হজের মওসুমে সৌদি আরবে নিকি মিনাজের কনসার্ট নিয়ে বিতর্ক

সৌদি আরবের জেদ্দায় একটি কনসার্টে মার্কিন পপ তারকা নিকি মিনাজকে আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে দেশটিতে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার কনসার্টের আয়োজকদের পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা আসার পর সৌদি আরবের সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়।

অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন নিকি মিনাজের পোশাক এবং খোলামেলা গানের বক্তব্য রক্ষণশীল এ দেশটির সঙ্গে ঠিক খাপ খায় না। হজের মওসুমে পবিত্র নগরী মক্কা শহরের পাশে এমন কনসার্টের বিষয়ে দেশটির অধিকাংশ নাগরিকই অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

বিবিসি আরবির খবরে বলা হয়, আগামী ১৮ জুলাই জেদ্দার কিং আবদুল্লাহ স্পোর্টস স্টেডিয়ামে ওই কনসার্টের আয়োজন করা হচ্ছে। ওই ওয়ার্ল্ড ফেস্টে মার্কিন র‌্যাপ তারকা নিকি মিনাজকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে এমন ঘোষণার পর থেকেই ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেছেন সৌদি নাগরিকরা।

বুধবার ওই কনসার্টে অংশ গ্রহণের কথা জানিয়ে নিকি মিনাজ একটি টুইট করলে বিতর্ক আরও জোরালো হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মুসলমানরা যখন পবিত্র হজ পালনের জন্য সৌদি আরব যাচ্ছেন, ঠিক সে সময় জেদ্দায় মার্কিন র‍্যাপার নিকি মিনাজকে নিয়ে এমন কনসার্ট আয়োজনকে অনেকেই সৌদি সরকারের অতি আধুনিকতা বলছেন।

সামাজিক মাধ্যমে একজন লিখেছেন, কল্পনা করুন যে, তিন বছর কোমায় থাকার পর আপনি জেগে উঠলেন আর প্রথমেই শুনতে পেলেন যে, নিকি মিনাজ সৌদি আরবে একটি সংগীত উৎসবে গান গাইতে যাচ্ছেন। আমি সত্যি মনে করতাম যে, অন্য একটা পৃথিবীতে আমি চলে এসেছি।

আরেকজন প্রশ্ন করেছেন যে, আয়োজকরা নিকি মিনাজের সঙ্গে যোগাযোগ করার আগে গুগলে তার সম্পর্কে জেনে নিয়েছে কিনা? তিনি বলেন, সৌদি আরবে কেউই নিকি মিনাজ নিয়ে গুগল সার্চ করেনি, তাই না?

অন্য একজন টুইট করেছেন যে, ইসলামের পবিত্র নগরী মক্কার কাছাকাছি নিকি মিনাজের অনুষ্ঠান আয়োজন করা ঠিক হবে না।

টুইটারে একটি ভিডিওতে মাথায় হিজাব পড়া একজন নারী প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে সৌদি আরবে নারীদের বোরকা পড়া বাধ্যতামূলক, সেখানে কেন এই সংগীতশিল্পীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে? কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি প্রশ্ন রাখেন, নিকি মিনাজ তার নিতম্ব ঝাঁকিয়ে গান গাইবেন আর তার সব গানই যেখানে যৌনতা ঘিরে। আর এরপরও আপনি আমাকে বোরকা পড়তে বলবেন, সেটা কিভাবে হয়?

তবে নিকি মিনাজের অনুষ্ঠান নিয়েই সৌদি আরবে প্রথম এ ধরণের বিতর্ক শুরু হয়েছে তা নয়। গত মাসেই জেদ্দায় হালাল নাইটক্লাব খোলা নিয়ে দেশটিতে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। বিশ্বব্যাপী তীব্র প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনার মুখে পরে হালাল নাইটক্লাবটি বন্ধ করে দিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।

ধর্মীয়ভাবে রক্ষণশীল দেশ হিসেবে পরিচিত সৌদি আরবে এতদিন সিনেমা, নারীদের গাড়ি চালানোসহ বিভিন্ন বিষয় ধর্মীয় কারণে নিষিদ্ধ ছিল। ভিশন-২০৩০ অনুযায়ী, দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ‘কট্টরপন্থা’ উপড়ে ফেলে ‘মধ্যপন্থার’ ইসলাম ধর্মে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন।

মধ্যপন্থী ইসলামের প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে তিনি আধুনিক সৌদি আরব গড়ার পরিকল্পনা করেছেন বলে জানিয়েছেন। সে হিসাবে ২০১৮ সালের জুন থেকে সৌদি আরবে নারীদের গাড়ি চালাতে দিচ্ছে সৌদি আরব। দীর্ঘ ৩৫ বছরের পর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে চালু করা হয়েছে সিনেমা হলও।

দেশটির বিনোদন বিভাগের প্রধান তুর্কি আশ-শায়খ জানুয়ারিতে একটি টুইটবার্তায় সৌদি সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের কথা জানিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেন, আল্লাহ চাইলে, পরবর্তী ধাপের বিনোদনের মূল লক্ষ্য হবে নানা উৎসব, সার্কাস, মোবাইল থিম পার্ক, তরুণ-তরুণীদের বিনোদনের জন্য নানা কর্মসূচী নেয়া আর দেশীয় বিনোদন কোম্পানিগুলোকে সহায়তা করা।