হাসপাতালের দামি দামি ওষুধ মিলছে মেডিকেলের ডাস্টবিনে!

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের ডাস্টবিন এ দামী ঔষধ, ইনজেকশান, সেলাইন পাওয়া গেছে। বিষয়টা কারা করছে বা কী উদ্দেশ্যে করছে এটা বোঝা যাচ্ছে না। তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য বিনীত অনুরোধ করেছেন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন আহমদ।

এ বিষয়ে তার নিজস্ব ফেসবুক ওয়ালে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে বিষয়টা জানা যায়। এরই মধ্যে পোস্টটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

কমেন্টে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ডেন্ট্রিস্ট্রি বিভাগের ইনচার্জ ডা. মাহফুজুর রহমান রাজ লিখেছেন- স্যার, ইন্ডেন্ট দেবার পর, পরের বার নেবার সময় আগের বারের সব খালি ভায়াল, স্যালাইনের খালি ব্যাগ বোতল ফেরত নেরার জন্য স্টোরে বলে দিতে পারেন। অবশ্যই গভীর ষড়ষন্ত্র আছে।

উত্তরে পরিচালক বলেন- সব বিবেচনায় রেখে ব্যবহৃত ঔষধ এর সবগুলোর ভায়াল, দামী ইঞ্জেকশান এ সাইন করে দেওয়া, খালি ভায়াল স্টোরে ফেরত দেয়া সব নিয়ম করা হয়েছে। হাসপাতাল চালাতে টিম হিসেবে কাজ করতে হয়। একজন পরিচালক, ডিপুটি ডাইরেক্টর, দুজন এসিস্টেন্ট ডাইরেক্টর ও একজন স্টোর অফিসার দিয়ে ৩৩ টি ওয়ার্ড দেখা সম্ভব নয়। এখানে ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ড মাস্টার দের তদারকির প্রয়োজন আছে। সবাই আন্তরিক না হলে ফেরেশতা এসেও কাজ করতে পারবে না। সচেতন নাগরিক, সিভিল প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিরা চাইলে অনেক সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।

যমুনা টেলিভিশনের ভিডিওগ্রাফার দেলোয়ার হোসাইন কমেন্ট লিখেন, স্যার নতুন কোন চক্রান্ত ষড়যন্ত্রকারীরা শুরু করেছে, কারণ যে পরিমান ঔষধ, ইনজেকশন, সেলাইন ময়মনসিংহ হাসপাতালে রোগীকে দেওয়া হয়, আমার মনে হয় বাংলাদেশের আর কোন হাসপাতালে এত পরিমান ঔষধ দেওয়া হয় না। ময়মনসিংহের হাসপাতাল থেকে কোটি কোটি টাকার ঔষধ উধাও হয়ে যেত, স্যার কোটি কোটি টাকার ঔষধ ষড়যন্ত্রকারীদের চোখের সমনে রোগীদের দিয়ে দিচ্ছেন মাথা তো ষড়যন্ত্রকারীদের নষ্ট হবেই।

স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের সাবেক ডিপুটি ডিরেক্টর অসীম কুমার নাথ কমেন্টে লেখেন, প্রত্যেক পেশায় দলীয় রাজনীতির বাইরে থাকতে হবে। তা না হলে যোগ্য পেশাজীবী থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া যাবে না। আর ইদানীংকালের সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকা সত্যিই বেদনাদায়ক। এর ভেতরেই আমাদেরকে কাজ করতে হবে। আমরা যারা হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্বে আছি তাদের কাছে তুই একটা দৃষ্টান্ত ও অনুপ্রেরণা, নাসির। তোর সুস্বাস্থ্য কামনা করি।

জাবেদ অরুন জামান কমেন্ট করেন স্বাস্থ্য খাতকে অনৈতিক দালাল চক্রের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে খুব কঠিন আইন প্রনয়ন ছাড়া কোন উপায় নাই। এদের পেশাদার খুনীদের মত বিবেক বলে কিছু নাই। মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে ন্যুনতম কার্পন্য করে না। এদের ফাঁসীর কাষ্ঠে ঝুলানো উচিত। এরা নেশাখোরদের মত ছাড়া পেলেই আবার একই অপরাধে ফিরে যাবে।

এস. আরাবিন্দ কমেন্টে লিখেন, মানুষের কি বিবেক ধূলির সংগে মিশে যাচ্ছে? যারা এই বাজে কাজ করছেন তারা যদি লিখা পড়ে থাকেন তাহলে বিরত থাকেন। আমাদের জন্য স্যার আশীর্বাদ তাকে সুন্দর ভাবে পরিচালনার সুযোগ করে দিন।আজ হয়তো আপনার কেউ এখানে চিকিৎসা করেনা কিন্তু আসতেও হতে পারে আপনার কিংবা আপনার পরিবারে তখন যদি সরকারি ঔষধ না পান কেমন লাগবে?বিনীত অনুরোধ রইলো নিজে অন্যায় না করে অন্যকে অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখুন।

উল্লেখ্য, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন আহমদ হাসপাতালের পরিচালক হয়ে আসেন ২০১৫ সালে। তিনি দ্বিতীয় বারের মতো পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। গত বছর ৩ আগষ্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তার বদলির আদেশ জারি করেন। তখন ময়মনসিংহবাসী রাস্তায় আন্দোলনে নামে। এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপতি তার ক্ষমতা বলে ওই বদলির আদেশ বাতিল করেন।

প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রপতির নিজ জেলা কিশোরগঞ্জের প্রচুর রোগী এ হাসপাতালে আসে। শতভাগ বিনামূল্যে ওষুধ প্রদানের ব্যবস্থা করায় এলাকার সাধারণ রোগীদের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল এখন ভরসাস্থল। এছাড়াও নিজের অর্থায়নে হাসপাতালে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা হাসপাতালটির পরিচালক ডা. নাসিরের জনপ্রিয়তা প্রবল।