১৩ বছর পর প্রমাণ হল তিনি নির্দোষ, বন্দী অবস্থায় মৃত্যু

১৩ বছর জেল খাটার পর প্রমাণ হল ওবায়দুর রহমান ওরফে আবেদ আলী (৬৫) নির্দোষ। এখানেই শেষ নয়, নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পর ফাঁসির দণ্ডাদেশ থেকে খালাসের আদেশ কারাগারে পৌঁছানোর আগেই মারা গেলেন।

সাতক্ষীরার জোড়া পুলিশ হত্যা মামলার আসামি ছিলেন ওবায়দুর রহমান। ছয় মাস আগে উচ্চ আদালতের আদেশে এ হত্যা মামলা থেকে ওবায়দুর খালাস পান। তাঁর কারামুক্তির আইনগত কাজ শেষ হওয়ার আগেই ১৩ বছর জেলে থাকার পর গত রোববার সকাল নয়টায় খুলনা ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে পুলিশি প্রহরায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ওইদিন বিকেলে কারাগারে পৌঁছায় ফাঁসির দণ্ড থেকে তাঁর খালাসের আদেশ।

ওবায়দুরের স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন গণমাধ্যমকে জানান, তাঁর স্বামী বিনা দোষে ১৩ বছর জেল খেটেছেন। তিনি একরকম বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। তিনি তাঁর নিরপরাধ স্বামীর জেল খাটা ও যথাযথ চিকিৎসা ছাড়াই মারা যাওয়ার ঘটনায় ক্ষতিপূরণ ও জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

ওবায়দুরের ছেলে শেখ আশিকুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, আদালত থেকে খালাসের আদেশ দ্রুত পৌঁছানোর জন্য গত ৫ সেপ্টেম্বর তিনি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেন। এর আগে বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলামের সঙ্গেও দেখা করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘খালাস আদেশ কারাগারে না পৌঁছানোয় বাবাকে ছয় মাসের বেশি সময় আটক থাকতে হয়। ২০১৫ সালে বাবা লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হন। খুলনা কারাগারে তাঁর লিভার ফেটে যাওয়ায় অস্ত্রোপচার করা হয়। সর্বশেষ গত ঈদুল আজহার এক দিন পর খুলনা ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে রোববার সকাল নয়টার দিকে তিনি মারা যান। বিশেষ অনুরোধে বেলা আড়াইটার দিকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।’

এদিকে ওইদিন বিকেলে তাঁর খালাসের আদেশ সাতক্ষীরা জেলা জজ আদালতে পৌঁছায়।

রোববার রাত আটটায় মরদেহ নিয়ে আসা হয় সাতক্ষীরার কুখরালি গ্রামে তার নিজ বাড়িতে। আর গতকাল সকাল নয়টায় জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হয়।

ওবায়দুরের স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন জানান, ‘তাঁদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে ছোট থাকা অবস্থায় তাঁর স্বামীর ফাঁসির আদেশ হয়। অথচ ২০১৩ সালে ময়মনসিংহের আদালতে জেএমবি নেতা শায়খ আবদুর রহমান পৃথক একটি মামলায় বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে সাতক্ষীরার জোড়া পুলিশ হত্যা ও গুড়পুকুরের মেলায় বোমা হামলার কথা স্বীকার করেন। তিন সন্তানকে নিয়ে অভিভাবকহীনভাবে মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়েছে তাকে।

তিনি বলেন, ‘বাবা ফাঁসির আসামি হওয়ায় স্নাতকোত্তর পাস করা দুই মেয়েকে ভালো জায়গায় বিয়ে পর্যন্ত দিতে পারিনি। ছেলে স্নাতকোত্তর পাস করে বেকার ঘুরে বেড়াচ্ছে।’

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে শহরের ছফুরন্নেসা কলেজের সামনে ফজলুল হক ও আবদুল মোতালেব নামে দুই পুলিশ কনস্টেবল সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন। এ ঘটনায় কনস্টেবল আবদুল আহাদ আহত হন। তারা বাইসাইকেলে বাঁকাল এলাকায় ডিউটি শেষে রাত সোয়া ২টায় কর্মস্থল ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়িতে ফিরছিলেন।

২০০৬ সালে এ মামলায় আসামি রায়হানুল ইসলাম, জাকির হোসেন ও ওবায়দুর রহমান ওরফে অবেদ আলিসহ তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। আরও চারজনকে দেয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। ২০১১ সালে রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করলে খালাস পান ওবায়দুর রহমান অবেদ আলি। রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরুদ্ধে আপীল করলে গত ১১ এপ্রিল ঘোষিত রায়ে খালাসের আদেশ বহাল থাকে। এ আদেশের কপি কারাগারে পৌঁছতে বিলম্ব হয়।