হিটলারের ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা ব্যর্থ করেছিলেন যিনি

তাঁকে নিয়ে লেখা হয়েছে বই, হয়েছে টিভি সিরিয়াল, এমনকি চলচ্চিত্রও হয়েছে হলিউডে৷ অসম সাহস নিয়ে হিটলারের বিপক্ষে দাঁড়ানো ইওয়াখিম রনবার্গকে এখন শ্রদ্ধা জানাচ্ছে বিশ্বের অনেক মানবতাবাদী, শান্তিপ্রিয় মানুষ৷

নাৎসিদের পারমানবিক পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছিলেন নরওয়ের অধিবাসী, ইওয়াখিম রনবার্গ৷৯৯ বছর বয়সে মারা গেলেন তিনি৷

১৯৪৩ সালে তরুণ সৈনিক ইওয়াখিম ‘অপারেশন গানারসাইড’-এর নেতৃত্ব দেন৷ এই অপারেশন নরস্ক হাইড্রো প্লান্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশকে ধ্বংস করার ফলে নাৎসি জার্মানির পরমাণু অস্ত্র গবেষণা বন্ধ হয়ে যায়৷

তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী এরনা সলবার্গ বলেন, ‘‘নাৎসি আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়া সৈনিক রনবার্গ আমাদের হিরো ছিলেন৷”

১৯১৯ সালে জন্মানো রনবার্গ জার্মান সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে ব্রিটেনে যান৷ সেখানে অন্যান্য নরওয়েজিয়ান নাৎসি-বিরোধী প্রতিরোধ বাহিনীর সঙ্গে প্রশিক্ষণ নেন৷

ততদিনে তাঁর স্বদেশ নরওয়ে নাৎসিদের দখলে চলে গেছে৷ ১৯৪৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেখানে ফেরেন তিনি৷ তাঁর নেতৃত্বে ছয় জনের একটি দল হাইড্রো প্ল্যান্টে হামলা চালায়৷

এই প্ল্যান্টটি নাৎসিদের কাছে ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷

তখনকার দিনে বিশাল মাত্রায় ডিটুও বা ভারি জল উৎপাদন করতে পারা বিশ্বের বৃহত্তম প্ল্যান্ট ছিল সেটি৷

ডিটুও মূলত ডিউটেরিয়াম-সমৃদ্ধ একটি পদার্থ, যা পারমানবিক অস্ত্র তৈরির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷

প্রথমে আকাশপথে ও পরে পায়ে হেঁটে সেই পাহারায় ঘেরা প্ল্যান্টে পৌঁছান রনবার্গ ও তাঁর দল৷

ডিটুও প্রস্তুতকারী মেশিনগুলি যখন তাঁদের লাগানো বোমায় ছিন্নভিন্ন হচ্ছিল, রনবার্গ তাঁর সাথের সৈনিকদের নিয়ে তখন যাচ্ছিলেন কয়েকশ’ কিলোমিটার দূরের সুইডেনের দিকে৷

এই দুঃসাহসী অভিযানের অনুপ্রেরণায় ১৯৬৫ সালের হলিউডে ‘দা হিরোস অফ টেলিমার্ক’ ছবিটি তৈরি হয়৷

এছাড়া একই গল্প থেকে তৈরি হয়েছে অসংখ্য বই, তথ্যচিত্র ও টেলিভিশন নাটক৷

যুদ্ধ শেষে রনবার্গ রেডিও সাংবাদিকতায় নামলেও নাৎসি-বিরোধী সৈনিক হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি৷

অবশেষে ১৯৭০ সালে নীরবতা ভেঙে জনসমক্ষে যুদ্ধ ও স্বৈরতন্ত্রের বিপদ বিষয়ে সোচ্চার হন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নায়ক ইওয়াখিম রনবার্গ৷

-ডয়চে ভেলে