১০ নম্বরি হলেও নির্বাচন বয়কট করবো না : ড. কামাল

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১০ নম্বরি করা হলেও আমরা বয়কট করবো না।’

শনিবার সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে ‘জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্ট’ আয়োজিত আইনজীবীদের মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করবে না উল্লেখ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, সবাইকে হাতজোড় করে বলবো বয়কট আমরা করবো না। একবার করে আমাদের যে খেসারত দিতে হয়েছে। এটা যাতে আর না হয়।

তিনি বলেন, যত রকমের ১০ নম্বরি তারা করে, আমরা ভোট দেব। আপনারা তৈরি হন। আমরা হাজারে হাজারে মানুষ গিয়ে ভোট দেব।

‘মহাজোট সরকারকে ভাওতাবাজির সরকার’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারকে ভাওতাবাজির জন্য গোল্ডমেডেল দেয়া উচিত।

তিনি বলেন, ২০১৪ তে একটা নির্বাচন হয়েছিল। পরে যখন তা কোর্টে আসলো অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে আমাকে ডেকেছিল। কোর্ট জিজ্ঞাসা করেছিল আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন, আমি বললাম, মূল্যায়ন করলে তো দুই মিনিটেই বলা যায় যে এটা কোনো নির্বাচনই ছিল না। আরেকটা নির্বাচন করতে হবে। সরকার তো বলছে দ্রুত আরেকটা নির্বাচন করবে। সরকারের পক্ষের লোকই সেখানে বলেছে। তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য একটা সরকার করে নেয়া হয়েছে, আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করছি যেন, দ্রুত একটা নির্বাচন করা যায়। আমিও স্বাভাবিকভাবেই মনে করেছি সরকার যখন কোর্ট দাঁড়িয়ে এরকম একটা কথা বলছে তখন এটা হবে। তখন আমি কোর্টকে বললাম আমার কিছু বলতে হবে না, তারা তো নিজেই বলছে যে, একটি পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য করেছে, তারাও এটাকে ডিফাইন করতে পারছে না, বলছে দ্রুত আরেকটা নির্বাচন দিবে। দ্রুত মানে কী পাঁচ বছর?

কামাল বলেন, সরকার এত হালকা হয়ে গেছে যে, তারা এ রকম কথা বলে যে তার অর্থও তারা বোঝে না। দ্রুত মানে কী পাঁচ বছর? আমি জানতে চাই। যারা আজ সরকারের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তারা দেখেন ২০১৪ তে দাঁড়িয়ে আপনারা কী বলেছিলেন। যদি কথাগুলো মনে না থাকে তাহলে কোর্টের অর্ডার বের করে দেখেন।

‘১৬ কোটি মানুষের দেশ। এই দেশে সরকার যদি কোনো কথা বলে তবে দায়িত্ব নিয়ে কথা বলতে হয়। ১৬ কোটি মানুষকে যা-তা বলে শাসন বজায় রেখেছেন।’

কামাল হোসেন বলেন, দ্রুত আমরা নির্বাচন চাই। অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, এটা খুবই ন্যায় সঙ্গত। দেশের একটি বিরোধী দলের প্রধান ছিলেন তিনি।

তিনি বলেন, যেহেতু একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এতদিন পরে হতে যাচ্ছে তাতে একটা দলের নেত্রী সরকারের প্রধান থাকবেন আর আরেক দলের নেত্রীকে সেই সেন্ট্রাল জেলে রেখে অপমান করা হবে, এটা একদমই মেনে নেয়া যায় না। ওনাকে (খালেদা জিয়া) মুক্ত করা দরকার। যাতে ওনি তার নেতাদের নিয়ে দেশের মানুষের কাছে গিয়ে নির্বাচনে ভোট চাইতে পারেন।

শুধুতো খালেদা জিয়া জেলে নাই। হাজার হাজার লোককে জেলে রাখা হয়েছে। আমি প্রতিদিনই শুনছি গ্রেফতারের কথা। এভাবে বৈষম্য সৃষ্টি করে গণতন্ত্র ফিরে আসবে না, সাংবিধানিক শাসনও থাকবে না। দেশে একটা অরাজকতার মধ্যে পড়বো। এজন্য তাকে মুক্তি দেওয়া দরকার বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের আয়োজনে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিরি (বার অ্যাসোসিয়েশন) সভাপতি ও আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক জয়নুল আবেদীন। প্রধান বক্তা ছিলেন গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বারের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনের সঞ্চালনায় মহাসমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সানা উল্লাহ মিয়া, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জগলুল হায়দার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।