২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার শেষ পর্যায়ে

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা দুই মামলার বিচার এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তবে আসামিপক্ষ কালক্ষেপণের সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে মন্তব্য করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় এখন আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। গত ২৫ জুলাই ছিল এ মামলার যুক্তিতর্ক পেশ করার ১০১তম দিন। রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে পৃথক মামলায় একই সঙ্গে বিচার চলছে। মামলায় এ পর্যন্ত ৪৩ আসামীর পক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ শেষ হয়েছে।

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, আসামিপক্ষ কালক্ষেপণের সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তিনি বলেন, আসামিপক্ষ এ মামলায় আইনে প্রদত্ত সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছেন। তবে তিনি বলেন, আসামিপক্ষ ন্যায়বিচারকে বিলম্বিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। যুক্তিতর্কে প্রাসঙ্গিক নয় এমন বিষয়েরও অবতারণা করছে আসামিপক্ষ। ভয়াবহ ওই গ্রেনেড হামলার শিকার বিচারপ্রার্থীরা ন্যায়বিচারের আশায় রয়েছেন।

এ মামলার প্রসিকিউশনের অন্যতম সদস্য আইনজীবী আকরাম উদ্দিন শ্যামল বাসসকে জানান, পৃথক মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৫২ জন। এর মধ্যে তিনজন আসামির অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাদের মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন ৪৯ আসামির বিচার চলছে। ১৮ জন এখনো পলাতক। আসামিদের মধ্যে ৪৫ জনের যুক্তিতর্ক পেশ হবে। এরই মধ্যে ৪৩ জনের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। মামলার অন্যতম আসামি বিএনপি নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর পক্ষে গত ২৫ জুলাই চতুর্থ দিনের মতো যুক্তিতর্ক পেশ করেছেন তাঁর আইনজীবী। এ যুক্তিতর্ক পেশ অসমাপ্ত রয়েছে। মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে আগামী ৩০, ৩১ জুলাই এবং ১ আগস্ট। তিনি বলেন, আদালত পরবর্তী তিন ধার্য তারিখের দুই দিন পিন্টুর আইনজীবীকে এবং এক দিন পিন্টুকে বক্তব্য রাখার জন্য আদেশ দিয়ে তাঁর পক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ করতে বলেছে। এ ছাড়া অপর আসামি বিএনপি নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট প্রতিমন্ত্রী লৎফুজ্জামান বাবরের আইনজীবীকে যুক্তিতর্ক পেশের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

প্রসিকিউশনের অন্যতম সদস্য অ্যাডভোকেট ফারহানা রেজা জানান, মামলায় পলাতক আসামিদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে আইনে সর্বোচ্চ সাজার ধারায় অভিযোগ রয়েছে তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত (স্টেট ডিফেন্স) আইনজীবী ছিল। পলাতক চারজন আসামির বিষয়ে রাষ্ট্র আইনজীবী নিয়োগ দেয়নি। তারা হচ্ছেন-আসামি সাবেক সেনা কর্মকর্তা এ টি এম আমিন ও সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান খান ও খান সাঈদ হাসান। অ্যাডভোকেট ফারহানা রেজা জানান, এ চার আসামির আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাজা তথা মৃত্যুদণ্ড হতে পারে এমন কোনো ধারায় অভিযোগ গঠন হয়নি। তাই তার ‘স্টেট ডিফেন্স বা রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী’ সুবিধা পাবেন না। মামলার শুরু থেকেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে আসামিপক্ষ সময়ক্ষেপণের চেষ্টা করছেন বলে মন্তব্য করেন আইনজীবী ফারহানা রেজা।

যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে আসামিপক্ষকে আদালতও মামলার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক বিষয়ে বক্তব্য পেশের জন্য তাগিদ দেন।

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ২২৫ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেয়। আসামিপক্ষে সাক্ষিদের জেরা করেছে। গত বছরের ৩০ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দে জেরার মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।

২১ আগস্টের ওই নৃশংস হামলায় পৃথক দুটি মামলায় মোট আসামি ৫২ জন। মামলার আসামি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন কারাগারে রয়েছে। অন্য দিকে তারেক রহমান, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, মেজর জেনারেল (এলপিআর) এ টি এম আমিন, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দারসহ ১৮ জন এখনো পলাতক। জামিনে থাকা আসামিরা হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলাটির তিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ, সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম।

বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতাকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পত্নী আইভি রহমান। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তাঁর শ্রবণেন্দ্রীয় আঘাতপ্রাপ্ত হয়।