা কাজ করায় এটি থেকে সরকারের ১২৩ কোটি টাকা সাশ্রয় করতে সক্ষম হচ্ছি। এর পাশাপাশি যেহেতু তারা চুক্তি অনুযায়ী কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই চুক্তির নিয়ম অনুসারে তাদের যে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা সেটিও আমরা আদায় করেছি। এজন্য আমরা তাদের কাছ থেকে ১৩৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে আদায় করেছি। যা ইতিমধ্যে আমাদের কাছে চলে এসেছে।’

ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহায়তায় আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর ইনহ্যান্স একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্পের আওতায় ২০১১ সালের জুলাইয়ে ৯ কোটি ভোটারকে উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১১ সালের জুলাইয়ে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১৭০ মিলিয়ন ডলার। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের জুনে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা দিতে না পারার শঙ্কায় পরে এর মেয়াদ ১৮ মাস বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। এরপর কমিশনের পক্ষ থেকে আবারও প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য একাধিকবার বিশ্বব্যাংককে অনুরোধ করা হয়।

কিন্তু গত ৬ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাংক চিঠি দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে, আইডিইএ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হবে না।

সূত্র জানায়, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি স্মার্ট কার্ড সরবরাহকারী ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান ওবার্থু’র টেকনোলজিসের (ওটি) সঙ্গে ১০২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (৮১৬ কোটি টাকার) চুক্তি করে ইসি। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ৯ কোটি ভোটারের জন্য স্মার্ট কার্ড উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ে এই ব্যর্থ হওয়ার পর ওই চুক্তির মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি উপজেলা পর্যায়ে মাত্র এক কোটি ৯৮ লাখ (১২ দশমিক ২০ শতাংশ) কার্ড পৌঁছাতে পেরেছে। জুন পর্যন্ত তারা ঢাকায় ফাঁকা কার্ড পাঠিয়েছে ছয় কোটি ৬৩ লাখ ছয় হাজারটি। এর মধ্যে পারসোনালাইজেশন হয়েছে এক কোটি ২৪ লাখ। ব্ল্যাংক কার্ড দিতে পারেনি দুই কোটি ৩৬ লাখ চার হাজার। এ পর্যন্ত তারা বিল নিয়েছিল ৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। ফ্রান্সের কোম্পানিটি পরে সময় বাড়ানোর আবেদন করলেও কমিশন তা আমলে নেইনি। পরে দেশেই স্মার্ট কার্ড তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।

গত বছরের ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট কার্ড বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। পরদিন ৩ অক্টোবর থেকে রাজধানী ঢাকা ও বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীদের মাঝে কার্ড বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে বিতরণ কার্যক্রম চলছে।। এরপর জেলা, উপজেলা/পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কার্ড বিতরণ হবে।

ইসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১০ কোটি ১৮ লাখের মতো ভোটার রয়েছে। প্রথম থেকে এনআইডি সংশোধন বা হারানো সেবা বিনামূল্যে দেওয়া হলেও ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ফি নেওয়া শুরু করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।