২০ বছরেও ঢাকার বাইরে ‘বদলি হননি’ শতাধিক চিকিৎসক

সরকারি চাকরি জীবনের শুরুতে বছর দু’য়েক গ্রামে কাটিয়েছেন। তারপর গ্রাম থেকে রাজধানী ঢাকায় বদলি হয়ে এসেছেন। কিন্তু আর কখনও গ্রামে ফিরে যাননি- স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে এমন শতাধিক চিকিৎসকের সন্ধান রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দুই চিকিৎসক নেতা।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পৃথক দু’টি প্রজ্ঞাপনে একসঙ্গে মোট ১১০জন চিকিৎসককে (অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ,সহকারী অধ্যাপক, সিনিয়র কনসালটেন্ট ও জুনিয়র কনসালটেন্ট পদমর্যাদার) ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজ, জেলা সদর ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলির নির্দেশ জারি হলে তোলপাড় শুরু হয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা গেছে, যাদের বদলি করা হয়েছে তারা কমপক্ষে ৮ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১৮/১৯ বছর ঢাকায় অবস্থান করছেন। তাদের মধ্যে অনেকের কর্মস্থল ঢাকার বাইরে জেলা সদর অথবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

কিন্তু তারা নানা ছুঁতোয় তদবির করে নিজেদের স্বাস্থ্য অধিদফতরে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) দেখিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সংযুক্ত দেখিয়ে অবস্থান করছিলেন। প্রকৃত কর্মস্থল ফেলে রেখে দীর্ঘ সময় ঢাকায় অবস্থান করার অপরাধে তাদের ঢাকার বাইরে বদলি করা হয়।

তাদের বদলিতে শুরু হয় তোলপাড় ও তদবির। এই চিকিৎসকরা উল্টো দাবি করেন- দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ‘বিপুল’ সংখ্যক চিকিৎসক ঢাকায় অবস্থান করছেন। ওই চিকিৎসকদেরও বদলি করতে হবে বলে দাবি জানান তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) দুই শীর্ষ কর্মকর্তা আলাপকালে বলেন, তারা স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) ও দলীয় সংগঠনের চিকিৎসক নেতাকর্মীদের মাধ্যমে তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করে জেনেছেন বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে শিক্ষকতার সাথে জড়িত রয়েছেন এমন কমপক্ষে শতাধিক চিকিৎসক ২০ থেকে ২৫ বছর যাবৎ ঢাকার বাইরে বদলি হননি।

তারা জানান, সরকারি চাকরিতে সাধারণত একই কর্মস্থলে তিন বছরের পর বদলির নিয়ম রয়েছে। কিন্তু চিকিৎসা পেশা আর অন্য দশটা পেশার চেয়ে ভিন্ন ও একাধারে শিক্ষা, চিকিৎসা ও গবেষণার বিষয়টি জড়িত বিধায় সাধারণত একই কর্মস্থলে পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যে অন্য কোথাও বদলি করা হয় না।

স্বাচিপের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, তারা ২০ বছর থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত একই কর্মস্থলে অবস্থান করছেন। তাদের তালিকা স্বাস্থ্য অধিদফতরে চাওয়া হয়েছে। তবে তালিকাটি দিতে অধিদফতর গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, যারা ২০ থেকে ২৫ বছর চাকরি করছেন তারা সকলেই সিনিয়র। তাদের চাকরির আর বেশি দিন বাকি নেই। এ কারণে তারা বিষয়টি নিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি করছেন না। তবে এ ধরনের চিকিৎসকের সংখ্যা শতাধিকের বেশি ছাড়া কম হবে না।

শতাধিক চিকিৎসকের ২০ বছর বদলি না হয়ে ঢাকাতে অবস্থান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রোববার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অধিদফতরের এমআইএস শাখা থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ রাজধানীতে অবস্থান করছেন এমন চিকিৎসকদের তালিকা সংগ্রহ করেছে। তবে শতাধিক চিকিৎসক গত ২০ বছর যাবৎ রাজধানীর বিভিন্ন কর্মস্থলে অবস্থান করছেন- এমন তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে বলা সম্ভব নয়।

সুনির্দিষ্ট তথ্য পেতে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।