হঠাৎ ‘সর্বোচ্চ’ জোয়ার : সাত ফুট পানির নিচে চট্টগ্রাম

সোমবার ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়া চট্টগ্রাম শহরের অনেক সড়ক ও নিচু এলাকা থেকে পানি নেমে গিয়েছিল রাতেই। কিন্তু আজ মঙ্গলবার বিকেল চারটা থেকে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকে। বিকেল পাঁচটার দিকে চট্টগ্রামের কিছু কিছু এলাকা সাত-আট ফুট পানিতে তলিয়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি বছরের সর্বোচ্চ জোয়ার।

সকাল থেকে তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় জোয়ারের পানি থেকে রক্ষা পায় চট্টগ্রামের চান্দগাঁও, মুরাদপুর, খুলশী, ষোলশহর এলাকা। এসব এলাকার নালা-নর্দমা ডুবলেও তলিয়েছে নগরীর আগ্রাবাদ, হালিশহর, বাকলিয়া, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, সদরঘাটসহ কয়েকটি এলাকা। এসব এলাকা সাধারণত বঙ্গোপসাগরের স্বাভাবিক জোয়ারে দু-তিন পানিতে ডুবে দিনে-রাতে দুবার।

মঙ্গলবার বিকেলে হঠাৎ স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি উচ্চতার জোয়ার হানা দেয়। এতে হতভম্ব হয়ে পড়ে এসব এলাকার মানুষ। আর এই প্রবল জোয়ার নিয়ে নানা কথা চলছে চট্টগ্রামের মানুষের মুখে মুখে।

হালিশহর সি ব্লকের বাসিন্দা কামাল উদ্দিন জানান, স্বাভাবিক জোয়ারে দিনে দুবার ৩-৪ ফুট উচ্চতায় পানি জমত ঘরে। এভাবেই অভ্যস্ত তারা। কিন্তু আজকের জোয়ারে তা বেড়ে প্রায় ৭-৮ ফুট উচ্চতায় হয়েছে। ফলে হালিশহর আবাসিকের অনেক মানুষ নিচতলার বাসা ছেড়ে উপরের তলায় আশ্রয় নিয়েছে।

স্বাভাবিক জোয়ারে দু-তিন ফুট পানি জমে বলে দোকানের সামনে চার ফুট উচ্চতায় দেয়াল তুলেছিলেন খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসায়ী শহীদুল্লাহ। আজ বিকেলে সেই দেয়াল টপকে দোকানে পাঁচ ফুট উচ্চতার বেশি পানি জমে। এতে দোকানের প্রায় ২০ লাখ টাকার পেঁয়াজ ভিজে গেছে বলে জানান শহীদুল্লাহ।

জোয়ারের এই অস্বাভাবিকতা সম্পর্কে জানতে চাইলে পতেঙ্গা আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ফরিদ উদ্দিন জানান, অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথির প্রভাব এবং জলবায়ুগত কারণে আজ বঙ্গোপসাগরে সর্বোচ্চ ১৮ ফুট উচ্চতায় জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এতে চট্টগ্রাম মহানগরীর কোনো কোনো এলাকা ৮-১০ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। আবহাওয়া অফিস এ ব্যাপারে আগেই সতর্কতা জারি করেছিল বলে জানান তিনি।

বিকেলের এই হঠাৎ জোয়ারকে বছরের সর্বোচ্চ বলছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান ও মৎস্যবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালে ২০৫টি জোয়ার হবে। সব কটি হিসাব করে পাচ্ছি যে এটিই সর্বোচ্চ। জোয়ারের সময় পানির উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮ সোয়া ১৮ ফুটের মতো হতে পারে। এর চেয়ে বড় জোয়ার কোনো ঝড় বা জলোচ্ছ্বাস না থাকলে বাংলাদেশে এ বছরে আর হবে না।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড ফিশারিজ বিভাগের প্রফেসর সাইদুর রহমান চৌধুরী এ জোয়ার প্রসঙ্গে বলেন, মূলত জুলাই ও আগস্ট মাসে জোয়ারগুলো বেশি হয়। শীতকালের জোয়ারের চেয়ে এগুলো হয় অনেক অনেক বড়।